তাকে নিয়ে রাজ্যের কথা-বার্তা। গুঞ্জন। ফিসফাস। মোহাম্মদ আশরাফুল এখনো আলোচনায়। তবে সেটা যতটা পারফরমেন্সে, তারচেয়ে অনেক বেশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ভক্ত-সমর্থকদের মধ্যে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও নাম সর্বস্ব অনলাইন এখনো আশরাফুলকে নিয়ে মেতে আছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও কিছু অনির্ভরযোগ্য অনলাইনে প্রায় প্রতিদিনই আশরাফুলকে নিয়ে প্রচুর লেখালেখি। যার সারমর্ম হলো, আশরাফুল খুব শিগগিরই আবার জাতীয় দলে ডাক পাচ্ছেন। আর এবারের বিপিএলও খেলতে যাচ্ছেন তিনি।
এটাই শেষ নয়। আর একপক্ষ তো নিয়মিত লিখে যাচ্ছে, আশরাফুল নাকি এবারের বিপিএলে অবশ্যই খেলছেন। গত দু’ তিনদিন শেরে বাংলার একাডেমি মাঠ ও ইনডোরে জাতীয় দলের অনুশীলনে সাবেক সহযোগী ও অনুজপ্রতিম ক্রিকেটারদের সাথে আশরাফুলের ছবি দেখে সে সব ভিত্তিহীন ও বানোয়াট প্রতিবেদনগুলো কারো কারো কাছে বিশ্বাসযোগ্যও মনে হয়েছে।
কেউ কেউ ধরে নিয়েছেন, তাহলে হয়ত আশরাফুল সত্যিই জাতীয় দলে ডাক পাবেন এবং এবার বিপিএলও খেলবেন। মোদ্দা কথা, আশরাফুলকে নিয়ে একটা বড় ধরনের বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। কিন্তু কেউ খুঁটিয়ে দেখছেন না, আসলেই আশরাফুলের এ মুহূর্তে জাতীয় দলে খেলার অনুমতি আছে কি না।
কিসের ভিত্তিতে আশরাফুল এ মুহূর্তে জাতীয় দলে খেলবেন, পাশাপাশি এবারের বিপিএলে অংশ নেবেন তা পরিস্কার হওয়া খুব জরুরী।
আইসিসির দূর্নীতি দমন ইউনিট (আকসু) আংশিক মুক্তি দিলেও আশরাফুল ঘরোয়া ক্রিকেটে অনেক বেশি ভাল খেললেও এখনই তার জাতীয় দলে ফেরার সুযোগ ও অনুমতি আছে কি না? তার পক্ষে এবারের বিপিএল খেলা সম্ভব কি না? ওই সব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও নাম সর্বস্ব অনলাইনগুলোর লিখায় তার কোন পরিস্কার ব্যাখ্যা নেই।
বলার অপেক্ষা রাখে না আশরাফুল ঘরোয়া ক্রিকেটে হাজার হাজার রান করলেও এখনই জাতীয় দলে ডাক পাবেন না। তার ছাড়পত্রেই উল্লেখ আছে, প্রতি ম্যাচে রানের নহর বইয়ে, হাফ সেঞ্চুরি আর সেঞ্চুরি হাঁকাতে থাকলেও ২০১৮ সালের আগস্টের আগে জাতীয় দলে খেলতে পারবেন না আশরাফুল।
একইভাবে এবার মানে ২০১৭ সালে বিপিএল খেলাতেও আছে পরিষ্কার নিষেধাজ্ঞা। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামীবার, মানে ২০১৮ সালের বিপিএল খেলার সুযোগ পাবেন আশরাফুল।
সবচেয়ে মজার খবর হলো, খোদ আশরাফুলের জাতীয় দলে ফেরা আর এবার বিপিএল খেলা নিয়ে এতটুকু মাথা ব্যাথা নেই। কি করে থাকবে? কেনই বা থাকবে?
