ঢাকা: পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতায় গত বুধবার বহুল প্রতীক্ষিত প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। এ প্যাকেজে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী ২০টি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি স্বল্প পুঁজি ও মার্জিন ঋণ নিয়ে যেসব বিনিয়োগকারী প্রকৃত অর্থেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের স্বার্থ রক্ষায় বিশেষ স্কিম প্রণয়ন করা হয়েছে। এজন্য ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি আগামী দুই মাসের মধ্যে এসব ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীর ব্যাপারে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে জমা দেবে।
পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতার প্রণোদনা প্যাকেজ কী প্রভাব ফেলবে, এটা সাময়িক না দীর্ঘস্থায়ী হবে তাই এখন পর্যবেক্ষণ করছেন বিনিয়োগকারীরা। গত বৃহস্পতিবার দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের(ডিএসই) লেনদেনে এর প্রতিফলন দেখা গেছে। এদিন লেনদেনের শুরুতে চাঙাভাব থাকলেও তা পাঁচ মিনিটের বেশি স্থায়ী থাকেনি। এরপর সারাদিনই ডিএসইর সূচক ওঠানামা করে দিনশেষে সূচক অপরিবর্তিত থেকে যায়। বৃহস্পতিবার একদিকে যেমন ছিল বাই-প্রেসার তেমনি সেল-প্রেসারও ছিল সমপরিমাণ। বিনিয়োগকারীরা ঠিক স্থির সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না যে তাদের হাতে থাকা শেয়ার ধরে রাখবেন না ছেড়ে দিবেন।
প্রণোদনা প্যাকেজে অনেক পদক্ষেপ ইতিবাচক হলেও ব্যাংক খাতের বিষয়গুলোকে স্বল্প মেয়াদে ঝুঁকিমুক্ত বললেও দীর্ঘমেয়াদে তার সুফল কতটা বজায় থাকবে তা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেছেন অর্থনীতিবিদরা। স্বল্প মেয়াদি বা যা এখনই বাস্তবায়ন সম্ভব এমন পদক্ষেপগুলোর মধ্যে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যে এসইসির প্রস্তাবনার প্রেক্ষিতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চারটি বিষয়ে সার্কুলার জারি করেছে। যার ফলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিবন্ধকতা অনেকটা কেটে গেছে। তবে ব্যাংকগুলোর বিধিবদ্ধ নগদ জমা (সিআরআর) ও বিধিবদ্ধ জমার (এসএলআর) হার কমানো হয়নি। যার একটা প্রভাব শেয়ারবাজারে পড়তে পারে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
অব্যাহত দরপতনে বিনিয়োগকারীদের তুমুল আন্দোলনের মুখে গত ১৬ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুঁজিবাজার সংশ্লি¬ষ্টদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন। ওইদিন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতায় প্যাকেজ ঘোষণা দেবে বলে জানায় এসইসি। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৩ নভেম্বর বুধবার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার আজম সিকিউরিটিজের বিও অ্যাকাউন্টধারী বিনিয়োগকারী আজমল আকতার জানান, প্রণোদনা প্যাকেজ বাজারে কী প্রভাব ফেলে তা দেখার জন্য দুই-চার দিন সময় লাগবে। এখনও (গত বৃহস্পতিবার) আমি বাজার পর্যবেক্ষণ করছি। কারণ প্রণোদনা প্যাকেজের পদক্ষেপগুলো যদি দ্রুত বাস্তবায়ন না হয় তাহলে বাজার ভালো হতে আরো সময় লাগবে।
আরএন ট্রেডিং ব্রোকারেজ হাউজের অথরাইজড রিপ্রেজেন্টেটিভ মাসুদ রানা জানান, বিনিয়োগকারীরা এখনও ঠিক স্থির হতে পারেন নি। তারা কোন খাতের শেয়ার কিনবেন বা কোন খাতের শেয়ার বিক্রি করে দিবেন তা ঠিক করতে পারছেন না। তবে অনেক বিনিয়োগকারী এখন বাই বা সেল করছেন না। তারা বাজার পর্যবেক্ষণ করছেন। তাদের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করছে বাজার কী স্বল্প সময়ের জন্য ভালো হবে না দীর্ঘমেয়াদে যাবে।
এ ব্যাপারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও এসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এ মুহুর্তে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা চায় যতদ্রুত সম্ভব লোকসান কাটিয়ে উঠতে। তাই তাদের প্রবণতা অযৌক্তিক নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতার জন্য যেসব প্রতিষ্ঠানকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে তারা যথাযথভাবে কাজ করছে কী না তা মনিটরিং করার প্রয়োজন। কারণ প্রণোদনা প্যাকেজের সুযোগ নিয়ে কেউ যেন আবার বাজারকে অস্থিতিশীল না করতে পারে।
পুঁজিবাজার স্থিতিশীলকরণে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। তাতে শেয়ারবাজার সাময়িক সহায়ক হবে বলে জানান তত্ত্ববধায়ক সরকারের সাবেক এই অর্থ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলোর বছর শেষ হবে। এক্ষেত্রে পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ বাড়লে তা মুনাফায় প্রভাব ফেলতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে এসব পদক্ষেপ ব্যাংকের জন্য ভালো ফল নাও হতে পারে।
প্যাকেজ ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার প্রথম দিনের লেনদেন শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রেসিডেন্ট শাকিল রিজভী বলেন, বিনিয়োগকারীরা প্যাকেজের সুযোগ-সুবিধা বিচার বিবেচনার জন্য কিছুটা সময় নেবে। তবে সার্বিকভাবে ঘোষিত প্যাকেজকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন তিনি। প্রণোদনা প্যাকেজের সিদ্ধান্তগুলো পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন হলে পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদি সুফল বয়ে আনবে বলে মনে করেন তিনি।