সাঈদীর বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ, বুধবার জেরা

সাঈদীর বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ, বুধবার জেরা

মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. হেলালউদ্দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।

বুধবার তাকে আসামিপক্ষের আইনজীবীদের জেরার জন্য দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

মঙ্গলবার বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে দুই সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ এ দিন ধার্য করেন। ট্রাইব্যুনালের এক সদস্য অনুপস্থিত ছিলেন।

মঙ্গলবার সকালে সাঈদীর উপস্থিতিতে নবম দিনের মতো সাক্ষ্য দেন হেলালউদ্দিন।

শেষ দিনে তিনি ট্রাইব্যুনালে  রাষ্ট্রপক্ষের ১৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দী উপস্থাপন করেন। এ ছাড়াও তদন্তকালে জব্দ করা কয়েকটি বইয়ের তালিকাও উপস্থাপন করেন। ৮ এপ্রিল থেকে শুরু করে টানা ৯ কার্যদিবসে সাক্ষ্য শেষ করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

এর আগে সকালে সাঈদী নিজে মামলার কার্যক্রম মুলতবির আবেদন জানিয়ে একটি লিখিত আবেদনে বলেন, হরতালের কারণে জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা ট্রাইব্যুনালে আসতে পারেননি। তাই তিনি মামলার কার্যক্রম মুলতবির আবেদন জানান। তবে ট্রাইব্যুনাল তার আবেদন গ্রহণ করেননি।

৯ দিনের সাক্ষ্য দানকালে হেলালউদ্দিন জানান, সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে তিনি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বিভিন্ন বই, নথিপত্র, সংবাদপত্র ইত্যাদি পর্যালোচনা করেছেন। এসব আদালতে আলামত হিসেবে উপস্থাপন করে তিনি জানান, ‘জেনোসাইড বাংলাদেশ’ নামের একটি ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, বরিশালসহ ঝালকাঠি, রাজাপুর, কাউখালী, স্বরূপকাঠি, কাঠালিয়া, পিরোজপুর, মঠবাড়িয়া ও বাবুগঞ্জ এলাকার ৬০ শতাংশ বাড়িঘর মুক্তিযুদ্ধকালে ধ্বংস হয়ে গেছে। এসব এলাকায় বধ্যভূমি ও গণকবরের সংখ্যা ৪৭টি। তিন হাজার ৪০০ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, আড়াই হাজার কঙ্কাল পাওয়া গেছে। ৬৫ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।

তদন্ত কর্মকর্তা জানান, এসব ঘটনার অনেকগুলো সাঈদীর দ্বারা বা তার নেতৃত্বে সংঘটনের সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। পিরোজপুরের ১৮ জন রাজাকারের তালিকার ১৬ নম্বরে সাঈদীর নাম আছে।

উল্লেখ্য, এ মামলায় এ পর্যন্ত ২৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। অবশিষ্ট ৪৬ জন সাক্ষীর মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেওয়া ১৫ জনের লিখিত জবানবন্দীকে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীর দায়ের করা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে তার রাজধানীর শাহীনবাগের বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এর পর ওই বছরের ২ আগস্ট তাকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।

শুনানি শেষে তার বিরুদ্ধে গত বছরের ১৪ জুলাই রাষ্ট্রপক্ষের আনা অভিযোগ আমলে নেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল। ৩ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হয়। গত ২০ ও ২১ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষের সূচনা বক্তব্য (ওপেনিং স্টেটমেন্ট) পাঠ শেষে ৭ ডিসেম্বর থেকে সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিচ্ছেন মামলার সাক্ষীরা।

এর মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে প্রথম অভিযুক্ত হিসেবে সাঈদীর আনুষ্ঠানিক বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়।

সাঈদীর বিরুদ্ধে গঠন করা অভিযোগ এবং ৭৭ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন ও আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্রে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিন হাজারেরও বেশি নিরস্ত্র ব্যক্তিকে হত্যা বা হত্যায় সহযোগিতা, নয়জনেরও বেশি নারীকে ধর্ষণ, বিভিন্ন বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট, ভাঙচুর এবং ১০০ থেকে ১৫০ হিন্দুকে ধর্মান্তরে বাধ্য করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

বাংলাদেশ