প্রবল বর্ষণে রাঙামাটিতে পাহাড় ধসের ঘটনায় বুধবার সকালে ফের উদ্ধার অভিযান শুরু হয়েছে। এর আগে রাতে কাজ করার উপযোগী সরঞ্জাম না থাকায় মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর উদ্ধার অভিযান স্থগিত করা হয়। রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মানজুরুল মান্নান এ তথ্য জানিয়েছেন।
গত কয়েকদিনে টানা বর্ষণে রাঙামাটির বিভিন্ন উপজেলায় পাহাড় ধসে কমপক্ষে ৯৮ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া বান্দরবানে সাতজন ও চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে চার সেনা সদস্য রয়েছেন। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সোমবার রাতে ও মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি ও বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকায় এ পাহাড় ধসের এ ঘটনা ঘটে।
পাহাড় ধসের ঘটনায় প্রাণহানির পাশাপাশি রাঙামাটিতে বিদ্যুৎ সরবরাহও বন্ধ রয়েছে। তাছাড়া জেলার প্রায় ৩০ কিলোমিটার রাস্তা সম্পূর্ণরূপে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ পার্শ্ববর্তী সব জেলার সঙ্গেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত পাহাড় ধসে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত ১৩২ জনের মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
রাঙামাটিতে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ৫০ জনকে। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর। রাঙামাটি সদর, কাউখালী, কাপ্তাই ও বিলাইছড়ি উপজেলায় পাহাড়ধসে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে।
জাগো নিউজের রাঙামাটি প্রতিনিধি জানান, টানা বর্ষণে পাহাড় ধসে রাঙামাটিতে সেনা কর্মকর্তা ও সদস্যসহ ৯৮ জন নিহত হয়েছেন।
জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সাঈদ তরিকুল হাসান মানিকছড়ির ঘটনাস্থলে থাকা উদ্ধারকর্মীদের বরাত দিয়ে জানান, প্রবল বর্ষণে পাহাড়ধসে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। আজ সকালে সেই মাটি সরাতে কাজ করছিলেন সেনাসদস্যরা। তখন ওপর থেকে পাহাড়ধসে সেনাসদস্যদের ওপর পড়ে। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে।
নিহত সেনা সদস্যরা হলেন, মানিকগঞ্জের সিংড়া উপজেলার তালেবপুর ইউনিয়নের ইরতা গ্রামের মোজাম্মেল হোসেনের ছেলে মেজর মোহাম্মদ মাহফুজুল হক, পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার ক্যাপ্টেন মো. তানভীর সালাম শান্ত, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার কর্পোরাল মোহাম্মদ আজিজুল হক ও বগুড়ার আদমদিঘীর সৈনিক মো. শাহিন আলম।
সেনা সদস্য হতাহত হওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ভোরে রাঙামাটির মানিকছড়িতে একটি পাহাড় ধসে মাটি ও গাছ পড়ে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়ক বন্ধ হয়ে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে রাঙামাটি জোন সদরের নির্দেশে মানিকছড়ি আর্মি ক্যাম্প থেকে সেনাবাহিনীর একটি দল উক্ত সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে। উদ্ধার কার্যক্রম চলার সময় আনুমানিক বেলা ১১টায় উদ্ধার কার্যস্থল সংলগ্ন পাহাড়ের একটি বড় অংশ উদ্ধারকারী দলের ওপর ধসে পড়লে তারা মূল সড়ক থেকে ৩০ ফুট নিচে পড়ে যান। পরে একই ক্যাম্প থেকে আরও একটি উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুজন সেনা কর্মকর্তাসহ চারজন সেনাসদস্যকে নিহত এবং ১০ জন সেনাসদস্যকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করেন।
পাহাড়ধসে কাউখালী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ২৮ জন মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন কাউখালীর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল করিম ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) কমল বরণ সাহা। তবে নিহতদের পরিচয় জানাতে পারেননি তারা।
এদিকে কাপ্তাই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধসে ১৫ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দিলদার হোসেন। এছাড়া বিলাইছড়ি ও জুড়াছড়ি উপজেলায় পাহাড় ধসে পাঁচজন নিহত হয়েছেন বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। এখনও উদ্ধার কাজ চলছে। তবে রাতে কাজ ধীর গতিতে এগোচ্ছে। নিখোঁজ আছেন আরও অনেকে।