নারী-পুরুষের গুরুত্বপূর্ণ গুণ ও বিধান পড়া হবে আজকের তারাবিতে

নারী-পুরুষের গুরুত্বপূর্ণ গুণ ও বিধান পড়া হবে আজকের তারাবিতে

আজ রমজানের ১৫তম তারাবিহ অনুষ্ঠিত হবে। আজকের তারাবিতে সুরা মুমিনুন, সুরা নূর ও সুরা ফুরকান এর ২০নং আয়াত পর্যন্ত পড়া হবে। সে সঙ্গে ১৮তম পারার তেলাওয়াত শেষ হবে আজ। আজকের তারাবিতে পঠিত সুরাগুলোর আলোচ্য বিষয়গুলো বিবরণ তুলে ধরা হলো-

সুরা মুমিনুন
মুমিনগণের বৈশিষ্ট্য সম্বলিত সুরা মুমিনুন মক্কায় নাজিল হয়েছে। এ সুরায় মুমিনগণের যে বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচিত হয়েছে তা ঈমানেরও গুরুত্বপূর্ণ শাখা। এ কারণেই এ সুরাটিকে সুরা মুমিনুন হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে। সুরাটি ৬টি রুকু এবং ১১৮ আয়াত রয়েছে।

এ সুরাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুরা। যে কারণে সুরাটি নাজিলের পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিবলামুখী হয়ে দু’হাত তুলে দোয়া করেন-
‘হে আল্লাহ! আমাদেরকে অধিক পরিমাণে দাও, আমাদেরকে কম দিও না। আমাদেরকে সম্মানিত করো, অপমানিত কর না। আমাদেরকে নিয়ামাত দান কর, বঞ্চিত কর না। অন্যদের ওপর আমাদের পছন্দ কর, আমাদের ওপর অন্যদের পছন্দ কর না। আমাদের প্রতি তুমি সন্তুষ্ট থাক, আর আমাদেরকে খুশি করে দাও!’

 

অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘আমার প্রতি এমন দশটি আয়াত নাজিল হয়েছে, যে ব্যক্তি এ দশটি আয়াতে বর্ণিত গুণাবলী অর্জন করলো, সে জান্নাতি হয়ে গেলো।’ আর এ আয়াতগুলো হলো সুরা মুমিনুনের প্রথম দশটি আয়াত।

সুরা মুমিনুনের আলোচ্যসূচিগুলো হলো-
>> মানুষ সৃষ্টির শেষ স্তর অর্থাৎ রূহ ও জীবন সৃষ্টির প্রসঙ্গ;

>> মানুষের জন্য অতুলনীয় পানি সরবরাহের প্রাকৃতিক ব্যবস্থা;

>> মক্কাবাসীর ওপর দুর্ভিক্ষের আজাব বিশ্বনবির দোয়ায় তা বিদূরিত হওয়া;

>> পরকালের মুমিন ও কাফিরের অবস্থার পার্থক্য প্রসঙ্গ।

সুরা নূর
সুরা নূর মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে। এ সুরায় ৯টি রুকু এবং ৬৪ আয়াত রয়েছে। এ সুরায় আল্লাহ তাআলা মানুষের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিধি-বিধান, শাসন-শৃঙ্খলা এবং তাওহিদের বর্ণনা করা হয়েছে। বিশেষ করে চারিত্রিক ও নৈতিক মানোন্নয়নের ওপর এ সুরায় গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

সাঈদ ইবনে মনসুর, ইবনুল মুনজির, বাইহাকি মুজাহিদ রাহমাতুল্লাহি আলাইহির সূত্রে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা পুরুষদের সুরা মায়িদা শেখাও, আর তোমাদের স্ত্রীদেরকে সুরা নূর শেখাও।

তাছাড়া সুরা নূরের বিশেষত্বের কারণে হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলতেন, ‘তোমরা স্ত্রীলোকদেরকে সুরা নূর শিক্ষা দাও।’

সুরা নূরের মূল বক্তব্য ও আলোচ্যসূচিগুলো হলো-
>> এ সুরায় ব্যভিচারের শাস্তি বর্ণনা এসেছে;

>> ব্যভিচারের অপবাদের শাস্তির ঘোষণা এসেছে। মুনাফিকরা উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহার বিরুদ্ধে অপবাদ দিয়েছিল, এ সুরায় তাদের শাস্তির ঘোষণা করা হয়েছে;

>> মহসিনাত তথা সৎচরিত্রবান মহিলাদের পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে;

>> হজরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বৈশিষ্ট্য;

>> সাহাবায়ে কেরামকে উত্তম চরিত্রের শিক্ষাদান;

>> পর্দার বিধানের ব্যতিক্রমী আলাচনা;

>> নারীর আওয়াজের বিধান;

>> তাওহিদের বিবরণ ও আখিরাতের স্মরণের তাগিদের মাধ্যমে এ সুরা সমাপ্ত করা হয়েছে।

সুরা ফুরকান (আয়াত : ১-২০)
সুরা ফুরকান ৬ রুকুর ৭৭ আয়াত বিশিষ্ট। সুরা ফুরকান হিজরতের পূর্বে এমন সময় মক্কায় নাজিল হয় যখন আরবের অবিশ্বাসীরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সাহাবায়ে কেরামের ওপর সীমাহীন নির্যাতন করছিল।

সে সময়টিতে আরবের লোকেরা ছিল গোমরাহী অন্ধকারে আচ্ছন্ন, অন্যায়-অনাচার, জুলুম-অত্যাচার এক কথায় যাবতীয় পাপাচারে লিপ্ত। তারা এ কথাটি বিশ্বাস করতে পারছিল না যে, আল্লাহ তাআলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি তাঁর বাণী নাজিল করেছেন, যিনি চল্লিশটি বসন্ত তাদের মাঝেই অতিবাহিত করেছেন।

হক্ব ও বাতিল সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে এ সুরায় এবং সত্য ও অসত্যের মধ্যে বিশেষভাবে পার্থক্য দেখিয়ে দেয়া হয়েছে। তাই এ সুরার নামকরণ করা হয়েছে ফুরকান।

তাওহিদ, রিসালাত ও কিয়ামাত সম্পর্কিত বিস্তারিত বিষয়ের আলোচনার পাশাপাশি যার প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়তকে অস্বীকার করতো, তাদের যাবতীয় সন্দেহ-সংশয়ের খণ্ডন করা হয়েছে এ সুরায়।

সুরা ফুরকানের প্রথম ২০ আয়াতের প্রত্যেক সৃষ্ট বস্তুর বিশেষ রহস্য এবং তার আকার, গঠন, প্রতিক্রিয়া ও বৈশিষ্ট্য আলোচিত হয়েছে। তাছাড়া মানব সমাজের অর্থনৈতিক সাম্যের ব্যাপারে আলোচিত হয়েছে।

সুতরাং আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনের এ গুরুত্বপূর্ণ সুরাগুলো বুঝে পড়ার এবং তাঁর ওপর আমল করার পাশাপাশি নিজেদের আকিদা-বিশ্বাসকে শিরকমুক্ত রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ইসলামী জগত