আচ্ছা এবার কি এক ম্যাচে চারজনের বদলে পাঁচ বিদেশি ক্রিকেটার খেলবেন? বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল কি এবার সাত দেশি ক্রিকেটারের বদলে ছয় স্থানীয় ক্রিকেটার খেলানোর চিন্তা ভাবনা করছে?’ ক্রিকেট পাড়ায় এ গুঞ্জন ক’দিন ধরেই।
এটাকে গুঞ্জন ভাবার কোনই কারণ নেই। সম্ভবত, সেটাই সত্য হতে যাচ্ছে। ভেতরের খবর, আগের চারবারের নিয়ম পাল্টে এবার খুব সম্ভবত প্রতি ম্যাচে পাঁচজন করে বিদেশি ক্রিকেটার খেলানোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল। আজ দুপুরে হয়ত সে ঘোষণাই দিতে যাচ্ছে তারা।
প্রতি ম্যাচে একজন করে বিদেশি ক্রিকেটার বাড়ানোর অর্থ, একজন করে দেশি ক্রিকেটার কমে যাওয়া। তার মানে সাত জনের বদলে প্রতি খেলায় সর্বোচ্চ ছয় স্থানীয় ক্রিকেটারের সুযোগ পাওয়া। সোমবার অপরাহ্নে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, বিসিবি পরিচালক ও দেশ প্রসিদ্ধ ঔষধ নির্মাতা এবং বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান ‘একমি ল্যাবরেটরিজের’ অন্যতম স্বত্বাধীকারি আফজালুর রহমান সিনহার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কল্যাণপুর কর্পোরেট অফিসে বেলা সাড়ে ১২টায় এক সংবাদ সন্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সে সংবাদ সন্মেলনে পাঁচ বিদেশি ক্রিকেটার খেলানোর কথাই জানানো হতে পারে।
যদি সে ঘোষণাই আসে, তাহলে সেটা বাংলাদেশের ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের জন্য মোটেই সুখবর হিসেবে পরিগনিত হবে না। যদিও বিপিএল আয়োজক ও প্রতিযোগী দলগুলোর মালিকদের একাংশ প্রতি ম্যাচে বিদেশি কোটা বাড়ানোর পক্ষে। জানা গেছে, গত পরশু (শনিবার) রাতে ফ্র্যাঞ্চাইজি ও গভর্নিং কাউন্সিলের যৌথ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে গেছে।
ভেতরের খবর, আট দলের প্রায় অর্ধেক অংশ (কারো কারো দাবি, ৬০ ভাগ) বিদেশি ক্রিকেটার চার জন রাখার পক্ষে ছিলেন; কিন্তু তা ধোপে টেকেনি। এবার বিপিএলে প্রতি ম্যাচে বিদেশি ক্রিকেটার খেলার কোটা বাড়ানোর সিদ্ধান্তই নেয়া হয়েছে।
আইপিএল, বিগ ব্যাশসহ টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের সব বড় বড় ফ্র্যাঞ্চাইজি আসরেই চারজন করে বিদেশি খেলোয়াড় খেলানো হচ্ছে। বাংলাদেশের বিপিএলেও এতকাল তাই ছিল। সাতজন স্থানীয় ক্রিকেটারের সাথে চার ভীনদেশির সন্মিলনে সাজানো হতো একাদশ।
এবার হঠাৎ কি হলো যে সে সংখ্যা রদ বদল করতে হচ্ছে? কোথায় দেশি ক্রিকেটার বেশি করে একজন বিদেশি কমিয়ে দেয়া হবে? তা না, উল্টো বিদেশি বাড়িয়ে দেয়ার চিন্তা ভাবনা! এতে করে প্রতি দলের একজন করে স্থানীয় ক্রিকেটার খেলার সুযোগ হারাবেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাদের খেলার সুযোগ কমে যাবে।
এমন প্রশ্নের জবাবে বিপিএল আয়োজক ও ব্যবস্থাপকদের ব্যাখ্যা, দেশের ক্রিকেটারদের গুণগত মান বাড়ানো এবং তাদের আর্থিক দিক থেকে লাভবানের কথা চিন্তা করেই এই বিপিএল আয়োজন।
বিপিএল খেলে প্রতি বছর কিছু বাড়তি অর্থ লাভ হচ্ছে। এর পাশাপাশি ক্রিস গেইল, সাঙ্গাকারা, মাহেলা জয়বর্ধনে, আফ্রিদি, ডোয়াইন ব্র্যাভো ও আন্দ্রে রাসেল আর মোহাম্মদ আমিরের মত বিশ্ব মানের পারফরমারদের সাথে এক হোটেলে থাকা, এক সাথে প্র্যাকটিস করা, ড্রেসিং রুম শেয়ার এবং ম্যাচ খেলার অবারিত সুযোগ- বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মান উন্নয়নে অনেক কার্যকর ভূমিকা রাখছে।
তাতে সাহস, উদ্যম, অনুপ্রেরণা এবং নিঃসংকোচে নিজের সামর্থ্যরে প্রয়োগ ঘটানোর সুযোগ মিলছে। বিপিএল খেলে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদেরদের পারফরমেন্সের গ্রাফ ওপরেই উঠেছে। যার প্রমাণও আছে।
কিন্তু বিপিএল আয়োজক কমিটি এবং কিছু কিছু ফ্র্যাঞ্চাইজির ধারনা, বাংলাদেশে কোয়ালিটি ক্রিকেটারের সংখ্যা তুলনামূলক কম। এবার আবার দল বেড়ে আটে এসেছে। এখন প্রতি ম্যাচে চারজন করে বিদেশির সাথে সাত জন করে দেশি খেলানোর অর্থ, আট গুনিতক সাত, মানে ৫৬ জন ক্রিকেটার দরকার।
এতকাল যা ৪২ কিংবা ৪৯ জন হলেই চলতো; কিন্তু এবার তা বেড়ে ৫৬‘তে গিয়ে ঠেকবে। অথচ বাংলাদেশে অত উঁচু মানের ক্রিকেটার কই? যারা মেধা, মনন ও প্রজ্ঞায় আন্তজার্তিক ও বিশ্ব মানের ক্রিকেটারদের সাথে সামঞ্জস্য ও ভারসাম্য রেখে পারফরম করতে পারবেন?
তাই দেশি ক্রিকেটার খেলানোর কোটা একজন কমিয়ে, বিদেশি ক্রিকেটার বাড়ানোর চিন্তা ভাবনা। আয়োজক ও ফ্র্যাঞ্চাইজিদের মত, এতে করে দলগুলোর শক্তির ভারসাম্য ঠিক থাকবে। দর্শকরা আকর্ষণীয় ও উপভোগ্য ক্রিকেট দেখতে পাবেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতাও বাড়বে।