যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে কারাবন্দী বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে যেসব সাক্ষী আছেন তাদের ভয়ভীতি প্রদানকারীদের ‘জিরো টলারেন্স’ দেখানো হবে বলে জানিয়েছেন মানবতাবিরোধী আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত ও প্রসিকিউশন টিমের সদস্যরা।
একইসঙ্গে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের সপক্ষে পাওয়া তথ্যপ্রমাণ নিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তারা সন্তুষ্ট এবং প্রসিকিউশন টিমের সদস্যরা মামলা পরিচালনায় আত্মবিশ্বাসী বলে তারা জানিয়েছেন।
শনিবার বিকেলে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত ও প্রসিকিউশন টিমের সদস্যরা এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন ছিল, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেয়া ৫৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য প্রত্যাহারে বাধ্য করা হচ্ছে। তাদের কাছ থেকে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেয়া হচ্ছে। বিষয়টি ট্রাইব্যুনালের জানা আছে কিনা?
এ প্রসঙ্গে তদন্ত টিমের সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান বলেন, ‘আমরাও এ ধরনের একটি গুজব শুনেছি যে, ৫৪ জন সাক্ষীকে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত দলের কাছে দেয়া সাক্ষ্য জোরপূর্বক প্রত্যাহারে বাধ্য করা হচ্ছে। আমরা মনে করি, এটা চলমান বিচারকে ভণ্ডুল করার ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রের অংশ। তবে এ ষড়যন্ত্র সফল হবেনা।’
একই প্রসঙ্গে তদন্ত টিমের জেষ্ঠ্য সদস্য সানাউল হক বলেন, ‘সাক্ষীদের কেউ ভয়ভীতি দেখালে তার প্রতি আমরা জিরো টলারেন্স দেখাব। ট্রাইব্যুনালের আইনেই এ ব্যাপারে যথেষ্ট সুযোগ আছে। আমরা কঠোরভাবে আইনের প্রয়োগ করতে বাধ্য হব।’
একই প্রসঙ্গে প্রসিকিউশন টিমের সদস্য অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। কেউ কেউ এ ধরনের কাজ করার চেষ্টা করছেন বলে আমাদের কাছে খবর আছে। আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, ‘যদি কেউ এমন করে থাকেন তবে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে দেলাওয়ার হোসাইন সাইদীর মামলায় বিভিন্ন সময় ট্রাইব্যুনালের অসন্তোষ প্রকাশ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সানাউল হক বলেন, ‘সাইদীর মামলা ছিল আমাদের প্রথম মামলা। যেহেতু প্রথম মামলা তাই সব পক্ষেরই পরিপূর্ণতার কিছুটা ঘাটতি ছিল। তবে এখন আমাদের মধ্যে পরিপক্কতা এসেছে। আশা করি ভুলভ্রান্তি আর হবেনা।’
সালাহউদ্দিন কাদেরের মামলা পরিচালনায় ট্রাইব্যুনালের প্রস্তুতি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘বিগত দেড় বছরের কর্মকাণ্ড এবং সাইদী সাহেবের মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে আমাদের বেশকিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে। গত দেড় বছর আমাদের বেশকিছু সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে কাজ করতে হয়েছে। তবে দ্বিতীয় মামলা হিসেবে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলা নিয়ে আমরা কনফিডেণ্ট। আমরা এ মামলা পরিচালনায় পুরোপুরি প্রস্তুত।’
একই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আগামী ২৯ এপ্রিল থেকে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হচ্ছে। চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেয়ার জন্য আমরা দু’দিন ধরে চট্টগ্রামে অবস্থান করে সর্বস্তরের নাগরিক ও নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলেছি।’
দ্রুততম সময়ের মধ্যে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম শেষ করতে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত ও প্রসিকিউশন টিমের সদস্যরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলে জানান অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত।
সানাউল হক খান বলেন, ‘এ পর্যন্ত আটজন যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে আমরা ট্রাইব্যুনালে প্রতিবেদন দিয়েছি। আরও ১২টি মামলা তদন্তাধীন আছে। প্রত্যেক মামলার সাক্ষীদের সুরক্ষার দায়িত্ব আমাদের। তাদের কেউ ভয়ভীতি দেখালে, হুমকি দিলে সেটা মেনে নেয়া হবেনা।’
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার রাতে মানবতাবিরোধী আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত দলের প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি টিম চট্টগ্রামে আসে।
বাকি পাঁচ সদস্য হলেন, প্রসিকিউশন টিমের দু’সদস্য অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত ও অ্যাডভোকেট জিয়াদ আল মালুম, তদন্ত দলের সদস্য সানাউল হক, নূরুল ইসলাম ও হরি দেবনাথ।
রোববার সকালে টিমের চার সদস্য চট্টগ্রাম ত্যাগ করবেন। বাকি দু’সদস্য চট্টগ্রামে অপর কয়েকজন অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীর বিষয়ে তদন্ত করবেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে।