গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নানকে তৃতীয় দফা সাময়িক বরখাস্তের প্রজ্ঞাপন স্থগিত করে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এর ফলে তার মেয়রের দায়িত্ব পালনে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন শুনানি নিয়ে রোববার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বে তিন সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ ‘নো অর্ডার’ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে আবেদনের শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং মেয়র মান্নানের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও তার সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. আবু হানিফ।
রায়ের পর ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন সাংবাদিকদদের বলেন, সাময়িক বরখাস্তের বিরুদ্ধে রিটের পর হাইকোর্ট তা স্থগিত করেন। হাইকোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করলে আপিল বিভাগ আজ ‘নো অর্ডার’ আদেশ দেন। ফলে হাইকোর্টের আদেশ বহাল থাকল। এখন তার দায়িত্ব পালনে আর কোনো আইনি বাধা নেই।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হওয়ায় গত ৬ জুলাই স্থানীয় সরকার বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে এমএ মান্নানকে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বরখাস্তের আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে মান্নানের করা রিট আবেদনের শুনানি শেষে গত ৯ জুলাই বিকেলে তিন মাসের জন্য স্থগিতাদেশ দেন বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
একইসঙ্গে বরখাস্তাদেশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে চার সপ্তাহের রুল জারি করেন আদালত। মান্নানকে দায়িত্ব পালনে যেন কোনো বাধা না দেয়া হয় সে আদেশ দিয়ে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে আসাদুর রহমান কিরণের নিয়োগও স্থগিত করেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল আবেদনের পর গত ১০ জুলাই চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের আদালত শুনানির জন্য আপিল বিভাগে পাঠিয়ে দেন। আজ রোববার বরখাস্তের আদেশ স্থগিত করে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের বিষয়ে ‘নো অর্ডার’ দিলেন আপিল বিভাগ।
২০১৩ সালে প্রথমবারের মতো নির্বোচনে গাজীপুর সিটি মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপির এই নেতা। পরবর্তীতে নাশকতার এক মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র গৃহীত হওয়ার পর ২০১৫ সালের ১৯ আগস্ট বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক মান্নানকে প্রথম বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে জিতে ২৮ মাস পর মেয়র পদ ফিরে পান মান্নান।
এরপর আরও একটি মামলার অভিযোগপত্র গৃহীত হলে ২০১৬ সালের ১৮ এপ্রিল দ্বিতীয়বারের মতো তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ওই আদেশেরও বিরুদ্ধেও আইনি লড়াই করেন মান্নান।
গত ১৮ জুন পুনরায় পদ ফিরে পান তিনি। কিন্তু এর কয়েকদিনের মধ্যে দুর্নীতির মামলায় অভিযোগপত্র গৃহীত হওয়ার পর আবারও তাকে বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।