আমি খুশি, আনন্দিত, গর্বিত: হাসিনা মান্নান

আমি খুশি, আনন্দিত, গর্বিত: হাসিনা মান্নান

সংরক্ষিত আসনে সরকারি দলের সাংসদ হয়ে ক্ষমতার স্বাদ পেতে চেয়েছিলেন চট্টগ্রামের বেশ কয়েকজন আলোচিত নারীনেত্রী। মনোনয়ন পেতে ঢাকা-চট্টগ্রামও কম হয়নি তাদের। তদবির চলে নানা পথে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে আলোচিত এই নারীনেত্রীদের। ভাগ্যের শিকে ছেঁড়েনি তাদের কারোরই। ভাগ্যের দেবী গিয়ে কড়া নেড়েছে আলোচনার বাইরে থাকা একজনের। তিনি মহিলা আওয়ামীলীগ প্রবীন নেত্রী হাসিনা মান্নান।

রোববার আওয়ামীলীগের পার্লামেন্টারি বোর্ড সংরক্ষিত পাঁচ নারী আসনে যে পাঁচজনের নাম মনোনয়নের বিষয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছে তার মধ্যে হাসিনা মান্নানের নামও আছে।

হাসিনা মান্নান চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি। এ কমিটির সাধারণ সম্পাদক বেগম চেমন আরা তৈয়বও বর্তমানে সংরক্ষিত আসনের নারী সাংসদ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

চট্টগ্রাম থেকে নারী সাংসদ হিসেবে মনোনীত হবার পর সন্ধ্যায় বাংলানিউজকে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় হাসিনা মান্নান বলেন, ‘আমি খুব খুশী, আনন্দিত, গর্বিত। সারা জীবন দলের জন্য কাজ করেছি। জীবনের শেষ সময়ে এসে দল আমাকে মূল্যায়ন করেছে। আমি সবার সহযোগিতা নিয়ে কাজ করে যাব।’

চট্টগ্রামের যেসব আলোচিত নারীনেত্রী দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন তারা হলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র জোবাইদা নার্গিস খান, কাউন্সিলর অ্যাডভোকেট রেহেনা কবির রানু, রেখা আলম চৌধুরী ও ফেরদৌস বেগম মুন্নী।

এছাড়া চট্টগ্রাম বারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট বাসন্তী প্রভা পালিত এবং অ্যাডভোকেট কামরুন্নাহার সহ চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন প্রায় ২০ জন নারীনেত্রী।

আলোচিত নারীনেত্রীদের মধ্যে জোবাইদা নার্গিস খান নগর আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তিন দফা কাউন্সিলর নির্বাচিত হলেও রাজনীতিতে তার তেমন শক্ত কোনো অবস্থান নেই।

অন্যদিকে রেহেনা কবির রানু, রেখা আলম চৌধুরী ও ফেরদৌস বেগম মুন্নী চট্টগ্রামের রাজনীতিতে অত্যন্ত আলোচিত ও সরব ভূমিকা পালন করছেন। বিগত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আগে জোরেশোরে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিরোধিতায় নেমে এ তিন নেত্রী নগরীতে সরব আলোচনার জন্ম দেন।

এর মধ্যে কাউন্সিলর মুন্নী মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করে নগরীতে তোলপাড় সৃষ্টি করেন। এছাড়া সরকারি সম্পত্তি দখল, পুলিশের কাজে বাধাদান সহ বিভিন্ন ঘটনায় কাউন্সিলর মুন্নী নগরীতে এমনিতেই এখন আলোচিত মুখ।

তিন নেত্রী পরবর্তীতে নগর আওয়ামীলীগের বিবদমান গ্র“প প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী ডা.আফছারুল আমিনের সঙ্গে যোগ দেন।

নগর আওয়ামীলীগের সূত্রে জানা গেছে, গত তিন-চারদিন ধরে আলোচিত তিন নারীনেত্রী রানু, রেখা আলম ও মুন্নী ঢাকায় গিয়ে বিভিন্নভাবে নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তুদফায় দফায় তদবির করেও শেষ পর্যন্ত সাংসদের টিকিট পেতে তারা ব্যর্থ হন। তবে তাদের পক্ষে ডা. আফছারুল আমিনও কেন্দ্রে কোন ভূমিকা পালন করেননি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

নগর আওয়ামীলীগের কোন্দল এড়াতে এবং স্বচ্ছ ভাবমূর্তির প্রার্থী বেছে নিতেই হাসিনা মান্নানকে শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে বাংলানিউজের পক্ষ থেকে রেহেনা কবির রানু ও রেখা আলম চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোন মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।

দু’জনই বাংলানিউজকে বলেন, ‘সাংসদ হিসেবে যাদের মনোয়ন দেওয়া হয়েছে তারা যোগ্য। এতে আপত্তির কিছু নেই।’

ষাটের কোটার মাঝামাঝিতে অবস্থান করছেন হাসিনা মান্নান। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের কয়েক বছর আগে প্রয়াত আওয়ামীলীগ নেতা এম এ আজিজের হাত ধরে তার আওয়ামী রাজনীতিতে আসা। চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থেকে নির্বাচিত সাবেক গণপরিষদ সদস্য প্রয়াত ডা.এম এ মান্নানের সহধর্মিণী।

হাসিনা মান্নান ১৯৯৪ সাল থেকে ছয় বছর ধরে নগরীর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি রাজনৈতিক নিয়োগে জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।

বয়সে প্রবীণ হলেও সাংসদ হিসেবে দায়িত্ব পালনে তার কোন অসুবিধা হবেনা বলে দাবি করেছেন হাসিনা মান্নান।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার চেয়ে অনেক বেশি বয়স্করাও দলের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করছেন। আমিও সংসদ সদস্য হিসেবে কাজের মাধ্যমে আমার যোগ্যতার প্রমাণ দেব।’

বাংলাদেশ শীর্ষ খবর