পুলিশের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত সদস্য যাতে একসঙ্গে ছুটিতে না যান সে বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সংশ্লিষ্ট থানাগুলোতে নির্দেশনা দিয়েছে। একই সঙ্গে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) সংশ্লিষ্ট এলাকার বাইরে যেতে উপ-কমিশনারের (ডিসি) অনুমতি নিতে বলা হয়েছে।
নির্দেশনায় পুলিশ সদস্যদের বাইরের কারও দেয়া খাবার গ্রহণ না করার নিশ্চয়তা বিধানের ওপরও গুরুত্বারোপ করেছেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।
সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এটির অনুলিপি ডিএমপির সকল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি), সকল বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি), ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারদের পাঠানো হয়েছে।
গত কয়েক মাসের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় ডিএমপি এ নির্দেশনা জারি করে।
ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে- প্রত্যেক থানায় কমপক্ষে তিনটি সেন্ট্রি পোস্ট স্থাপন এবং রাতে ডাবল সেন্ট্রি ডিউটিতে রাখা। থানায় ও পুলিশ ফাঁড়িতে সেন্ট্রিদের সতর্ক অবস্থান এবং তাদের অস্ত্র ও গুলি নিজ নিজ হেফাজতে রাখা।
নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রত্যেক থানায় কমপক্ষে তিনটি সেন্ট্রি পোস্ট নির্মাণ করা এবং রাতে ডাবল সেন্ট্রি ডিউটিতে রাখা। থানায় ও পুলিশ ফাঁড়িতে সেন্ট্রিরা সতর্ক অবস্থানে থাকবেন এবং তাদের অস্ত্র ও গুলি নিজ নিজ হেফাজতে রাখবেন। থানার গেটে প্রবেশের সময় একজন অফিসার নিরাপদ দূরত্বে থাকবেন এবং আরেকজন অফিসার অনগার্ড (অস্ত্র তাক করে) পজিশনে থাকবেন।
কমিশনারের নির্দেশনা অনুযায়ী একটি চেকপোস্টে কমপক্ষে পাঁচজন পুলিশ কর্মকর্তা থাকবেন যাদের মধ্যে তিনজন অনগার্ড অবস্থায় এবং বাকি দু’জন তল্লাশির কাজ করবেন। বিভাগ অনুসারে প্রতিদিন রাতে পুলিশের একজন ডিসি অথবা অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) অথবা সহকারী কমিশনার (এসি) সারা রাত এলাকার টহল ডিউটি তদারকি করবেন।
নির্দেশনার শুরুতে ডিএমপি কমিশনার বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটিয়ে জনজীবনে অস্থিরতা সৃষ্টিসহ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার জন্য একটি কুচক্রী মহল অপতৎপরতায় লিপ্ত। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে চরমপন্থী, ধর্মীয় জঙ্গিবাদ ও সংগঠিত সন্ত্রাসী চক্রের অপতৎপরতা ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সন্ত্রাসী চক্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র করায়ত্তের মাধ্যমে একদিকে নিজেদের সামর্থ্য বৃদ্ধি অপরদিকে জনমনে নিরাপত্তার অভাব বোধ সৃষ্টি করতে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টের ভয়াবহ হামলা পুলিশ দক্ষতার সঙ্গে মোকাবেলা করেছে। বিট পুলিশিং ও ভাড়াটিয়া তথ্য সংগ্রহের জন্য ডিএমপির নেয়া যুগান্তকারী পদক্ষেপ আজ সামাজিক আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। ফলশ্রুতিতে কল্যাণপুর, রূপনগর, আজিমপুরসহ ঢাকার পার্শ্ববর্তী কয়েকটি অঞ্চলেও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ডিএমপি ইতিহাসের সফল অভিযান পরিচালনা করেছে।
সময়ের আবর্তনে জঙ্গিদের বিচ্ছিন্ন গ্রুপগুলো পুনরায় সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে মর্মে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে প্রতীয়মান হচ্ছে। গাজীপুরে মুফতি হান্নানের প্রিজন ভ্যানে জঙ্গি হামলা, কুমিল্লায় ঢাকাগামী বাস হতে জঙ্গি আটক, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থানা এলাকায় জঙ্গি আস্তানা আবিষ্কার এবং আটক জঙ্গিদের নিকট থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ধারণা করা হচ্ছে, জঙ্গিরা আবারও সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। পুনরায় তারা বড় ধরনের কোনো হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ডিএমপির বিভিন্ন থানা ও ইউনিটের নিরাপত্তা জোরদারসহ পুলিশ পেট্রোল পার্টির অস্ত্র ও গোলাবারুদ মজুদের অনুরোধ করেন কমিশনার।
একই সঙ্গে থানায় উচ্চ রেজ্যুলেশন সম্বলিত সিসিটিভি ক্যামেরা সংযোজন, থানার অস্ত্রাগার ও ওয়্যারলেসের নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি রাত ১২টার পর থানায় কোনো দর্শনার্থী প্রবেশের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনা করে তল্লাশি ও সতর্কতার মাধ্যমে থানায় প্রবেশ করতে দিতে বলা হয়েছে।
অস্ত্র গোলাবারুদ ইস্যু ও অস্ত্রাগারের নিরাপত্তা
ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশনা অনুযায়ী, থানার অস্ত্রাগারের চাবি থানার ডিউটি অফিসারের কাছে থাকবে। থানার এলার্ম ঘণ্টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে থানায় উপস্থিত ইন্সপেক্টর (তদন্ত/অপারেশন) অথবা ডিউটি অফিসার চাবিসহ অস্ত্রাগারের সামনে উপস্থিত হবেন এবং সকল অফিসার/ফোর্সকে অস্ত্র গোলাবারুদ সরবরাহ নিশ্চিত করবেন। অতঃপর ডিউটি অফিসার নিজে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রসহ অস্ত্রাগারের দরজায় অবস্থান করবেন।
থানার নিরাপত্তার বিষয়ে জারি করা নির্দেশনার বিষয়ে ডিএমপির দুই থানার ওসির সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, আগেও তারা এ ধরনের নির্দেশনা পেয়েছেন। কমিশনারের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা ইতোমধ্যে অধস্তন কর্মকর্তাদের ব্রিফ করেছেন। নির্দেশনা অনুযায়ী সব রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানান তারা।