দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে ভবিষ্যৎ পানির চাহিদা পূরণে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াতে হবে। আজকের দিনে একে অপরকে সহযোগিতা আরও জরুরি হয়ে পরেছে।
সোমবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘ট্রান্স-বাউন্ডারি রিভারস ফর আওয়ার সাসটেইনেবল অ্যাডভান্সমেন্ট- টিআরওএসএ’ প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন।
এ সহযোগিতা তরান্বিত করতে আলোচনা ও মানুষে-মানুষে যোগাযোগ বৃদ্ধিতেও গুরুত্ব দেন তারা।
বাংলাদেশে আইইউসিএন, সিএনআরএস এবং নদীপাড়ের মানুষদের অংশীদারিত্বে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে অক্সফাম।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, ঢাকায় নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত জোহান ফ্রিসেল, আইইউসিএনের কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ ইসতিয়াক উদ্দিন আহমেদ, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সদস্য শারমিন মুরশীদসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, প্রকৃতির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষি, শহর এবং শিল্পায়নের বিস্তার এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের কারণে এ অঞ্চলের মানুষের এখনো পানি সুরক্ষা নিশ্চিত হয়নি। পানির অধিকার নিশ্চিত করা দক্ষিণ বং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে একটি ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। পানির ব্যবস্থাপনা এবং সুশাসন কীভাবে করা হবে ও এর প্রবাহ নিয়ে রয়েছে প্রতিবেশীদের মধ্যে উত্তেজনা।
বক্তারা বলেন, এশিয়ার নদীপাড়ের বাড়তে থাকা জনসংখ্যার খাদ্য নিরাপত্তা, জ্বালানি, টেকসই বাস্তুতন্ত্র এবং শিল্প ও গৃহে ব্যবহারের জন্য পানি নিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা আরও জরুরি হয়ে পরেছে। এখানকার নদী অববাহিকায় যে বাস্তুতন্ত্র গড়ে উঠেছে তা এখানকার মানুষ ও দেশের অর্থনীতি বিকাশে ভুমিকা রাখছে। এ নদীগুলোকে ঘিরে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে ও ধর্ম চর্চা শুরু হয়েছে। আর এখানকার মাছ ও কৃষির জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুনাম রয়েছে। এ নদীগুলোর মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে পনিপথের বাণিজ্যের সংযোগ হয়েছে।
পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, নদী অববাহিকার দেশ হিসেবে পানির ন্যয়সংগত অধিকার আদায়ে বাংলাদেশ তার চেষ্টা চালিয়ে যাবে। যা বাংলাদেশ ও অববাহিকার সব মানুষের উন্নয়ন এবং বাস্তুতন্ত্রের জন্য জরুরি। আমরা একত্রে উন্নয়নের জন্য অববাহিকার দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অধিকারের প্রতি সন্মান জানাতে ভাটি অঞ্চলে আমাদের প্রতিবেশীদের আহ্বান জানাই।
সুইডেনের রাষ্ট্রদূত জোহান ফ্রিসেল বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নদী সম্পদের উপর নিয়ন্ত্রণ এবং এর অধিকার নিশ্চিতে এ প্রকল্প কাজ করবে।
আইইউসিএনের কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ ইসতিয়াক উদ্দিন আহমেদ বলেন, অভিন্ন নদীর পানির সুশাসনের সঙ্গে ভৌগোলিক, অর্থনীতি এবং জীবিকা জড়িত। পানির সুশাসনকে ন্যায়সংগত করতে এবং উইন-উইন পরিস্থিতি তৈরি করতে অববাহিকার দেশগুলোকে কিছু নীতি অনুসরণ করতে হবে। কারো কোনো ক্ষতি করা যাবে না, বাস্তুতন্ত্র সম্পূর্ণ রক্ষা করতে হবে এবং সেইসঙ্গে সমাজের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
মানুষের জন্য নদী বিষয়ক একটি মহা পরিকল্পনার প্রতি গুরুত্বআরোপ করেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সদস্য শারমিন মুরশীদ। তিনি বলেন, এ মহা পরিকল্পনায় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নিয়ে কমপক্ষে একটি অভিন্ন অবস্থানে নিয়ে আসতে হবে। যেখানে মতানৈক্যের ঊর্ধ্বে উঠে অঞ্চলের নদীগুলো ভাগাভাগি করতে পারে।
অনুষ্ঠানে আয়োজকরা জানান, পাঁচ বছরের জন্য টিআরওএসএ প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে অভিন্ন নদীর পানি ব্যবস্থাপনায় নীতির উন্নয়ন এবং নদীপাড়ের সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষা করা যেতে পারে। মূলত ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদী অববাহিকাতেই এ প্রকল্প পরিচালনা করা হবে। প্রকল্পটি সরকার, বেসরকারি খাত এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে কাজ করবে। প্রকল্পটিতে অর্থায়ন করছে সুইডেন সরকারের উন্নয়ন সহযোগী সিডা ও থাইল্যান্ড।
এ প্রকল্পের অঞ্চলিক অংশীদাররা হচ্ছে ভারত, নেপাল, বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার। বাংলাদেশ অংশে প্রকল্পটির নামকরণ করা হয়েছে- ‘ট্রান্স-বাউন্ডারি রিভারস ফর আওয়ার সাসটেইনেবল অ্যাডভান্সমেন্ট- টিআরওএসএ।
টিআরওএসএ প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে সুশীল সমাজ ও নদীপাড়ের সম্প্রদায়ের সক্ষমতা আরও শক্তিশালী করা। যাতে তারা অভিন্ন নদীর পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে নিজেদের মতামত দিয়ে আরও জোরালো ভূমিকা রাখতে পারেন।
গবেষণা ও স্থানীয়দের অভিজ্ঞতা দিয়ে প্রকল্পটি একটি দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতে চায়, যা অভিন্ন নদীর পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় প্রভাব বিস্তার করতে পারে বলে জানিয়েছে আয়োজক সূত্র।