রাঙামাটি এখন মৃত্যুপুরী। একের পর এক বাড়ছে মরদেহের মিছিল। আজ বৃহস্পতিবার সকালেও নিখোঁজ এক সেনা সদস্যসহ আরও চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবারের পাহাড়ধসের ঘটনায় এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৫৪ জনে দাঁড়িয়েছে। এখনও নিখোঁজ ২০-৩০ জন। চলছে উদ্ধার অভিযান।
জেলা প্রশাসন ও উদ্ধার পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পাহাড়ধসের ঘটনায় গত তিনদিনে চট্টগ্রাম বিভাগে মোট ১৫৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে রাঙামাটিতেই ১১১, বান্দরবানে ছয়, কক্সবাজারে দুই, খাগড়াছড়িতে দুই এবং চট্টগ্রামে ৩৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আবার উদ্ধার তৎপরতা শুরু হয়েছে। প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস যৌথভাবে স্থানীয় লোকজনসহ নিখোঁজদের স্বজনদের নিয়ে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছে।
উদ্ধারকারী দলের ফায়ার সার্ভিসের রাঙামাটির উপ-সহকারী পরিচালক দিদারুল আলম জানান, আহত আর নেই। আহত অবস্থায় উদ্ধার করা অনেককেই রাঙামাটি সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। গুরুতর আহতদের চট্টগ্রাম ও ঢাকায় রেফার করা হয়েছে।
রাঙামাটি সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মংক্যচিং মারমা সাগর জানান, বর্তমানে পাহাড়ধসের ঘটনায় আহত মোট ৪৫ জন তার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
রাঙামাটি রিজিয়নে কর্মরত স্টাফ অফিসার মেজর তানভীর জানান, পাহাড়ধসে আহত ৫ সেনা সদস্য ঢাকার সিএমএইচ`এ চিকিৎসাধীন। তারা হলেন- সৈনিক আজমল (২৮), মোজাম্মেল (৩০), মামুন (২৪), ফিরোজ (২৪) ও সেলিম (২৬)।
তিনি আরও জানান, মঙ্গলবার দুর্যোগে সদরের মানিকছড়ি আর্মি ক্যাম্পের সামনে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে ধসে পড়া মাটি ও গাছ অপসারণ করে রাস্তা সচল করতে ১৫ জনের একদল সেনা সদস্য উদ্ধার কাজে যান। শুরুর পরপরই হঠাৎ পাশের পাহাড় ধসে মাটিচাপা পড়েন তারা। এতে মেজর মো. মাহফুজুল হক, ক্যাপ্টেন মো. তানভীর সালাম শান্ত, কর্পোরাল আজিজুল হক, সৈনিক মো. শাহীন আলম ও মো. আজিজুর রহমান নিহত হয়েছেন।
নিখোঁজের প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার সকালে আজিজুর রহমানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া দুর্ঘটনার দিন ৫ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। অন্যরা অক্ষত অবস্থায় সরে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন। নিহতদের মরদেহ দাফনে নিজ নিজ বাড়ির ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে শিমুলতলী এলাকা থেকে রূপন দত্ত (২০), হোসনে আরা বেগম (৫০), সার্কিট হাউস এলাকা হতে সুলতানা বেগম (৪০) এবং মানিকছড়ি আর্মি ক্যাম্পের নিচ থেকে নিখোঁজ সেনা সদস্য আজিজুর রহমানের (৩০) মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এদিকে স্বজনহারা মানুষের আহাজারি ও ক্ষতিগ্রস্ত দুর্গত মানুষের আর্তনাদ ভারি করে তুলেছে আশপাশের পরিবেশ। থামছে না তাদের বুকফাটা কান্না। সবকিছু হারিয়ে তাদের এখন চরম মানবেতর জীবন। বর্তমানে দুর্গত বহু মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। বিদ্যুৎ, পানিসহ নানা সংকটে চরম ভোগান্তির মধ্যে দুর্গতরা। সরকারিভাবে দুর্গতদের ত্রাণকার্যক্রম চলছে। প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ ত্রাণ তৎপরতা চালাচ্ছেন।
প্রশাসন থেকে শহরে মোট ১৬টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে প্রতিটিতে শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানান মনিটরিং কর্মকর্তারা।
শহরের ভেদভেদীর বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় উপ-আঞ্চলিক কেন্দ্রের উপ-পরিচালক হাবিবুর রহমান বলেন, তার কেন্দ্রে দেড় শতাধিক পরিবারের প্রায় ৫০০ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু বিদ্যুৎ ও পানির সংকটে পরিবেশ নাজুক হয়ে উঠেছে। এতে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন আশ্রিতরা। এ সংকট দ্রুত মোকাবেলা করা দরকার। তা না হলে পরিবেশ আরও খারাপ হয়ে উঠবে।