অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি সংসদে

অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি সংসদে

জাতীয় পার্টির এমপি ও সাবেক মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু অর্থমন্ত্রীর কঠোর সমালোচনা করে তার পদত্যাগ দাবি করেছেন জাতীয় সংসদে। একই সঙ্গে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল চার্জ আনার দাবিও জানিয়েছেন তিনি।

ব্যাংকিং খাতে ‘লুটপাট’ হওয়ার পরও মূলধন সংকটের কারণে প্রস্তাবিত বাজেটে ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখায় এই দাবি জানান তিনি।

এ ছাড়া অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে তিনি বলেন, আপনি সসম্মানে চলে যান। বিদায় নেন। আপনার অনেক বয়স হয়েছে। আর কত? আপনি বিদায় নিয়ে ১৬ কোটি মানুষকে মুক্তি দেন। আমি আপনার পদত্যাগ চাই।

মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

এ সময় সংসদের সভাপতিত্বে ছিলেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে থাকলেও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত উপস্থিত ছিলেন না।

জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু আরও বলেন, এটা উন্নয়নের বাজেট নয়, সীমাহীন করের বাজেট। এই করের বাজেট থেকে আমরা মুক্তি চাই, মুক্তি চাই, মুক্তি চাই। তিনি বলেন, ভূমি ধ্বসের মতো বাজেট ধ্বস হয়েছে।

তিনি বলেন, আমি সরকারি দলের এমপিদের কাছে প্রশ্ন করবো আমরা কি উন্নয়নের মহাসড়কে আছি না লুটপাটের মহাসড়কে আছি? আপনারা বিবেকের কাছে জিজ্ঞাস করেন।
অর্থমন্ত্রী নাইটিঙ্গেলে কল্পনার সু্ন্দর জগতে আছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিন্তু বাস্তব জগত অনেক কঠিন। তার বাজেট বক্তৃতা শুনে মনে হয়েছে বিধ্বস্ত মন্ত্রীর বর্ণাঢ্য রূপকল্প।

ঘাটতি বাজেট সম্পর্কে তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী বলেছেন ঘাটতি ১ লাখ ১২ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। এই ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক খাত থেকে আসবে ৫১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা। অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ উৎস মানে ট্যাক্স থেকে আসবে ৬০ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। আর ব্যাংক থেকে নেবেন ২৮ হাজার ২০৩ কোটি টাকা এবং গরিব মানুষের সঞ্চয়পত্রসহ অন্যান্য ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে নেবেন ৩২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা। এটি কী সম্ভব? এখন ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে গেছে, অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছে। গত বাজেটে যে ঘাটতি ছিল তা বৈদেশিক উৎস থেকে মাত্র ২৮ হাজার কোটি টাকা পেয়েছেন। এই বাজেটেও তিনি বৈদেশিক উৎস থেকে টাকা আনতে পারবেন না বলে আমি হলফ করে বলতে পারি।

তিনি বলেন, অর্থ প্রতিমন্ত্রী প্রস্তাবিত বাজেটে কিছু পরিবর্তনের কথা বললেও অর্থমন্ত্রী বলেছেন এই বাজেট পরিবর্তন করার এখতিয়ার শুধু আমার। আর কারো না। সরকারের মধ্যে যদি এই মতভেদ থাকে তাহলে তো কোনো কিছু বাস্তবায়ন হবে না। তিনি বলেন, জিডিপি একমাত্র উন্নয়নের মাপকাঠি না। মিথ্যার বেসাতি নিয়ে আপনারা মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন।

ব্যাংকিং খাতের দুর্দশার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ। ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে। ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে আসছে। তার মধ্যে আপনারা ৪২ হাজার কোটি টাকা অবলোপন করেছেন। ব্যাংকে তো সরকার টাকা দেয় না। ব্যাংকে আমানতকারীদের টাকা। তাদের গচ্ছিত টাকা। সেই টাকা লুটপাট হচ্ছে, বিদেশে পাচার হচ্ছে। সেই ব্যাপারে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী কোনো কিছু উল্লেখ করেননি। কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়, কিভাবে পাচার করা টাকা আনা যায়, খেলাপি ঋণ উদ্ধার করা যায় সেটা নিয়ে কোনো বক্তব্য এই বাজেট বক্তৃতায় নেই।

তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ যদি আমরা উদ্ধার করতে পারতাম তাহলে ভ্যাটের আওতা বাড়ানোর দরকার ছিল না। আবগারি শুল্ক বাড়ানোর দরকার ছিল না। আজকে মানুষের মধ্যে একটা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি বলেন, এই ব্যাংকিং সেক্টরে যে লুটপাট হচ্ছে তারা কারা? এরা কি আপনাদের চেয়ে শক্তিশালী? সরকারের চেয়ে শক্তিশালী? তাদের কেন আপনারা আইনের আওতায় আনছেন না?

তিনি বলেন, বেসিক ব্যাংকের যিনি চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি এখনও ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন না কি কিছুই পায়নি। কিন্তু সারা দেশের মানুষ জানে যে লুটপাট করেছে। আমরা চাই সব টাকা উদ্ধার করে ভ্যাট প্রত্যাহার করা হোক।

অর্থমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, উনাকে তো আইনের আওতায় আনতে হবে। উনাকে তো আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। এই কারণে উনার বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল চার্জ আনা উচিত। উনি এটা কিভাবে প্রস্তাব করেন? এটি নৈতিকতা ও আইনবিরোধী।

ক্যাপিটাল মার্কেট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০১০ সালে শেয়ার মার্কেটকে ধ্বংস করা হয়েছে। বাংলাদেশের স্টক মার্কেট ‘ক্রাশ’ হয়েছে। কিন্তু কারা হাজার হাজার লোককে রাস্তায় বসিয়ে দিয়েছে তা খতিয়ে দেখতে কমিটি প্রতিবেদন দিলেও সেটা কি এমপি হিসেবে আমাদের জানার অধিকার নেই?

জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, বিচিত্র এই অর্থমন্ত্রী, বিচিত্র তার বাজেট। ইব্রাহিম খালেদ কমিটি যে প্রতিবেদন দিয়েছেন তা প্রকাশ করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি। আপনারা মানুষকে কেন বিভ্রান্ত করছেন, কেন প্রতারণা করছেন?

দেশের বিনিয়োগ ও বেকার সমস্যা নিয়েও তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, বাজেট পেশ করার পর মোটা চালের দাম বেড়ে গেছে। আমরা উন্নয়ন দেখছি কিন্তু সুশাসন নেই। সুশাসন না থাকলে মানুষ উন্নয়নের সফল ভোগ করতে পারবেন না।

অর্থ বাণিজ্য