প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদানকালে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি প্রকৃত শিল্পী ও কলা-কুশলীদের মূল্যায়ন করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এ ব্যাপারে কেউ কাউকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করবেন না।
তিনি গতকাল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০১৫ বিতরণকালে বলেন, ‘আমি আশা করবো এ ধরনের পুরস্কার প্রদানকালে এ ব্যাপারে কেউ কাউকে প্রভাবিত করবেন না। আমি চাই প্রকৃত শিল্পী ও কলা-কুশলীদের যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হবে এবং কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে মনোযোগী হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের ক্ষমতা থাকতে পারে, কিন্তু আমরা এর অপব্যবহার হোক তা চাই না। আমি প্রত্যেককে এ ব্যাপারে কোন চাপ সৃষ্টি না করার অনুরোধ করবো।’
প্রধানমন্ত্রী গতকাল বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) দেশের চলচ্চিত্র শিল্পে অবদানের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি হিসেবে ২৫টি ক্যাটাগরিতে ৩১ জন শিল্পী ও কলা-কুশলীর হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ কে এম রহমাতুল্লাহ।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন তথ্য সচিব মরতুজা আহমেদ। অনুষ্ঠানে মন্ত্রীবর্গ, উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, ঊর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাগণ, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও সম্মানিত নাগরিকগণ উপস্থিত ছিলেন।
পুরস্কার প্রাপ্তদের মধ্যে বিশিষ্ট চলচ্চিত্র অভিনেত্রী শাবানা অনুষ্ঠানে পুরস্কার প্রাপ্তির বিষয়ে তার অনুভূতি প্রকাশ করেন।
শেখ হাসিনা চলচ্চিত্র নির্মাতাদের প্রতি দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরে মানসম্মত চলচ্চিত্র নির্মাণের আহ্বান জানান এবং তাদের আশ্বস্ত করেন যে, তাঁর সরকার এর জন্য যা করা দরকার তা করবে।
তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০১৫ বিতরণকালে বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে তাদেরই চাই যাদের সিনেমায় দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য থাকবে এবং পাওয়া যাবে আন্তর্জাতিক প্রশংসা।’
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ প্রতিটি ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা চলচ্চিত্রেও পিছিয়ে থাকতে চাই না এবং আমি কথা দিচ্ছি যে, চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে যে সহযোগিতা প্রয়োজন তা আমরা করবো।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা ৪ লাখ কোটি টাকারও বেশি বাজেট দিয়েছি। এখন আমরা প্রতিটি সেক্টরেই স্বনির্ভর। আমরা একটা বিজয়ী জাতি, কারণ আমরা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছি এবং আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে এমনকি চলচ্চিত্র শিল্পেও এই বিজয়ের ধারা বজায় রাখতে চাই।’
প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন যে, চলচ্চিত্র নির্মাতা, প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার, অভিনেতা-অভিনেত্রী ও কলা-কুশলীসহ সংশ্লিষ্ট সকলে তাদের মেধা, পরিশ্রম ও সৃজনশীলতার মাধ্যমে চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে যোগ্য চিত্রনাট্যকারের অভাব রয়েছে। ভাল চিত্রনাট্য সম্বলিত একটি চলচ্চিত্র দর্শকদের হৃদয়কে স্পর্শ করতে পারে এবং তারা সিনেমার একটি সুন্দর আবেগ নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারে।
তিনি শিল্পী, সাহিত্যিক এবং চলচ্চিত্র নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের প্রতি বিষয়টি বিবেচনার জন্য আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষতা অর্জনের জন্যও চলচ্চিত্র নির্মাতাদের প্রতি আহ্বান জানান।
চলচ্চিত্রকে একটি শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের সংগ্রাম ও সমাজের চিত্র চলচ্চিত্রে প্রতিফলিত হয়। এই সৃজনশীল শিল্পের মাধ্যমকে সাধারণ মানুষের খুব কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া সম্ভব। ফলে সাধারণ মানুষ সৃজনশীল কর্মে অনুপ্রেরণা পায়। তারা সামাজিক মূল্যবোধ ও দেশপ্রেমে উৎসাহিত হয়। তিনি বলেন, শিল্পী, কলা-কুশলী ও চলচ্চিত্র নির্মাতারা দেশ গঠনে সাধারণ মানুষকে প্রেরণা যোগান।