বাংলাদেশের প্রকল্প পেল বিশ্বব্যাংকের পুরস্কার

বাংলাদেশের প্রকল্প পেল বিশ্বব্যাংকের পুরস্কার

সারাবিশ্বে বিশ্বব্যাংকের চলমান প্রকল্পগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের ‘নতুন জীবন’ বা এসআইপিপি-২ প্রকল্পটি জিতে নিয়েছে এক্সিলেন্সি অ্যাওয়ার্ড। এই প্রথম বাংলাদেশে চলমান কোনো প্রকল্প বিশ্বব্যাংকে পুরস্কৃত হলো। দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন, নারীর দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখায় বিশ্বব্যাংক থেকে প্রকল্পটিকে পুরস্কারের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ অফিস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এ ব্যাপারে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ অফিসের জনসংযোগ কর্মকর্তা মেহরিন এ মাহবুব জাগো নিউজকে বলেন, বিশ্বে বিশ্বব্যাংকের যে কয়টি প্রকল্প চলমান তার মধ্যে এই প্রকল্পটি খুবই কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। বিষয়টি আমাদের অভ্যন্তরীণ অডিটে উঠে এসেছে। দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন, সহযোগিতা, কৃষিবিষয়ক জ্ঞান সম্প্রসারণ এবং যুব কর্মসংস্থানে প্রকল্পটি বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। তাই প্রকল্পটিকে এসএআর ভিপিইউ অ্যাওয়ার্ড দেয়া হচ্ছে। বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি, গর্বের বিষয়।
সূত্রে জানা গেছে, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, রংপুর, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, সিলেট, বরিশাল, খুলনাসহ দেশের ২২টি জেলার ৮৮টি উপজেলায় এসডিএফ কর্তৃক “নতুন জীবন লাইভলিহুড ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্ট” বাস্তবায়িত হচ্ছে। ৩০ লাখেরও বেশি দরিদ্র মানুষ এ প্রকল্পের মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছে। উপকারভোগীদের মধ্যে ৯০ শতাংশই নারী। প্রকল্পের আওতায় ছোট ছোট রাস্তা, স্কুল, পানি সমস্যা দূর করা হচ্ছে। প্রকল্পটির মাধ্যমে যুব সমাজসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যেক্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।
এতে নারীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে দেয়া হচ্ছে বিশেষ প্রাধান্য। উন্নত জীবিকার সুযোগ সৃষ্টি ও অংশীদারিত্বমূলক ব্যবসার সাহায্যে বাজারে প্রবেশের সুযোগ দেয়ার মাধ্যমে এই প্রকল্প গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন ঘটানোর ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। এছাড়া প্রকল্পটি পুষ্টি সচেতনতা বৃদ্ধি, কৃষিবিষয়ক জ্ঞান সম্প্রসারণ এবং যুব কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির ওপর জোর দিচ্ছে।

প্রকল্প বাস্তবায়িত এলাকায় বিশেষ অবদান রাখায় বিশ্বব্যাংকের গ্রুপ প্রেসিডেন্ট ড. জিম ইয়ং কিমের কাছ থেকে “দক্ষিণ এশীয় অঞ্চল ভাইস প্রেসিডেন্ট ইউনিট (এসএআর ভিপিইউ)” অ্যাওয়ার্ড অর্জনের স্বীকৃতি পেয়েছে এটি। দক্ষিণ এশীয় ৩৯টি টিমের মধ্যে অ্যাওয়ার্ডের জন্য পাঁচটি দেশের ছয়টি প্রজেক্টকে নির্বাচন করা হয়েছে।

৩৯টি টিমের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে একমাত্র “এসআইপিপি-২ টিম” নির্বাচিত হয়েছে। সাধারণত ছয়টি বিশেষ দিক মূল্যায়ন করে বিশ্বব্যাংক থেকে এ পুরস্কার দেয়া হয়। বিশেষ দিকগুলো হলো ক্লাইয়েন্টের জন্য ফলাফল সরবরাহ; টিম ও টিমের বাইরে সহযোগিতা করা; পরিচালনা ও উদ্ভাবন; জ্ঞান সৃষ্টি, প্রয়োগ ও সম্প্রসারণ; ভঙ্গুরতা, দ্বন্দ্ব ও সন্ত্রাস মোকাবেলা এবং আঞ্চলিক জেন্ডার অ্যাকশন প্ল্যান কার্যকর করা।
এই ছয়টি বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে “এসএআর ভিপিইউ” মূল্যায়ন করা হয়েছে। যার সবক’টিতেই ‘নতুন জীবন’ প্রকল্প বিশেষ নজর কেড়েছে। বিশ্বব্যাংক প্রকল্পটিতে ২২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থায়ন করেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসডিএফ কর্তৃক বাস্তবায়িত “এসআইপিপি-২” প্রকল্পটি দারিদ্র্য বিমোচন ও নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। এর ফলশ্রুতিতেই এসেছে বিশ্বব্যাংক টিমের অ্যাওয়ার্ড। এ পুরস্কার বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের জন্য একটি অত্যন্ত গৌরব ও আনন্দের বিষয়।

প্রসঙ্গত, সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (এসডিএফ) ২০০০ সালে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অধীনে একটি স্বায়ত্তশাসিত ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়। এসডিএফের মাধ্যমেই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর আগে ২০০৩ সালে ক্ষুদ্র পাইলট প্রকল্প হিসেবে প্রথম বাংলাদেশের দু’টি দরিদ্রতম জেলায় শুরু করা হয়েছিল। এটি পর্যায়ক্রমে আরও ১৪ জেলায় সম্প্রসারিত হয়।

বাংলাদেশ