অপ্রদর্শিত অর্থের কর ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব

অপ্রদর্শিত অর্থের কর ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব

অপ্রদর্শিত অর্থ দেশের অর্থনীতির মূলধারায় আনার লক্ষ্যে অর্থাৎ এসব অর্থ সাদা করার ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ করারোপের প্রস্তাব করেছে দেশের বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন।

শনিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কার্যালয়ে প্রাক-বাজেট আলোচনায় দেশের বিভিন্ন চেম্বারের পক্ষ থেকে এমন মন্তব্য করা হয়।

বৈঠকে খুলনা মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (কেএমসিসিআই) সভাপতি মইনুল হুদা বলেন, “দেশে হাজার হাজার কোটি টাকার অপ্রদর্শিত অর্থ রয়েছে। উৎস খোঁজা ও উচ্চ করারোপের কারণে তা দেশের মূল অর্থনীতির বাইরে থেকে যাচ্ছে। এ অর্থ দেশের অর্থনীতিতে আনা হোক তা দেশের বাইরের একটি মহল চায় না। তাই বাজেটের মাধ্যমে অপ্রদর্শিত অর্থ সাদা করার সুযোগ না দিয়ে এসআরও’র মাধ্যমে করা হলে তা দেশের অর্থনীতিতে মঙ্গল বলে আনবে।”

সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (সিসিসিআই) পরিচালক এমএস সেকিল চৌধুরী ‘শুধুমাত্র ব্যবসায়ীদের রাজস্ব আদায়ের মূল লক্ষ্য নির্ধারণ না করে আইনজীবী ও ডাক্তারদের মত যারা অনেক বেশি অর্থ আয় করে তাদের ওপর উচ্চহারে করারোপ’ করার প্রস্তাব করেন।

একই সঙ্গে প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিটেন্সের ওপর একটি নির্দিষ্ট হারে প্রণোদনা দেওয়ার প্রস্তাব করে তিনি বলেন, ‘এতে বিদেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠানো বন্ধ হবে। পাশাপাশি বৈধপথে অর্থাৎ ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে রেমিটেন্স পাঠানোর প্রবণতা বাড়বে। কারণ দেশের অর্থনীতির অপ্রদর্শিত অর্থের মোট ৪৮ শতাংশ বিদেশ থেকে প্রেরিত অর্থ। এভাবে অর্থের প্রবেশ করে বিধিসম্মতভাবে তা আনার ব্যবস্থা করা হলে আগামী অর্থবছরে ১৫ বিলিয়ন ডলার রেমিন্টেন্স যোগ হবে।’

এছাড়া সরকারি কমকর্তাদের বাড়িভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করে তিনি বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া বাড়ানো হলে অফিসে ঘুষ দেওয়া-নেওয়া কমবে, রাস্তায় বস্তা বস্তা টাকা পাওয়া যাবে না। এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরাও অফিস আদালতে তাদের কাজ করায় সুবিধা পাবে।’

যশোর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (জেসিসিআই) সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, ‘আইপিওতে সামান্য ভুলের কারণে বেনাপোল বন্দরে পুরনো গাড়ি আমদানি পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। এতে প্রতি বছর সরকার একশ’ থেকে দেড়শ’ কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।’

এছাড়া ব্যবসায়ী সংগঠনের ওপর থেকে কর পুরোপুরি প্রত্যাহারের আহ্বান জানান তিনি।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সিনিয়র সহ-সভাপতি হায়দার আলী বলেন, “গার্মেন্টস’র মাধ্যমে ভালোই আয় হচ্ছে। কিন্তু এরপরেও আমদানি-রফতানির মধ্যে বড় ব্যবধান রয়েছে। যা প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থের মাধ্যমে সমন্বয় করতে হচ্ছে। তাই ভবিষ্যতে রফতানি বাড়াতে ব্যবসায়ীদের সহায়তা দিতে হবে। কারণ ব্যবসায়ীরা কল-কারখানায় উৎপাদিত পণ্য রফতানির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা না করতে পারলে প্রবাসীদের অর্থের ওপর নির্ভরশীলতা কমবে না।”

মানুষের মধ্য থেকে কর বিষয়ক ভীতি কমানোর জন্য করণীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণেরও আহ্বান জানান হায়দার আলী।

অপরদিকে, শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মোট ১৪টি সুপারিশ আলোচনায় তুলে ধরেন মন্ত্রণালয়ের ডিএস তপন কুমার নাথ।

তিনি বলেন, ‘দেশে উৎপাদন হয় ওইসব পণ্যের ওপর সম্পূর্ণ শুল্ক আরোপের মাধ্যমে দেশীয় পণ্য ও আমদানি পণ্যের মধ্যে নূন্যতম ২০ শতাংশ পার্থক্য সৃষ্টি করা প্রয়োজন।’ এছাড়া কারখানার ভাড়ার ওপর প্রদত্ত ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের সুপারিশ করেন তিনি।

সবশেষে এনবিআর চেয়ারম্যান ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ম্যানুয়াল সিস্টেমে বেশিদূর এগিয়ে যাওয়া সম্ভব না। তাই আমরা এনবিআরকে পুরোপুরি অটোমেশনের কাজে হাত দিয়েছি। আর আগামী ডিসেম্বর নাগাদ এক্ষেত্রে একটি ব্রেকথ্রু দেওয়া সম্ভব হবে।’

এছাড়া ই-পেমেন্টের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘চলতি মাসেই ই-পেমেন্ট চালু করার কথা থাকলেও তা আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ে চালু করা সম্ভব হবে। দেশের মোট ২৬টি ব্যাংকের মাধ্যমে এ কার্যক্রম পরিচালিত হবে। সর্বোপরি এনবিআরের মনিটরিং টিমকে শক্তিশালী করতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’

অর্থ বাণিজ্য