তার পরিষ্কার জানা, ২০১৮ সালের আগস্ট পর্যন্ত তার জাতীয় দলে খেলায় নিষেধাজ্ঞা আছে আইসিসির। একইভাবে এবারের বিপিএল খেলারও অনুমতি নেই। এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আর অতি উৎসাহী কিছু নাম সর্বস্ব অনলাইনের বাড়াবাড়ি দেখে আশরাফুল নিজেও খানিক বিব্রত।
এ সম্পর্কে জাগো নিউজের সাথে আলাপে জাতীয় দলের এ সাবেক অধিনায়ক বলেন, ‘আসলে আমাকে আইসিসি যে গাইডলাইন দিয়েছে, সেখানেই পরিষ্কার ব্যাখ্যা আছে আমি কি করতে পারবো, আর কি করতে পারবো না। সবচেয়ে বড় কথা আমি খুব ভাল করেই জানি, আমার পক্ষে ২০১৮ সালের আগস্টের আগে কিছুতেই জাতীয় দলে ফেরা সম্ভব নয়। ঘরের ক্রিকেটে হাজার হাজার রান করলেও না। আর বিপিএল খেলার ওপরও আছে পরিষ্কার নিষেধাজ্ঞা। এবার নয়, আগামী বছর মানে ২০১৮ সালের বিপিএল খেলতে পারবো আমি।’
এটা তো আইসিসির নির্দেশ। আশরাফুল চাইলে কি নতুন করে, মানে আবার ওই নিষেধাজ্ঞা কমানোর আবেদন করতে পারেন না? কারো কারো মনে নিশ্চয়ই এ প্রশ্ন উঠেছে। জাগো নিউজকে এ প্রাসঙ্গিক ও কৌতুহলি প্রশ্নের জবাবও দিয়েছেন আশরাফুল।
তার পরিষ্কার ব্যাখ্যা, ‘আইসিসির কাছে রীতিমত শপথ করা আছে, আমার যে সব শাস্তি এখনো বহাল আছে, তা কিছুতেই কমানোর বা পুনর্বিবেচনার আবেদন করা যাবে না। সেই শর্ত মেনেই আমি ওই চুক্তিতে সাক্ষর করেছি। এখন নতুন করে জাতীয় দলে ফেরার সুযোগ আর এবারের বিপিএল খেলার অনুমতি চাওয়ার অর্থ ওই চুক্তি লঙ্ঘন। সেটা আমার জন্য হিতে বিপরীত হতে পাওে এবং হবেও। কাজেই যে যাই বলুক আর ভাবুক না কেন, আমার পক্ষে শাস্তি কমানোর আবেদন মানে, এখনই জাতীয় দলে ফেরার অবারিত সুযোগের আবেদন এবং ২০১৭ সালের বিপিএল খেলার অনুমতি চাওয়ার প্রশ্নই আসে না।’
আগামী বছরের অপেক্ষায় রয়েছেন আশরাফুল। সে কথাই তিনি জানালেন জাগো নিউজকে, ‘আমি অপেক্ষায় আছি আগামী বছরের। তাই এখন থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছি। প্রায় প্রতিদিনই শেরে বাংলার ইনডোর ও একাডেমি মাঠে অনুশীলনে যাচ্ছি। গত বছর জাতীয় লিগ আর এবার প্রিমিয়ার লিগ খেললেও তেমন ভাল খেলতে পারিনি। মনে হয় প্রস্তুতিতে ঘাটতি ছিল। আমার বন্ধু স্থানীয় জাতীয় দলের কয়েকজন ক্রিকেটার এবং কোচ ও সুহৃদ শুভানুধ্যায়ী সবাই বলেছেন, তিন বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে যতটা শারীরিক ও ক্রিকেটীয় প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামা উচিৎ ছিল। আমি তা করতে পারিনি।
সে বোধ ও উপলব্ধি থেকেই এবার অনেক আগে থেকে প্রস্তুতি শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
আশরাফুল আশাবাদী, নিয়মিত পারফর্ম করতে থাকলে একদিন না একদিন আশা পূরণ হবেই। তিনি বলেন, ‘আশা করছি দীর্ঘ সময় নিবিড় অনুশীলন করতে পারলে আগামী বছর পারফরমেন্স হবে আরও ভাল। আর আগেও বলেছি, এখনই জাতীয় দলে ফেরার কথা ভাবছি না। আমার বয়স ৩৩ প্লাস। এরচেয়ে চার পাঁচ বছর বেশি বয়সেও ইউনুস খান আর মিসবাউল হকরা খেলেছেন। মাঠ মাতিয়েছেন। সেঞ্চুরিও হাঁকিয়েছেন। আমি বিশ্বাস করি, তারা পারলে আমি কেন পারবো না? সে লক্ষ্যেই এগুচ্ছি। দেখা যাক কি হয়!’