একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম ও জাতীয় পার্টির (জাপা) নেতা সাবেক কৃষি প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের আপিল শুনানির তালিকায় রয়েছে।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বে তিন সদস্যের আপিল বিভাগে এই মামলা দুটি রোববারের (কজলিস্টের) কার্যতালিকায় ক্রম ২ ও ৩ নম্বরে (ফর অর্ডার) শুনানির দিন ঠিক করার জন্য রয়েছে। বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর বনাম এটিএম আজহারুল ইসলাম ও সৈয়দ মো. কায়সার। ১৬ মাস আগে আপিল বিভাগে সর্বশেষ মীর কাসেম আলীর আপিলের রায় ঘোষণা করা হয়েছিল। এবার আরও দুটি আপিল একই সঙ্গে একই দিনে তালিকায় উঠল।
সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৮ মার্চ মীর কাসেম আলীর আপিলের রায় ঘোষণার পর আগামী রোববার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের করা আপিল শুনানির উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যদিও চলতি বছরের ১৫ মার্চ জামায়াতের অপর নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রিভিউ নিষ্পত্তি করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
এটিএম আজহারুল ইসলাম
একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম খালাস চেয়ে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। আপিলে তার খালাসের পক্ষে যুক্তি রয়েছে প্রায় ১১৩টি। ২০১৫ সালের ২৯ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড জয়নুল আবেদীন তুহিন এই আপিল দায়ের করেন।
এটিএম আজহারুল ইসলামের মূল আপিল আবেদনে ৯০ পৃষ্ঠার সঙ্গে ১১৩টি গ্রাউন্ডসহ মোট দুই হাজার তিনশ ৪০ পৃষ্ঠার আবেদন জমা দেয়া হয়। আপিল দায়েরের পর তার আইনজীবী শিশির মুহাম্মদ মনির বলেন, আপিলে প্রত্যেকটি অভিযোগ চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।তিনি কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করে রায় দিয়েছিলেন।
এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগসহ ৬টি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। ট্রাইব্যুনালের দেয়া রায়ে ৫টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়। ২, ৩ ও ৪ নম্বর অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। ৫ নম্বর অভিযোগে ২৫ বছর ও ৬ নম্বর অভিযোগে ৫ বছরের জেল দেয়া হয় তাকে। তার বিরুদ্ধে ১ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি বলে রায়ে বলা হয়।
সৈয়দ কায়সার
জাতীয় পার্টির (জাপা) নেতা সাবেক কৃষি প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার খালাস চেয়ে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। আপিলে ট্রাইব্যুনালের রায় বাতিলের পাশাপাশি তাকে বেকসুর খালাস দেয়ার আবেদন জানানো হয়।
২০১৫ সালের ১৯ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই আপিল করা হয়। সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের পক্ষে অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড জয়নুল আবেদীন তুহিন আপিল করেছেন। এ মামলার শুনানি করবেন অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন।
আপিলে খালাসের আর্জিতে ৫৬টি যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে। ৫০ পৃষ্ঠার মূল আপিলের সঙ্গে প্রয়োজনীয় নথি সংযুক্ত রয়েছে। ২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আদালত কায়সারকে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করে রায় দেন।
গণহত্যার একটি, হত্যা, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠনের ১৩টি ও ধর্ষণের দুটিসহ মোট ১৬টি অভিযোগ তার বিরুদ্ধে আনা হয়, যার মধ্যে ১৪টি ট্রাইব্যুনালের রায়ে প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে ৩, ৫, ৬, ৮, ১০, ১২ ও ১৬ নম্বর অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।
এছাড়া ১, ৯, ১৩ ও ১৪ নম্বর অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড ও ২ নম্বর অভিযোগে ১০ বছর, ৭ নম্বরে সাত বছর ও ১১ নম্বরে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়। ৪ ও ১৫ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এ অভিযোগগুলোতে কোনো সাজা দেয়া হয়নি তাকে।
আপিলে সাত মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় এখন পর্যন্ত সাতটি আপিলের রায় ঘোষণার পর রিভিউ আবেদনেরও নিষ্পত্তি হয়েছে আপিল বিভাগে। প্রথমে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার রিভিউ-সংক্রান্ত আবেদন নিষ্পত্তি হয়। এরপর একে একে মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও মীর কাসেম আলীর পর চলতি বছরের ১৫ মার্চ দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রিভিউ আবেদনেরও নিষ্পত্তি হয় আদালতে।