বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম বরাদ্দে এনএসসির কাণ্ড!

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম বরাদ্দে এনএসসির কাণ্ড!

এই তো গত মাসেই বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের মাঠে কয়েক হাজার মানুষের উপস্থিতি ছিল আন্তর্জাতিক ইয়োগা দিবসের অনুষ্ঠানে। কতো কিছুই তো হয় দেশের খেলাধুলার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত এ স্টেডিয়ামে। যোগ ব্যায়াম হয়েছে তো কী? আসলে এটি কেবল উদাহরণ। এখন তো ক্রিকেট আর হকি ছাড়া সব খেলাই পারলে আয়োজন করে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে।

অথচ স্টেডিয়ামটি ব্যবহারের প্রধান দাবিদার ফুটবল এবং অ্যাথলেটিক। মাঝে-মধ্যে এ খেলা দুটিই গৌণ হয়ে যায় অন্য খেলার চাপে। যে চায়, তাকেই মাঠ বরাদ্দ দিয়ে দেয় স্টেডিয়ামের মালিক জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। খেলা এবং খেলার বাইরের অনেক অনুষ্ঠান বুকে ধারণ করে করে স্টেডিয়ামের মাঠটি ক্লান্ত। বিশ্রাম নেই বললেই চলে।

ফেডারেশন কাপের পর এ মাঠে ১২ জুন শুরু হওয়ার কথা ছিল দেশের ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদার আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ। তা পিছিয়ে এখন ২৮ জুলাই শুরু হওয়ার কথা। লিগ পেছালে কী হবে, মাঠের কিন্তু বিশ্রাম নেই। কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে নরম হয়ে আছে মাঠ। ২৮ জুলাই প্রিমিয়ার লিগ শুরু হলে এখন থেকেই মাঠ ঠিক-ঠাকের কাজ শুরু হওয়ার কথা; কিন্তু সে সুযোগটা কই? ২১ ও ২২ জুলাই এখানে হবে জাতীয় অ্যাথলেটিক চ্যাম্পিয়নশিপ। দুই দিন ধরে ভেজা মাঠেই শুরু হয়েছে কয়েকটি দলের প্রস্তুতি।

২১ ও ২২ জুলাই জাতীয় অ্যাথলেটিক এবং ২৮ জুলাই প্রিমিয়ার লিগ শুরুর তারিখ নির্ধারণ অনেক আগের । অথচ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ প্রথম আন্তঃবিশ্ব বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টের জন্য বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম বরাদ্দ দিয়ে রেখেছে ১৪ থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত। তাহলে জাতীয় অ্যাথলেটিক হবে কিভাবে? ২৮ জুলাই প্রিমিয়ার লিগ শুরুরই বা কী হবে?

তাহলে কী আরেক দফা পেছাচ্ছে প্রিমিয়ার লিগ? ‘না, প্রিমিয়ার লিগ পেছাবে না। আমি শেখ মোহাম্মদ আসলামের সঙ্গে কথা বলেছি। তাকে অনুরোধ করেছি টুর্নামেন্টটা যেন ২২ জুলাইয়ের মধ্যে শেষ করে’-জাগো নিউজকে বলেছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ।

সাবেক ফুটবলার শেখ মোহামম্দ আসলাম আন্তঃবিশ্ব বিদ্যালয় ফুটবল আয়োজনের সঙ্গে জড়িত। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের প্রশাসক মো. মোবারক করিম লিটন জাগো নিউজকে বলেছেন, ‘আন্তঃবিশ্ব বিদ্যালয় ফুটবল ১৪ জুলাই শুরু হয়ে কবে শেষ হবে জানি না। তবে তাদের ২১ ও ২২ জুলাই খেলা বন্ধ রাখতে হবে জাতীয় অ্যাথলেটিক চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য।’

এই তো গেলো ঘরোয়া খেলা নিয়ে স্টেডিয়াম বরাদ্দের লড়াই। নভেম্বরে তো দুটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট নিয়ে চলছে আরো মজার ঘটনা। ১৫ থেকে ২৬ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে হবে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ। আবার ২১ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই স্টেডিয়াম বরাদ্দ নিয়েছে বাংলাদেশ আরচারি ফেডারেশন। এখানে তারা ওই সময় আয়োজন করবে ২০তম এশিয়ান আরচারি চ্যাম্পিয়নশিপ এবং নবম জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ। ২৩ এপ্রিল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছ থেকে স্টেডিয়াম বরাদ্দ নিয়ে রেখেছে আরচারি ফেডারেশন।

ফুটবল স্টেডিয়াম বলে ফুটবলের কোনো অনুষ্ঠানের জন্য জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছ থেকে মাঠ বরাদ্দ নেয়ার কিছু নেই বাফুফের। বরং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছে কেউ অন্য কোনো খেলা বা অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য স্টেডিয়াম বরাদ্দ চাইলে তারা সে চিঠি ফরোয়ার্ড করে বাফুফেতে। বাফুফের মতামত নিয়েই সাধারণত অন্য কাউকে স্টেডিয়াম বরাদ্দ দেয় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। কয়েক মাস আগে আরচারির চিঠি পাঠালে ‘না’ সূচক মতামত দেয় বাফুফে। তারপরও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ একটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট আয়োজনের জন্য স্টেডিয়াম বরাদ্দ দিয়ে রেখেছে আরচারি ফেডারেশনকে।

আরচারিকে যে স্টেডিয়াম বরাদ্দ দিয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ তা জানা নেই বাফুফের। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ বলেছেন, ‘আমরা তো তখন না করেছি। ওই সময় আমাদের মেয়েদের খেলা আছে। লিগও চলতে পারে। তারপরও কেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আরচারিকে স্টেডিয়াম বরাদ্দ দিলো বুঝতে পারছি না। এ স্টেডিয়ামে ফুটবলেরই প্রধান্য।’

বাংলাদেশ