বিএনপিতে নেতৃত্বের সংকট!

যোগ্য নেতৃত্বের সংকট চলছে বিএনপিতে। এমনটাই মনে করছেন রাজনীতিকেরা।

আবার শনিবার কুষ্টিয়ার জনসমাবেশে বেগম খালেদা জিয়ার দেওয়া ভাষণেও তার প্রকাশ ঘটেছে।

রাজনীতিকদের কেউ কেউ মনে করছেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যর্থতায় হতাশ, দলের নিবেদিতপ্রাণ জ্যেষ্ঠ নেতাদের কাজ করার সুযোগ না পাওয়া এবং দলের সাংগঠনিক দায়িত্বশীল পদ না পাওয়া এমন জ্যেষ্ঠ নেতাদের দলে টানতে চাইছে বিএনপি।

আবার কেউ কেউ বলছেন, ক্ষমতা বঞ্চিত নেতা যারা পদ না পেয়ে ক্ষোভ নিয়ে আওয়ামী লীগে রয়ে গেছেন, তাদের কে কাছে টানতেই বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়ার এই উন্মুক্ত আহ্বান।

আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় আসছে এমনই ইঙ্গিত বহন করে বিএনপি নেত্রীর এ আহ্বানে। এ কারণেই খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের সম্মানজনক পদ দেওয়ার কথা বলেছেন।

এদিকে খালেদা জিয়ার এমন বক্তব্য রাজনৈতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

শনিবার কুষ্টিয়ায় এক জনসভায় বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগের দেশ প্রেমিক নেতাদের বিএনপিতে যোগদানের আহবান জানিয়েছেন। তিনি এ সময় যোগদানকারীদের সম্মানজনক পদ দেওয়ারও ঘোষণা দেন।

বিএনপিতে আওয়ামী লীগ নেতাদের খালেদা জিয়ার যোগদান করার প্রসঙ্গ ও কোনও পদ খালি আছে কিনা জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জেনারেল মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার এ বক্তব্য রাজনৈতিক।’

তবে তিনি দল বদলের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেখা যায়, রাজনৈতিক নেতারা দল বদল করে থাকেন।

তিনি বলেন, অনেক নেতা মনোনয়ন পাওয়ার আশায়ও দল বদল করে থাকেন। সে দৃষ্টিকোণ থেকেও খালেদা জিয়া এ কথা বলতে পারেন বলে তিনি মনে করেন।

তিনি বলেন, বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক জনগণের দল। এ দল যতোবার ক্ষমতায় ছিলো, দেশের উন্নয়নে কাজ করেছে। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দেশের কোনও উন্নয়ন করতে পারে নি। বরং ব্যর্থ হয়েছে।

ফলে আওয়ামী লীগের নিবেদিতপ্রাণ নেতা যারা কাজ করতে পারছেন না, এমন নেতাদের বিএনপিতে যোগ দিতে খালেদা আহ্বান জানাতে পারেন বলে তিনি মনে করেন।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার খালেদা জিয়ার এ বক্তব্যের ব্যাপারে মন্তব্য করতে চান নি।

তিনি বলেছেন, এটা তার নিজস্ব বক্তব্য। তিনি কোন বিষয়কে উদ্দেশ্য করে এবং কেনই বা এমন কথা বলেছেন, তা কেবল চেয়ারপার্সনই বলতে পারবেন।

তবে খালেদা জিয়ার এমন বক্তব্য আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে টানতে পারবে না। আওয়ামী লীগের একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতার সাথে কথা বললে তারা এমন বক্তব্যকে আবোল-তাবোল বলেই মনে করছেন।

তাছাড়া জামাতসহ বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ থাকায় আওয়ামী লীগের নেতারা বিষয়টিতে গুরুত্বও দিচ্ছেন না।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল কাদের বাংলানিউজকে বলেন, ক্ষমতা ফিরে পেতে খালেদা জিয়া এখন আবোল তাবোল বকছেন।

তিনি দাবি করেন, বিএনপির আর ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা নেই। কারণ, জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে।

ওবায়দুল কাদের আরো মন্তব্য করেন, দুর্নীতির দায়ে ছেলেরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, তাই এখন মুখে যা আসছে তাই বলছেন খালেদা।

আওয়ামী লীগের পদ না পাওয়া নেতাদের ইঙ্গিত করে খালেদা এমন আহ্বান জানিয়েছেন কি না প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতার লোভী সংগঠন নয়। এ দলের নেতারা ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করেন না।

আওয়ামী লীগ নেতারা দেশ ও জনগণের জন্য রাজনীতি করেন।

বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের লালন করছে এ অভিযোগ করে তিনি বলেন, বিএনপিতে লোক নেই বলেই পদ ছেড়ে দিতে পারেন। কিন্তু বিএনপির কোনও নেতা আওয়ামী লীগে যোগ দিলে পদ পেতে অনেক সময় অপেক্ষা করতে হয়।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিএনপি নেত্রী তার দলকে ক্ষমতায় আসার লক্ষ্যে আরো শক্তিশালী করতেই অন্য দল থেকে নেতা বা অন্য সংগঠনকে তার দলে নেবেন এটাই স্বাভাবিক। আমার মনে হয় সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই তিনি এ আহ্বান জানিয়েছেন।’

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহম্মদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আওয়ামী লীগের কোনও নেতা যুদ্ধাপরাধীদের লালন করে এমন দলে যাবেন না। তারা আদর্শগত জায়গা থেকে যেতে পারেন না।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন-পালন করেন।

তবে বেগম জিয়ার এমন বক্তব্যে যে তার দলে সাংগঠনিক নেতৃত্বের সংকট রয়েছে তা ষ্পষ্ট হয়ে গেছে। কারণ, দলের অনেক জ্যেষ্ঠ নেতা দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। সংস্কারপন্থী অনেক সিনিয়র নেতাও আগের মতো দায়িত্ব পালন করছেন না।

আবার দলের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা মারা গেছেন। ফলে বিএনপি সাংগঠনিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে।

তাই আওয়ামী ক্ষমতার প্রায় তিন বছর চললেও বার বার আন্দোলনের কথা বলেও তেমন সফল হতে পারে নি বিএনপি। কয়েকবার হরতাল আহ্বান করেও তা সফল করতে পারে নি।

আর এসব বিষয় বিবেচনা করে দলকে আরো শক্তিশালী করতে চাচ্ছেন খালেদা জিয়া। যাতে করে আগামী দিনে আন্দোলন জোরদার করতে পারে বিএনপি।

রাজনীতি