সাতক্ষীরার ১০ বছরের শিশু মুক্তামনি কী রোগে আক্রান্ত তা জানতে তার বায়োপসি করা হয়েছে। এই পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়া যাবে সোমবার। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ড বসে সিদ্ধান্ত নেবে।
হাসপাতালে ভর্তির ২৪ দিন পর শনিবার সকালে ১০ বছর বয়সী শিশুটির বায়োপসি করা হয়। তাকে সকাল সাড়ে আটটায় অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। বার্ন ইউনিটের সমন্বয়কারী সামন্ত লাল সেনের নেতৃত্বে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে তার অস্ত্রোপচার শুরু হয়। সোয়া ১০টার পর বায়োপসি শেষ হয়।
অস্ত্রোপচার দলের সদস্যরা জানান, মুক্তামনির সংক্রমিত হাত থেকে টিস্যু সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এই দলের প্রধান বার্ন ইউনিটের প্রধান সমন্বয়কারী সামন্ত লাল সেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘৪৮ ঘণ্টার পরে রিপোর্ট পাব। এরপর মেডিকেল বোর্ড নিয়ে বসবো। তারপর সিদ্ধান্ত জানাতে পারব।’
বায়োপসি শেষে মুক্তামনিকে হাসপাতালের নিবিঢ়, পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউতে রাখা হয়েছে। তার বিষয়ে জানাতে সোমবার ঢাকা মেডিকেলে সংবাদ সম্মেলন করা হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
বার্ন ইউনিটের প্রধান ডাক্তার আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদেরকে জানান, সকাল আটটায় মুক্তামনিকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়ার আগে শিশুটি সবার কাছে দোয়া চেয়েছে।
গত ১২ জুলাই হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয় মুক্তামনিকে। প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকরা চারটি রোগের কথা ধারণা করলেও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর রোগটি লিমফেটিক ম্যালফরমেশন বলে সন্দেহ করছেন চিকিৎসকরা। এটি একটি জন্মগত রোগ (কনজিনেটাল ডিজিস)। তার পরও বিষয়টি নিশ্চিত হতেই এই বায়োপসি করা হয়।
১০ বছর বয়সী মুক্তামনির জন্ম সাতক্ষীরায়। অস্বাভাবিক দুগর্ন্ধযুক্ত ও ফোলা হাত নিয়ে সপ্তাহ দুয়েক আগে সে দেশের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল ঢাকা মেডিকেলে আসে। তার বাবা মা জানান, মুক্তামনি স্বাভাবিকভাবেই জন্ম নিয়েছিল। কিন্তু দুই বছর বয়সে তার ডান হাতে ছোট একটি টিউমার দেখা যায়। যা ধীরে ধীরে বড় হতে শুরু করে এবং গত দুই বছর ধরে ব্যাপক আকারে বাড়তে থাকে।
কিন্তু এ জন্য বাবা-মা কোন চিকিৎসকের কাছে যায়নি। তারা কবিরাজের কাছ থেকে ঝাড়ফুঁক নিতে থাকে। এক পর্যায়ে তার হাতে পোকা হয়ে যায় এবং জ¦র আসতে থাকে। সম্প্রতি তার চিকিৎসার জন্য সাতক্ষীরার একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর বিভিন্ন গণমাধ্যমে শিশুটির দুর্দশা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হয় এবং তাকে সরকারি উদ্যোগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে বার্ন ইউনিটে তার চিকিৎসা চলছে।
বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘মুক্তামনিকে ভর্তির পর আমরা দেখতে পাই, সে খুবই দুর্বল, অপুষ্টি ও রক্তস্বল্পতায় আক্রান্ত। বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার পাশাপাশি আমরা তার রক্তপূরণে এবং সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হই।
এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশুটির ব্যাপারে জানতে চান এবং তার চিকিৎসার সকল দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম মুক্তামনিকে দেখতে আসেন। তিনি জানান, শিশুটির চিকিৎসার দায়িত্ব তার মন্ত্রণালয় নেবে।
গত ২৭ জুলাই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সঙ্গে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বোর্ড মিটিং হয়। পরে ই মেইলের মাধ্যমে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতাল জানায়, মুক্তামনির এই রোগটি ভাল হওয়ার নয়, অপারেশনের মতোও নয়। তবে তারা রোগটির পরীক্ষা নিরীক্ষার ব্যাপারে সাহায্য করার কথা জানায়। এরপর সিঙ্গাপুর হাসপাতালের অভিমত প্রধানমন্ত্রীকে জানানোও হয়।
এরপরও ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসকদেরকে চেষ্টা চালিয়ে যেতে বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর ২ আগস্ট বুধবার ১৩ জন চিকিৎসককে নিয়ে একটি বৈঠক হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, ঝুঁকিপূর্ণ হলেও শনিবার বায়োপসি নেওয়া হবে।
সামন্ত লাল নেন জানান, তাদের বোর্ড মিটিং এর সিদ্ধান্ত মুক্তামনির বাবা-মাকে খুলে বলা হয়েছে এবং তারা মেয়ের চিকিৎসা চালিয়ে যেতে রাজি হয়েছেন।