প্রস্তাবিত বাজেটে পরিববর্তন এনে তা জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা (এমপি)। তারা বলেছেন, বাজেট বড় হলেই কৃতিত্বের কিছু নেই। বাজেটকে বাস্তবায়ন করতে হবে। এবারের বাজেটে অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে। তাই প্রস্তাবিত বাজেট পুনর্বিবেচনা করা হোক।
বুধবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটর উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন। তবে প্রস্তাবিত বাজেটকে গণমুখী ও জনকল্যাণকর বলে দাবি করেন সরকারি দলের এমপিরা। তারা বলেন, এবারের বাজেট বাস্তবায়ন করা গেলে দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে সফলভাবে হাঁটবে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে মাগুরা-২ আসনের এমপি এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এবারের বাজেট বাস্তবায়ন হবে। ক্রীড়াক্ষেত্রসহ সবদিক দিয়ে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ক্রীড়া শুধু একটি জাতির জন্য শারীরিক বিষয় নয় একটি জাতির ভাবমূর্তি তুলে ধরতে ক্রীড়ার অবদান বেশি। ক্রীড়া ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন আর অজানা আর অচেনা নয়। এ অবস্থানে আসার পেছনে প্রধানমন্ত্রীর অবদান সবচেয়ে বেশি। কারণ তিনি একজন ক্রীড়ামোদী মানুষ। বাংলাদেশ যে পারে এবং সেটা আমরা করে দেখিয়েছি।
শরীয়তপুরের এমপি বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, অর্থমন্ত্রী জাতির জন্য আশা জাগানীয়া বাজেট দিয়েছেন। বিভিন্ন শ্রেণী- পেশার মানুষ নানা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। সবচেয়ে বেশি আশ্চর্য হয়েছি খালেদা জিয়ার মন্তব্যে। তিনি বলেছেন এটা লুটপাটের বাজেট।
‘২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত খালেদা জিয়া ও তার পরিবার এই বাংলাদেশকে লুটপাটের রাজত্ব বানিয়েছিলেন। এসব কারণে খালেদা জিয়াকে জনগণ আজ আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন খালেদা জিয়া ষড়যন্ত্র করছেন। জাতিকে পেছন দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।’
জাতীয় পার্টির এমপি অধ্যাপক নুরুল ইসলাম মিলন বলেন, অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় জাতীয় পার্টি এখন ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী দল। দেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে বলা হচ্ছে এজন্য অবদান রয়েছে জাতীয় পার্টির। বাজেট যত বড়ই হোক তা যদি বাস্তবায়ন করা না যায় তাহলে জনগণ আস্থা হারাবে। ঘাটতি বাজেট বাস্তবায়ন করা তো আরও কঠিন।
‘অর্থমন্ত্রী দেশের সকল নাগরিকের উপর ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছেন। আজ যে শিশুটি জন্ম নিলো তার মাথায়ও ঋণের বোঝা রয়েছে। এই বাজেটে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ খুশি হতে পারেনি।’
তবে সিরাজগঞ্জের এমপি তানভীর ইমাম বলেন, বিগত দিনে যারা মানুষ হত্যা করেছে সেই বিএনপি-জামায়াত জোটই এবারের বাজেটের একমাত্র সমালোচক। বিভিন্ন পদক্ষেপে এবারের বাজেট জনমুখী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর বরাদ্দ বাড়ায় সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়বে। বাজেটের কারণে মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। সামনে নির্বাচন। তাই নির্বাচনী আসন ভিত্তিক উন্নয়নে আরও ৫০ কোটি টাকা করে বাড়ানোর প্রস্তাব করছি।
জাসদের এমপি শিরিন আখতার বলেন, ১৪ দল আর সরকার একসঙ্গে দু’টি যুদ্ধ করছে। একটি সংবিধান সম্মত রাখার যুদ্ধ আরেকটি অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য যুদ্ধ। আমরা মনে করি, এবারের বাজেটকে অনেক ভালো বলা যায়। জাসদ বারবারই প্রগতিশীল কর নীতির কথা বলেছে। এবারের বাজেটে গরীবদের জন্য আরও সহনীয় করা যেতে পারে। কৃষিখাতে গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
সিলেটের এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের গার্মেন্টস এখনও দুই নম্বরে রয়েছে। কিন্তু আপনারা কি গার্মেন্টসের প্রকৃত অবস্থা জানেন। কোন পর্যায়ে যাচ্ছে সেটা? ইথিওপিয়া আজ আমাদের ব্যবসা নিয়ে যাচ্ছে। তাই এ শিল্প সম্পর্কে নতুন করে আমাদের ভাবতে হবে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের সমালোচনা করে সিরাজগঞ্জ-২ আসনের এমপি হাবিবে মিল্লাত বলেন, নির্বাচন দেড় বছর বাকি। কিছিু মিডিয়ায় এখন শুরু হয়েছে চরিত্র হননের কাজ। টাকা পয়সার মাধ্যমে এটা করা হচ্ছে। আমাদের অবশ্যই সাবধান হতে হবে। এ বিষয়ে সবাইকে দৃষ্টি রাখার অনুরোধ করছি। গত কয়েক দিনে একটি পত্রিকায় টানা ৫ দিন এমপিদের চরিত্র হননের কাজ করা হচ্ছে।
সিলেট-২ আসনের জাতীয় পার্টি দলীয় এমপি ইয়াহইয়া চৌধুরী বলেন,বাজেট বড় হলেই কৃতিত্বের কিছু নেই। বাজেটকে বাস্তবায়ন করতে হবে। এবারের বাজেটে ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে। তাই এবারের বাজেট পুনর্বিবেচনা করা হোক। পরিমার্জন করা হোক।
আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন-বরিশাল-২ আসনের এমপি তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুস, খুলনা-২ এর মিজানুর রহমান,যশোর-৫ এর স্বপন ভট্টাচার্য, অ্যাডভোকেট নাভানা আক্তার, নড়াইল-২ এর শেখ হাফিজুর রহমান, কুষ্টিয়া-১ মো. রেজাউল হক চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম-১৪ এর মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ।