প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনার মধ্যে আগামী শুক্রবার অনুষ্ঠেয় আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, কৃষি, উপকূলীয় জাহাজ চলাচল, শিক্ষা, আইসিটি এবং ভিসা সম্পর্কিত বিষয়াদিসহ দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন ইস্যু প্রাধান্য পাবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট আজ ঢাকায় আসবেন। তাঁর এই সফরকালে দুই দেশের মধ্যে ১০টিরও বেশি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।
২০১৫ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর এটাই হবে সিরিসেনার প্রথম বাংলাদেশ সফর।
আজ বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বিস্তারিত অবহিত করেন।
শাহরিয়ার আলম বলেন, এ সফরে শ্রীলংকার প্রেসিডেন্টের সফরসঙ্গী হিসেবে সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, দুর্যেগ ও ত্রাণমন্ত্রী, উচ্চশিক্ষা এবং জনপথ প্রতিমন্ত্রী, কৃষি প্রতিমন্ত্রী, অর্থ ও গণযোগাযোগ উপমন্ত্রী, বন্দর ও নৌপরিবহন উপমন্ত্রীসহ সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাগণ এবং ব্যবসায়িক প্রতিনিধিসহ ৭৩ সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধিদল থাকবে।
উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকাকালীন ২০১৩ সালের ৮ থেকে ১১ এপ্রিল এবং ২০১৪ সালের ২২ থেকে ২৩ জুন বাংলাদেশ সফর করেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনার বাংলাদেশে আগমনকালে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তাঁকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানাবেন।
এ ছাড়াও তাঁকে গান স্যালুটসহ আনুষ্ঠানিক গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে। বিকেলে তিনি সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এ ছাড়াও তিনি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করবেন এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করবেন। এদিন সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শ্রীলংকার প্রেসিডেন্টের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
শাহরিয়ার আলম বলেন, শুক্রবার দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এ বৈঠকে দু’দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট দ্বিপাক্ষিক বিষয়াবলি যেমনÑ বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কৃষি, মৎস্য, উপকূলীয় জাহাজ চলাচল, শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি, তথ্য ও প্রচার, ভিসা সংক্রান্ত বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা প্রভৃতি অধিক গুরুত্ব পাবে।
বৈঠক শেষে ১০টির বেশি চুক্তি/সমঝোতা স্মারক যথা- বাংলাদেশও শ্রীলংকার মধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে সহযোগিতা, উচ্চশিক্ষা, উপকূলীয় জাহাজ চলাচল, কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের ভিসা অব্যাহতি, দু’দেশের বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষের মধ্যে সহযোগিতা, তথ্য এবং যোগাযোগ প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতা, দু’দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে সহযোগিতা, দু’দেশের ফরেন সার্ভিস ইনস্টিটিউটের মধ্যে এবং বাংলাদেশের বিস্্ এবং শ্রীলংকার এলকেএইচআরএসএস ও বিএসটিআই-এর মধ্যে সহযোগিতা, দু’দেশের সংবাদ সংস্থার মধ্যে সহযোগিতা, দু’দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, চট্টগ্রাম বিজিএমইএ ফ্যাশন ইনস্টিটিউট ও শ্রীলংকা টেক্সটাইল ও অ্যাপারেল ইনস্টিটিউট-এর মধ্যে সহযোগিতা স্মারক স্বাক্ষরের কথা রয়েছে।
তিনি বলেন, শুক্রবার বিকেলে জাতীয় সংসদের স্পিকার, সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রেসিডেন্টের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা শুক্রবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হবেন এবং তাঁর সম্মানে রাষ্ট্রপতির দেয়া নৈশভোজে অংশগ্রহণ করবেন।
শনিবার সকালে শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, এমসিসিআই এবং বিডা-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত বাংলাদেশ-শ্রীলংকা বিজনেস সংলাপে অংশগ্রহণ করবেন। এর পরপরই তিনি শ্রীলংকার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ত্যাগ করবেন।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের এপ্রিলে শ্রীলংকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মহিন্দ্র রাজাপাকসে বাংলাদেশ সফর করেন।
পরবর্তীতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালে কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের সম্মেলনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে শ্রীলংকা সফর করেন।