তিনি নিজেও ছিলেন দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত। হয়েছিলেন আজীবন নিষিদ্ধ। তবে শেষ বয়সে এসে কিছুটা প্রায়শ্চিত্ব করার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। হয়ে গিয়েছিলেন ফিফা দুর্নীতি নিয়ে তদন্তকারী মার্কিন গোয়েন্দা পুলিশ এফবিআইয়ের এক নম্বর তথ্য প্রদানকারী। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই ফিফার অনেক রথি-মহারথিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। এমনকি এর ওপর ভিত্তি করেই সেপ ব্ল্যাটার-প্লাতিনি থেকে শুরু করে দুর্নীতিগ্রস্থ বড় বড় ফুটবল কর্মকর্তাদের নিষিদ্ধ করতে পেরেছিল ফিফার এথিক্স কমিটি।
ফিফার সেই দুর্নীতি উদঘাটনকারী চাক ব্লেজার অবশেষে পৃথিবী থেকেই চলে গেলেন। ৭২ বছর বয়সে ক্যান্সারের কাছে হেরে গেলেন উত্তর আমেরিকান ফুটবল সংস্থা কনকাকাফের সাবেক সেক্রেটারি এবং ফিফার সাবেক নির্বাহী কমিটির এই সদস্য।
বুধবারই চাক ব্লেজারের আইনজীবী এরিক র্কনগোল্ড এবং ম্যারি মুলিগান তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন। মলদ্বারে ক্যান্সার ছাড়াও তিনি ডায়াবেটিস এবং পাইলসসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন।
২০১৩ সালে ফিফা দুর্নীতি নিয়ে তুমুল হইচই শুরু হলে তখন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় এবং তিনি নিজে অভিযোগ স্বীকার করেন। ২০১৫ সালে এসে চাক ব্লেজারকে ফিফা এবং ফুটবল সম্পর্কিত যাবতীয় কর্মকাণ্ড থেকে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। তার বিরুদ্ধে তখন বলা হয়, ‘নানানভাবে তিনি অসদুপায় অবলম্বন করেছিলেন।’
ব্লেজার স্বীকার করেছিলেন ১৯৯৮ ফ্রান্স এবং ২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকাকে বিশ্বকাপের আয়োজক হিসেবে নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে ঘুষ গ্রহণ করেছিলেন তিনি।
১৯৪৫ সালের ২৬ এপ্রিল নিউ ইয়র্কে জন্মগ্রহণ করেন চাক ব্লেজার। ফুটবলে তার ক্যারিয়ার শুরু একজন স্বেচ্ছাসেবি (ভলান্টিয়ার) হিসেবে। এরপর নিজেকে ফুটবলের একজন সংগঠক হিসেবে গড়ে তুলতে থাকেন এবং এক সময় ক্ষমতার সর্বোচ্চ শিখরেও আরোহন করতে সক্ষম হন।
ফিফা দুর্নীতি ফাঁস হতে শুরু করলে চাক ব্লেজারের বিপক্ষেও অভিযোগ গঠন করা হয় এবং তিনি অপরাধ স্বীকার করে নেন। ফিফা থেকে নিষিদ্ধ হলেও তিনি ছিলেন এফবিআইয়ের সবচেয়ে বড় তথ্যদাতা।
মৃত্যুর ঘোষণা দিয়ে চাক ব্লেজারের আইনজীবী এরিক র্কনগোল্ড এবং ম্যারি মুলিগান বলেন, ‘ব্লেজার আশা করেছিলেন, কনকাকাফ এবং ফিফায় সততা, স্বচ্ছতা আসবে। একই সঙ্গে পুরো ফুটবল বিশ্বে দুর্নীতির লেশমাত্র থাকবে না।’
একই সঙ্গে তিনি নিজে যে দোষি ছিলেন, সে কথাও জানাতে ভুল করলেন না আইনজীবী। বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘চাক একই সঙ্গে নিজের বিপক্ষে আনা সব দোষ এবং এর দায়-দায়িত্ব স্বীকার করেছেন। ভুলগুলো একান্ত নিজের বলেও স্বীকার করেছিলেন তিনি। নিজের কাজের জন্য তিনি ছিলেন গভীরভাবে দুঃখিত।’