২০০৩ বিশ্বকাপের ফাইনালে একই ভুল করেছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলি। টস জিতে ব্যাট করতে আমন্ত্রণ জানান অস্ট্রেলিয়াকে। একই সঙ্গে ম্যাচটাও যেন তিনি তুলে দিলেন রিকি পন্টিংয়ের হাতে। শেষ পর্যন্ত ৩৫৯ রানের বিশাল স্কোরের নিচে চাপা পড়ে বড় ব্যবধানে হারতে হয়েছিল ভারতকে।
ঠিক একই ভুল করলেন বিরাট কোহলি। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে টস জিতে ব্যাট তুলে দিলেন পাকিস্তান অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদের হাতে। একই সঙ্গে যেন ম্যাচটাই তুলে দিলেন তিনি। এ কারণে, অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তী শেন ওয়ার্নও বিরাট কোহলির অধিনায়কত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন।
শেন ওয়ার্নের কাঠগড়ায় কোহলির টস জিতে ফিল্ডিং নেয়ার সঙ্গে বোলিং পরিবর্তন নিয়েও প্রশ্ন তুললেন। লন্ডনের ওভালে ফাইনালে ধারাভাষ্য দেয়ার সময় ওয়ার্ন সরাসরি প্রশ্ন করে বসলেন, ‘কোহলির বোলিং চেঞ্জ দেখে আমার মনে হয়েছে ওর কোন পরিকল্পনাই নেই ফাইনালের। পাকিস্তান ব্যাটসম্যানদের থামানোর কোনও পরিকল্পনা দেখতে পেলাম না। কোহলিকে দেখে মনে হচ্ছে ক্যাপ্টেন হিসেবে ও দিশেহারা হয়ে গেছে।’
রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে টানা বোলিং করানোরও কঠোর সমালোচনা করেছেন ওয়ার্ন। তিনি বলেন, ‘আমি অশ্বিনের ভক্ত; কিন্তু ফাইনালে ওর বোলিং দেখে আমি দারুণ হতাশ। কোনও নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই। কোনও বৈচিত্র নেই বোলিংয়ে। সবচেয়ে বড় কথা অধিনায়ক কোহলি মার খাওয়া অশ্বিনকে কেন টানা বোলিং করাল? অশ্বিনকে বসিয়ে অন্য কোনও পার্টটাইম বোলারকেও দিতে পারত। জানি না কী ঘুরছিল কোহলির মাথায়?’
বোলারদের কারণেই মূলতঃ হারতে হয়েছে ভারতকে। এ কারণে ভারতীয় বোলিংকে দিশাহীন বলছেন ধারাভাষ্যকাররা। সৌরভ গাঙ্গুলি বললেন, ‘অতিরিক্ত কিছু করতে গিয়েই ভারতীয় বোলাররা নিজেদের চাপে ফেলে দিয়েছে। বুমরাকে দেখে মনে হল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল এবং প্রতিপক্ষ পাকিস্তান- এই দুটো চাপ সামলাতে পারল না। জঘন্য বোলিং ভারতের। একমাত্র ভুবনেশ্বর কুমার ছাড়া আর কোনও বোলার পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের আটকে রাখতে পারল না! জানি না কী হল ভারতীয় বোলারদের? সত্যি এত খারাপ বোলিং পারফরমেন্স ভাবা যায় না।’
সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক নাসের হুসেইন বললেন, ‘পাকিস্তান দেখিয়ে দিল, ওদের নিচু চোখে দেখা উচিত হয়নি। এই পাকিস্তান সত্যি চমকে দিল ক্রিকেট বিশ্বকে।’
পাকিস্তান নিয়ে সৌরভের মূল্যায়ন, ‘ভারতের বিপক্ষে এজবাস্টনে প্রথম ম্যাচ হেরে যাওয়ার পর প্রতিটা ম্যাচে পাকিস্তান দুর্দান্ত উন্নতি করেছে। যার প্রমাণ ফাইনাল। দুরন্ত ব্যাটিং। সঙ্গে দুরন্ত বোলিং। দাঁড়াতেই দিল না ভারতকে। মনে রাখতে হবে নবাগত ফাখরের ব্যাটিং। ওকে দেখে কে বলবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ভারতের বিরুদ্ধে ব্যাট করল! ভারতীয় স্পিনারদের বিরুদ্ধে ওর ফুটওয়ার্ক দেখলাম। যা একজন পরিণত ব্যাটসম্যানের ইঙ্গিত দিয়ে রাখল। তেমন বোলিং আমিরের। প্রথম বল থেকেই ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের আক্রমণ করে গেল।’
সুনিল গাভাস্কার বললেন, ‘এত পরিকল্পনাহীন ভারতীয় বোলিং বহুদিন দেখিনি। অশ্বিন-জাদেজা জুটিকে খুঁজে পাওয়া গেল না। বিশ্বের অন্যতম সেরা স্পিনিং জুটিকে ফাখর একাই শেষ করে দিল। এত বাজে বোলিং হলে তখন দলের ব্যাটসম্যানদের ওপর চাপটা স্বাভাবিকভাবেই এসে পড়ে। সেটাই হল। ফাইনালে ৩০০ রানে বোঝা সবসময় বেশ কঠিন হয়ে থাকে। সঙ্গে এই পাকিস্তানি বোলিং। কোনও সন্দেহ নেই পাক বোলিংয়ে যা বৈচিত্র রয়েছে তা পৃথিবীর অন্য কোনও দেশে দেখতে পাওয়া যায় না।’
সাবেক অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক রিকি পন্টিংও মনে করেন ফাইনালে যোগ্য দল হিসেবেই জিতেছে পাকিস্তান। তিনি বলেন, ‘টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচ বাজেভাবে হেরে যাওয়ার পর পাকিস্তান দেখিয়ে দিয়েছে কীভাবে ঘুরে দাঁড়ানো যায়। দেখার মতো, একটা দল যেভাবে প্রতিটি ম্যাচে নিজেদের ছাপিয়ে গেল। না, এমন সচরাচর দেখা যায় না। এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পাকিস্তান জিতলে সেটাই হবে যোগ্য দলের জয়। সত্যি, ভারতীয় বোলিং চোখে দেখা যায় না। এত খারাপ বোলিং ভারতের এই প্রতিযোগিতায় আগে দেখা যায়নি। পাকিস্তান তিন বিভাগেই ভারতকে টেক্কা দিল।’