পেনশন ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে বিশ্বব্যাংক-অর্থ মন্ত্রণালয় বৈঠক কাল

পেনশন ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে বিশ্বব্যাংক-অর্থ মন্ত্রণালয় বৈঠক কাল

পেনশন ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় ভারত ও পাকিস্তানের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চাচ্ছে বাংলাদেশ। এ জন্য বুধবার দুপুর আড়াইটায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করবে অর্থ বিভাগ।

এই বৈঠকে ভারত ও পাকিস্তানের পেনশন ব্যবস্থার ওপর একটি অভিজ্ঞতাপত্র উপস্থাপন করবে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধিদল। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য প্রস্তাবিত ‘সার্বজনীন পেনশন’ পদ্ধতির কাজ এগিয়ে চলছে।২০১৮ সালের দিকে এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হতে পারে। এ বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্যই বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান চাকরিজীবীদের জন্য এ ব্যবস্থা প্রযোজ্য হবে না। যে বছর থেকে এটি কার্যকর হবে, তারপর যোগদানকারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে এ পদ্ধতি। অংশীদারিত্বমূলক এ ব্যবস্থায় চাকরিজীবী এবং নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ উভয়েরই অবদান থাকবে। পেনশন খাতে ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরতে এবং স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা করতে বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থার ব্যাপক সংস্কারের অংশ হিসেবে এ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, উদ্যোগটি ভালো, তবে বাস্তবায়ন কঠিন হবে। তবে প্রস্তাবিত পেনশন ব্যবস্থার বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা না থাকায় সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে সংশয়।

সূত্র জানায়, বর্তমানে সরকারি চাকরিজীবীর সংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ, যা কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর মাত্র ৫ শতাংশ। তারা পেনশন সুবিধা পান। অন্যদিকে, বেসরকারি খাতের ৯৫ শতাংশের মধ্যে মাত্র ৮ শতাংশ আনুষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত রয়েছেন। তাদের কোনো পেনশন সুবিধা নেই। দেশে গড় আয়ু ও প্রবীণদের সংখ্যা বাড়ার কারণে সামাজিকভাবে নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকি বেড়েছে। এ ঝুঁকি মোকাবেলা ও সমতা বিধান করা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এ জন্যই সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে।

সূত্র জানিয়েছে, প্রস্তাবিত পেনশন তহবিল হবে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে। অর্থাৎ চাকরিজীবী ও নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে এ তহবিলে অর্থ দেবে। এর পরিমাণ হতে পারে চাকরিজীবীর মূল বেতনের শতকরা ১০ ভাগ। নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষও সমপরিমাণ টাকা দেবে। সরকারি ও বেসরকারি খাতে একই নিয়মে তহবিল গঠন করা হবে।

প্রস্তাবিত পেনশন স্কিমের আওতায় সরকারি চাকরিজীবীদের বয়স হবে ৬০ বছর। আর বেসরকারি খাতের জন্য ৬৫ বছর। নির্ধারিত সময়ে চাকরি শেষে অর্ধেক পেনশনের টাকা এককালীন তুলতে পারবেন। বাকি টাকা তহবিলে থাকবে। এ তহবিল পরিচালনার জন্য আলাদা কোম্পানি গঠন করা হবে। তারা লাভজনক খাতে তহবিলের অর্থ বিনিয়োগ করবে। বিনিয়োগ সুরক্ষাও দেওয়া হবে। এ থেকে যে মুনাফা আসবে, তার অংশ মাসে মাসে পাবেন সুবিধাভোগীরা। পেনশনভোগীদের স্মার্টকার্ড দেওয়া হবে। প্রস্তাবিত পেনশন স্কিমে ৫ থেকে ১০ শতাংশ হারে বার্ষিক ইনক্রিমেন্টের সুবিধা থাকবে।

সূত্র আরও জানায়, সার্বজনীন পেনশন পদ্ধতির আওতায় বেসরকারি পর্যায়ে প্রাথমিকভাবে বড় বড় করপোরেট হাউস, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে কর্মরত চাকরিজীবীদের আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য খাতের প্রতিষ্ঠানকেও আনা হবে।

এ উদ্যোগ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, সার্বজনীন পেনশন পদ্ধতির উদ্যোগ ভালো। পৃথিবীর অনেক দেশেই এ ব্যবস্থা চালু রয়েছে। এতে সরকারি-বেসরকারি পেনশনভোগীরা উপকৃত হবেন। সরকারের আর্থিক চাপ কমবে। ফলে এখানে যে অর্থ সাশ্রয় হবে, তা উন্নয়ন খাতে ব্যয় করা যাবে। তবে সরকারি খাতে সহজ হলেও বেসরকারি খাতে এটির বাস্তবায়ন কঠিন হবে বলে মনে করেন তিনি। কারণ, বেসরকারি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করতে হবে সরকারের। তারা রাজি না হলে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তা ছাড়া বেসরকারি পর্যায়ে পেনশন তহবিল পরিচালনা করাও কঠিন হবে।

এর আগে গত ১ জুন প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানিয়েছেন সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ‘সার্বজনীন পেনশন’ ব্যবস্থা চালু করা হবে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারি পেনশনভোগীরা দেশের সমগ্র জনগণের একটি ক্ষুদ্রাংশ মাত্র। তাই সরকারি কর্মচারীদের পাশাপাশি সবার জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় অংশগ্রহণমূলক সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুকরণে আমরা কাজ করছি।’

‘আমাদের সামগ্রিক কর্মকাণ্ডের অন্তর্নিহিত লক্ষ্য বাংলাদেশকে একটি কল্যাণ-রাষ্ট্রে রূপান্তর করা। প্রস্তাবিত বাজেটে পেনশন ও গ্র্যাচুইটি খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৯ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা।’

অর্থ বাণিজ্য