কবি ও প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহার অপহরণ ইস্যু নিয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক বলেছেন, তিনি স্বেচ্ছায় ঢাকা ছেড়েছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর পুলিশ সদর দফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
ফরহাদ মহজার অপহরণের নাটক করেছেন কিনা সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, আমার ধারণা এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে এটাই ক্লিয়ার। সরকারকে বিভ্রান্ত করতেই এ ঘটনা ঘটেছে।
কি উদ্দেশ্যে ফরহাদ মজহার এ ধরনের কাজ করতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, তার অপহরণের পর সরকারবিরোধীরা নানা ধরনের কথা বলেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সেদিন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ড. জাফরউল্লাহ বলেছেন, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী জানেন। প্রকৃত ঘটনা না জেনেই তিনি এ মন্তব্য করেন। এছাড়া ফরহাদ মজহারকে উদ্ধারে লন্ডনে মানববন্ধনও হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে সরকারকে বিভ্রান্ত করতেই এটি করা হয়েছে।
আইজিপি বলেন, ৩ জুলাই ভোর ৫টা ২৯ মিনিট থেকে ফরহাদ মজহার নিখোঁজ হন বলে তার স্ত্রী দাবি করেন। কিন্তু তিনি সকাল ৮টায় আদাবর থানায় লোক পাঠান। এর পরপরই পুলিশ তাকে উদ্ধারে কাজ শুরু করে। তারা বলেছিল একটি মাইক্রোবাসে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাই হাইওয়েতে অনেক মাইক্রোবাস চেক করা হয়। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। সন্ধ্যায় তথ্য পেলাম তিনি খুলনা থেকে বাসে যোগে ঢাকায় আসছেন। এরপর তাকে উদ্ধার করে পুলিশ।
তদন্তে জানতে পারি, ভোর ৫ টা ২৯ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ফরহাদ মাজহার তার নম্বর থেকে স্ত্রীর সঙ্গে ১০ বার কথা বলেছেন। মজহার সাহেব তার আরেকটি সিম থেকে অন্যজনের সঙ্গে ৬ বার কথা বলেন।সেই নম্বর থেকে একটি এসএমএসও আসে।তদন্ত করে দেখি ওই নম্বরটি ভাটারা থানার এক নারীর। যেহেতু তিনি মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তাই তদন্তের স্বার্থে পুলিশ তার সঙ্গে কথা বলেছে।তিনি আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
তদন্তে জেনেছি, ওই নারী ২০০৭ সালে ফরহাদ মজহারের সহকর্মী ছিলেন। পরে তাদের মধ্যে সম্পর্ক হয়। সম্পর্কের কারণে আগে একবার তিনি সমস্যায় পড়েন। এরপর ডাক্তারের ট্রিটমেন্ট নেন। সম্পর্কের কারণে একই ধরনের সমস্যা আবারও হয়। ওই নারী ২ তারিখে তাকে ফোনও দেয়।
যেদিন ফরহাদ মজহারের কথিত অপহরণ হয় সেদিন দুপুরে ওই নারী ফোনে তাকে বলেন, আপনি নাকি অপহরণ হয়েছে। উত্তরে তিনি বলেন, না আমার কিছু হয়নি, ভালো আছি। পুলিশের কাছে এই ফোন রেকর্ড আছে।
সেদিন দুপুরে ওই নারীর নম্বরে ডাচ বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং রকেটের মাধ্যমে তিনি প্রথমে ১৩ হাজার এবং পরবর্তীতে দুই হাজার টাকা পাঠান। বিকেলে যখন ফেসবুকসহ দেশের গণমাধ্যমগুলোতে তার অপহরণের বিষয়টি ভাইরাল হয়, তার পরিবার যখন গণমাধ্যমে কথা বলে তখন কিছুটা বিব্রত বোধ করেন ফরহাদ মজহার। সে সময় তিনি তার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে বলেন, এগুলো নিয়ে কথা বলা বন্ধ কর। ওরা বলেছে ছেড়ে দেবে। এটা নিয়ে আর কথা বলো না। ফোনের এ রেকর্ড পুলিশের কাছে রয়েছে।
আইজিপি বলেন, পুলিশের কাছে সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ রয়েছে ৩ জুলাই দুপুর ৪টা ২১ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৬টা ২৮ মিনিট পর্যন্ত তিনি নিউ মার্কেটে ছিলেন।
ফরহাদ মজহার কীভাবে খুলনা গেছেন জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, বিষয়টি এ পর্যন্ত জানতে পারিনি। তদন্ত কর্মকর্তারা তার সঙ্গে একাধিকবার কথা বলার চেষ্টা করলেও তিনি কথা বলতে রাজী হননি।
ফরহাদ মজহার যদি মিথ্যাচার করে থাকেন তাহলে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায় কিনা দেখি।