জেলা প্রশাসকদের প্রতি তৃণমূলের লোকদের যথাযথ সেবা দেয়ার আহ্বান রাষ্ট্রপতির

জেলা প্রশাসকদের প্রতি তৃণমূলের লোকদের যথাযথ সেবা দেয়ার আহ্বান রাষ্ট্রপতির

রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ বিশেষ আমলাতান্ত্রিক মনোভাব পরিত্যাগ করে প্রকৃত জনগণের সেবক হিসেবে দেশ এবং দেশের জনগণের সেবা করার জন্য বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বুধবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনের দরবার হলে বিভাগ ও জেলার প্রশাসনিক প্রধানদের বলেন, ‘সেকেলে ও বিশেষ আমলাতান্ত্রিক ভঙ্গি ত্যাগ করে জনগণের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে দেশ ও জনগণের সেবক হিসেবে আপনাদের কর্তব্য পালন করুন।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, বর্তমান যুগে প্রশাসনকে হতে হবে গণমুখি ও উন্নয়নভিত্তিক এবং অতপর আমলাদের সেকেলে ধরনের আমলাতান্ত্রিক মনোভাব ত্যাগ করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ‘তৃণমূল পর্যায়ের বিভিন্ন সরকারি কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে দেশকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে স্বপ্নের ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও শোষণমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আপনাদের মেধা ও দক্ষতাকে কাজে লাগাতে হবে।’
রাষ্ট্রপতি বিশেষভাবে ডিসিদের প্রতি গুণগত মান নিশ্চিত করতে নিয়মিত স্কুল পরিদর্শন এবং শিশুদের মধ্যে একটু একটু করে দেশ প্রেমের ধারণা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগিয়ে তোলার আহ্বান জানান।
তিনি বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসিদের প্রতি ভীতি, লোভ ও অনুরাগ অথবা বিরাগের ঊর্ধ্বে উঠে দায়িত্ব পালনেরও আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসিরা রাজধানীতে বার্ষিক ডিসি সম্মেলনে অংশ নিতে এসেছেন উন্নয়ন ও শাসন সংক্রান্ত নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা এবং আগামী এক বছরের কাজের অগ্রাধিকার ও দিক-নির্দেশনা নির্ধারণ করতে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ধর্মনিরপেক্ষতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি মাঠপর্যায়ের এই প্রশাসকদের প্রতি যেকোন মূল্যে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ নির্মূলের কার্যক্রম জোরদার করার নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, যেহেতু প্রকৃত ধর্মীয় মূলবোধ কখনোই সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে না, তাই এই প্রচারণার অংশ হিসেবে জনগণ বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মাঝে ধর্মের প্রকৃত বাণী ছড়িয়ে দিতে হবে।
রাষ্ট্রপতি তৃনমূল পর্যায়ে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম সম্প্রসারণ এবং নতুন প্রজন্মকে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করতে জেলা প্রশাসকদের পরামর্শ দেন।
দুর্নীতিকে দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও সুশাসনের জন্য প্রতিবন্ধকতা হিসেবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি এসব সামাজিক সমস্যাকে সমূলে উচ্ছেদ এবং দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেন।
দেশে বিদ্যমান ভূমি ব্যবস্থাপনাকে আরও কার্যকর, আধুনিক, সহজ এবং জনবান্ধব করার ওপর গুরুত্বারোপ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘ভূমি ব্যবস্থাপনাকে কেন্দ্র করে জনগণের হয়রানি বন্ধ করুন। সবসময় জনবান্ধব সেবা প্রদান করুন।’
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ পরিবেশবান্ধব কৃষি ব্যবস্থাপনা, পণ্যের যথাযথ বিপণন এবং কালোবাজারি ও মজুদদারি বন্ধে মনোযোগী হওয়ার জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেন। তিনি বিভিন্ন এলাকায়, বিশেষত হাওরাঞ্চলে, প্রবল বৃষ্টিপাত, বন্যা এবং নদীভাঙ্গন বিবেচনায় নিয়ে জনগণের ক্ষয়ক্ষতি একটি ন্যূনতম পর্যায়ে রাখতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং দুর্গত জনগণের জন্য সরকার সবকিছু করতে প্রস্তুত বিধায় গৃহহীন জনগণকে পুনর্বাসন করতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেন।
রাষ্ট্রপতি অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা, পরিবেশ এবং যুব উন্নয়নসহ বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইস্যুতে জেলা প্রশাসকদের বেশকিছু নির্দেশনা দেন।
রাষ্ট্রপতি হামিদ অপরিকল্পিত বাড়িঘর ও স্থাপনা নির্মাণ এবং দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তাদের নিজ-নিজ দায়িত্বের জায়গা থেকে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য জেলা প্রশাসকদের প্রতি আহবান জানান।
এর আগে অনুষ্ঠানে শুভেচছা বক্তব্য রাখেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. মোসাম্মৎ নাজমুনারা খানম এবং নওগাঁর জেলা প্রশাসক ড. এম আমিনুর রহমান।
রাষ্ট্রপতির সচিববৃন্দ, সকল বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা প্রশাসকবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ শীর্ষ খবর