কক্সবাজারে বেড়াতে আসা বিদেশি পর্যটকদের জন্য পৃথক ট্যুরিস্ট জোন করা হবে। পর্যটন নগরী কক্সবাজারে বিদেশি পর্যটক বাড়াতে এ উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার।
কক্সবাজারের সাবরাং অঞ্চলে এই জোন স্থাপন করা হবে। শিগগিরিই এ সংক্রান্ত উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে পর্যটন করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ২০১৮ সাল নাগাদ দেশে পর্যটকের সংখ্যা ১০ লাখে উন্নীত করার টার্গেট নেওয়া হয়েছে। এজন্য ‘ভিজিট বাংলাদেশ’ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন চলছে। কিন্তু কাঙ্খিত হারে বিদেশি পর্যটক পাচ্ছে না বাংলাদেশ। ফলে বিদেশি পর্যটক বাড়াতে তাদের জন্য ‘বিশেষ জোন’ করার চিন্তা করছে সরকার।
পর্যটন কর্পোরেশনের তথ্য অনুসারে, কক্সবাজারের সাবরাং অঞ্চলে ১০০ একর জায়গা নিয়ে তৈরি করা হবে এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন। এটি করা হবে শুধু বিদেশি পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে। সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন থেকে এই প্রকল্পে বড় অংকের অর্থও বরাদ্দ দেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান খান কবির বলেন, বাংলাদেশে পর্যটন খাতের বিপুল সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সমন্বিত পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম নিয়েও আলাদা প্রকল্প রয়েছে। সরকারের মাস্টারপ্ল্যানে রয়েছে বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করার বিভিন্ন প্রজেক্ট। পর্যটন অঞ্চলে এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোনও করা হবে।
তিনি বলেন, দেশের অভ্যন্তরীণ পর্যটকের সংখ্যাও বেড়েছে। আমাদের দেশে এখন বেশকিছু ট্যুর অপারেটর রয়েছে। তবে দায়িত্বশীল ট্যুর অপারেটর গড়ে উঠেনি। পর্যটন করপোরেশন শুধু নীতি-নির্ধারণ করবে। এগুলো কার্যকর করবে পর্যটন বোর্ড।
জানা গেছে, স্পেশাল টুরিস্ট জোনে বিদেশিদের জন্য থাকবে মোটেল, রিসোর্ট, গেমিং জোন, কনভেনশন সেন্টার, সিনেপ্লেক্স, ফুড কোর্ট, বিচ ট্যুর অপারেটর। উড়োজাহাজে করে বিদেশি পর্যটকরা কক্সবাজার বিমানবন্দরে নেমে এরপর শাটল ট্রেনে সরাসরি সাবরাং যেতে পারবেন। এজন্য বিদেশি বিনিয়োগকারী খোঁজা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পর্যটন করপোরেশন।
সূত্র জানায়, পর্যটন করপোরেশনের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় ৪ হাজার ২৮৫ দশমিক ৫৬ লাখ ব্যয়ে চট্টগ্রামে নতুন পর্যটন মোটেল সৈকত নির্মাণ করা হয়েছে। চট্টগ্রামের পারকি সৈকতে পর্যটন স্থাপনাদি গড়ে তোলার জন্য প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
পর্যটক বাড়তে বিদেশি ট্যুর অপারেটরও পরিচিতিমূলক ভ্রমণে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। যাতে বাংলাদেশের ট্যুর অপারেটররা বিদেশি ট্যুর অপারেটরদের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারেন। অন অ্যারাইভাল ভিসার পরিধি বাড়িয়ে আরও কয়েকটি দেশকে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।
পর্যটন করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, বিদেশি পর্যটকদের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ পর্যটকের সংখ্যাও আগের চেয়ে শতকরা ২০ ভাগ বেড়েছে। পর্যটন খাতে গত ৮ বছরে ৬ হাজার ৬৯ কোটি টাকা আয় হয়েছে। আর গত ৬ বছরে ৩১ লাখ ২২ হাজার ৭৫৬ জন পর্যটক বাংলাদেশে ভ্রমণ করেছেন। ২০১০ সালে ভ্রমণ করেছেন ৫ লাখ ৩০ হাজার ৬৬৫ জন, ২০১১ সালে ৫ লাখ ৯৩ হাজার ৬৭৭ জন, ২০১২ সালে ৫ লাখ ৮হাজার ১৯৩ জন, ২০১৩ সালে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৫৯৬ জন, ২০১৪ সালে ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৫৩১ জন এবং ২০১৫ সালে ৬ লাখ ৪৩ হাজার ৯৪ জন।
২০১৬ সালে পর্যটন খাত থেকে আয় হয়েছে ৮০৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা, ২০১৫ সালে ১ হাজার ১৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা, ২০১৪ সালে ১ হাজার ২২৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা, ২০১৩ সালে ৯৪৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, ২০১২ সালে ৮২৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা, ২০১১ সালে ৬২০ কোটি ১৬ লাখ টাকা, ২০১০ সালে ৫৫৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা এবং ২০০৯ সালে ৫৭৬ কোটি ২২ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নে পর্যটন শিল্পকে অন্যতম অর্থনৈতিক খাত হিসেবে গড়ে তোলার কাজ চলছে। ২০১০ সালে ট্যুরিজম বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
এছাড়া পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের আওতায় কক্সবাজারের বিদ্যমান পর্যটন কমপ্লেক্স, পর্যটন রিসোর্ট ও এন্টারটেইনমেন্ট ভিলেজ উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হচ্ছে। যা পর্যটন শিল্পকে নতুন মাত্রা দেবে।