ঈদুল আজহা আসতে এখনো প্রায় একমাস বাকি। ইতোমধ্যেই আকাশপথে সব এয়ারলাইন্সের টিকিট শেষ হয়েছে বলে বলা হচ্ছে। তবে টিকিট শেষ বলা হলেও কয়েকগুণ বেশি দাম দিলে মিলছে সোনার হরিণে পরিণত হওয়া অভ্যন্তরীণ বিমানের টিকিট।
সরকারি ও বেসরকারি বিমান সংস্থার বিভিন্ন সেলস অফিস ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। ঈদের দু’দিন আগে-পরে আকাশপথের অভ্যন্তরীণ রুটে ওয়ানওয়ে টিকিট নেই বলে জানানো হয়। তবে কয়েকগুণ বেশি দামে পাওয়া যাচ্ছে টিকিট। সেক্ষেত্রে আড়াই হাজার টাকার টিকিটের দাম চাওয়া হচ্ছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা।
রোববার (৬ আগস্ট) দুপুরে বনানীর নভোএয়ারের সেলস অফিসের সামনে টিকিটের জন্য অপেক্ষায় থাকা মনিপুরীপাড়ার বাসিন্দা জামিল রেজার সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের। তিনি জানান, গত তিনদিন ধরে বাংলাদেশ বিমানের মতিঝিল ও বনানীর সেলস সেন্টারে গিয়ে কোনো টিকিট পায়নি। পরে এখানে আসি। কিন্তু এখানে টিকিট পাওয়া গেলেও দাম হাকা হচ্ছে কয়েকগুণ। বলা হচ্ছে ‘পোষালে নেন, না হলে অন্য এয়ারলাইন্স দেখেন’।
‘দেশটা যেন মগের মুল্লুক’ এমন উদ্ধৃতি করে তিনি বলেন, পরিবারের পাঁচ সদস্যকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যাব। সৈয়দপুরের ওয়ানওয়ে টিকিটের জন্য ১৩ হাজার টাকা করে ৬৫ হাজার টাকা দাবি করছে। শুনে আকাশ থেকে পড়লাম। ১৫ দিন আগে যেখানে রিটার্ন টিকিটের দাম ছিল মাত্র সাড়ে চার হাজার টাকা, এখন তা চাওয়া হচ্ছে পাঁচগুণেরও বেশি।
তিনি আরও বলেন, ‘ঈদের আগে টিকিটের দাম একটু বাড়বে, ঠিক আছে; তা’ই বলে পাঁচ-ছয়গুণ! এটা তো কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এ বিষয়ে সরকারের কোনো নির্দেশনা আছে কি না, জানি না। থাকলে কীভাবে এত বেশি দামে টিকিট বিক্রি করছে এয়ারলাইন্সগুলো?’
এ বিষয়ে নভোএয়ারের মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস বিভাগের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক একেএম মাহফুজুল আলমকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নভোএয়ারের অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, ১২-১৩ হাজার কথায় টিকিট বিক্রি হচ্ছে কথাটা ঠিক নয়। আমরা ৮-৯ হাজার টাকার বেশি দামে টিকিট বিক্রি করি নাই।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ঈদের (ঈদুল ফিতর) সময় অনেকেই কোরবানির ঈদের টিকিট কিনে রেখেছেন। এ কারণে টিকিটের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। যেগুলো অবশিষ্ট আছে, তা দিয়েই অতিরিক্ত মুনাফা করতে চাইছে বিমান সংস্থাগুলো।
এ বিষয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস বিভাগের পরিচালক আলী আহসান বাবু জাগো নিউজকে বলেন, মানুষ এখন আগের চাইতে অনেক বেশি সচেতন। ঈদে নিরাপদ ভ্রমণের জন্য অনেকেই দুই তিন মাস আগে টিকিট ক্রয় করে রেখেছেন। এবারও তাই ঘটেছে। ঈদের আগের ও পরের দু’দিন টিকিট সোল্ডআউট (বিক্রি শেষ)। এখন বেশি মূল্যে কিছু টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। সেগুলো কোনোভাবেই সর্বনিম্ন মূল্যের নয়।
এ বিষয়ে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের প্রধান নির্বাহী (সিইও) ইমরান আসিফ জাগো নিউজকে বলেন, ঈদ নয়, কখনই আমরা টপ ফেয়ারের টিকিটের দাম বাড়াই না। এয়ারলাইন্সের এ পার্টটি গ্লোবাল ট্রেডিশনে চলে। যে পয়েন্টে এসে টিকিটের ডিমান্ড হাই (চাহিদা বাড়ে) হয়ে যায় সেই পয়েন্ট থেকেই সিস্টেমে পরবর্তী টিকিটের ফেয়ার শো করে কিছুটা বেশি হারে। এখানে কারও কিছু করার থাকে না।
তিনি আরও বলেন, যাত্রীদের চাহিদার কথা চিন্তা করে ঈদে ইউএস-বাংলার ফ্লাইট সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। বেশ কয়েকটি রুটে প্রতিদিন দুটি করে ফ্লাইট বাড়ানো হয়েছে। এরপরও যাত্রীদের চাপ কমছে না।
টিকিট সঙ্কট ও চাহিদা বাড়ায় বিভিন্ন রুটে অতিরিক্ত ফ্লাইটেরও ব্যবস্থা করেছে এয়ারলাইন্সগুলো। এরপরও খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে টিকিট প্রত্যাশীদের। তারা জানান, ঈদের পর ৩-৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন গন্তব্য থেকে ঢাকায় ফেরার কোনো টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। রুটভেদে ফ্লাইটপ্রতি দুই একটি আসনের টিকিট রয়েছে, তাও ভাড়া অনেক বেশি।
আহমেদ তুর্জ নামে এক যাত্রী বলেন, ভাই বেশি দাম দিতেও প্রস্তুত। কিন্তু টিকিট তো পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে সড়ক পথেই যশোর যেতে হবে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক শাকিল মেরাজ এ প্রসঙ্গে বলেন, অতিরিক্ত চাহিদার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ঈদের চারদিন আগে থেকেই নিয়মিত ফ্লাইটের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন রুটে অতিরিক্ত ফ্লাইট চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ঈদে ঘরমুখো মানুষের নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতেই এ সিদ্ধান্ত।