“যে ভিশন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এনআরবি ব্যাংকের অনুমতি দিয়েছেন তার যথাযথ বাস্তবায়ন করতে বদ্ধপরিকর এনআরবি ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদ। এনআরবি ব্যাংক প্রবাসের ক্রেডিট রিপোর্টের ভিত্তিতে সহজ শর্তে প্রবাসীদের ঋণ দেবে ।
এছাড়া প্রবাসে বসেই অনলাইনে একাউন্ট পরিচালনার সুযোগ থাকবে এনআরবি ব্যাংকে।
কেননা এ ব্যাংক শুধু প্রবাসীদের সার্বিক কল্যাণের জন্যেই নয়- এটি হচ্ছে প্রবাসীদের বহুদিনের প্রত্যাশার একটি স্বীকৃতি। কষ্টার্জিত অর্থের প্রবাসীদের নিরাপদ বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও অন্যতম একটি অবলম্বন হিসেবে শিগগিরই কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনে এনআরবি ব্যাংক সক্ষম হবে।”
সদ্য অনুমোদনপ্রাপ্ত এনআরবি ব্যাংক লিমিটিডের চেয়ারম্যান নিজাম চৌধুরী মিডিয়াকে এসব কথা বলেছেন। প্রবাসী নিজাম চৌধুরীর আমেরিকার সবচেয়ে পুরনো একটি ব্যাংকে কাজের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে। সে অভিজ্ঞতা ভিত্তি করেই তিনি এনআরবি ব্যাংকে গ্রাহক সেবার কার্যক্রম সম্প্রসারিত করবেন।
উল্লেখ্য, নিউইয়র্কের দু’জন এবং লন্ডনের এক প্রবাসীর আবেদন অনুযায়ী ৩টি এনআরবি ব্যাংকের অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি প্রথম ঘটনা এবং এর মাধ্যমে প্রায় এক কোটি প্রবাসীর প্রতি সরকারের মমত্ববোধের সুস্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ ঘটলো বলে উল্লেখ করেন নিজাম চৌধুরী।
প্রবাসীদের ভূমিকার স্বীকৃতির মাধ্যমে প্রবাসীদের প্রতি সরকারের আস্থার প্রতিফলনও ঘটলো বলে নিজাম চৌধুরী উল্লেখ করেন। এজন্যে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিজাম চৌধুরী বলেন, বিগত নির্বাচনে মহাজোট সরকারকে বিপুল বিজয় দিতে প্রবাসীদের ভূমিকাও ব্যাপক ছিল। তিনি বলেন, এখনও প্রবাসীরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নিতে নানাভাবে সহায়তা করে যাচ্ছেন।
সামগ্রিক অর্থেই এনআরবি ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসীরা আরো বেশী ভূমিকা পালনে সক্ষম হবেন। তবে নিজাম চৌধুরী বলেন, প্রবাসী উদ্যোক্তাদের জন্য ৩টি ব্যাংকের অনুমোদনে অনেকেই হতাশা ব্যক্ত করেন।
কিন্তু প্রকৃত অর্থে হতাশার কিছু নেই। কারণ, বাংলাদেশের প্রবাসীরা ২০০৮-২০০৯ অর্থ বছরে পাঠিয়েছিলেন সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার। তা বেড়ে গত বছর হয়েছে প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার। এ ভাবেই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে। তাই সংখ্যাগতভাবে ব্যাংকের প্রয়োজন বেড়েই চলেছে।
এনআরবি ইউএসএর চেয়ারম্যান নিজাম চৌধুরী বলেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সংহত হওয়ার পাশাপাশি রাজনৈতিক অস্থিরতা হ্রাস পাওয়ায় বাংলাদেশে বিনিয়োগের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াও বেড়েছে। বলতে দ্বিধা নেই, আমেরিকা, অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের অনেক দেশের প্রবাসীর সিংহভাগই চাচ্ছেন উপার্জিত অর্থের প্রায় সবটাই দেশে বিনিয়োগ করতে।
বিনিয়োগের চমৎকার একটি পরিবেশের সন্ধান পাওয়ার পাশাপাশি প্রবাসীদের মালিকানাধীন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পরিপ্রেক্ষিতে সহসা রেমিট্যান্সের প্রবাহও বেড়ে যাবে। নিজাম চৌধুরী বলেন, দেশে আমদানি-রপ্তানিতে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় এনআরবি ব্যাংক নেয়ামক শক্তি হিসেবে পরিণত হবে।
আর এভাবেই টুয়েন্টি টুয়েন্টিওয়ান ভিশনও বাস্তবায়নের পথ সুগম হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত ৪টিসহ মোট ৪৭ ব্যাংক রয়েছে। এরমধ্যে পুরো বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় রয়েছে ৩০টি। ৪টি বিশেষায়িত এবং ৯টি বিদেশী ব্যাংক।
জনসংখ্যার ভিত্তিতে আরো ব্যাংকের প্রয়োজন ছিল এবং সর্বাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ব্যাংকের চাহিদা কখনোই ফুরোবে না। এনআরবি ৩টি ব্যাংকের মাধ্যমে ১২০০ কোটি টাকার প্রাথমিক মূলধন হবে- যার পুরোটাই বৈদেশিক মুদ্রা।
তিনি বলেন, আমি কখনোই মনে করি না যে ব্যাংকের সংখ্যা অত্যধিক হয়েছে। অর্থনৈতিক প্রবাহকে সচল রাখতে এনআরবি ব্যাংকের ভীষণ প্রয়োজন ছিল। বর্তমানে প্রবাস থেকে যে অর্থ বাংলাদেশে যাচ্ছে, তার মাত্র ৪০ শতাংশের মত ব্যাংকিং চ্যানেলে যায়।
অবশিষ্ট যাচ্ছে নন-ব্যাংকিং চ্যানেলে। হুন্ডি এবং রফতানিকারকদের মাধ্যমে চলাচল করছে প্রায় ৬০ শতাংশ অর্থ। নতুন ৩টি এনআরবি ব্যাংকের প্রতিটি যদি নন-ব্যাংকিং সেক্টর থেকে ১০ শতাংশ করেও অর্থ টানতে পারে তাহলে মোট ৩০ শতাংশ রেমিট্যান্স বৈধ পথে ঘটবে।
নিজাম চৌধুরী বলেন, এটি বিরাট অবদান রাখবে জাতীয় অর্থনীতিতে। এভাবে মানিলন্ডারিং প্রতিহত করার পথও সুগম হবে। আমরা সে চেষ্টা চালিয়ে যাবো অব্যাহতভাবে। তিনি উল্লেখ করেন, নিউইয়র্কে আমাদের মানি রেমিট্যান্স এক্সচেঞ্জ খোলার পরই নামমাত্র ফিতে প্রবাসীরা নিজ একাউন্টে সরাসরি অর্থ পাঠাতে পারবেন।
এনআরবি ব্যাংকে যাদের একাউন্ট থাকবে তাদের কোন ফি দিতে হবে না। ঘরে বসেই অনলাইনে ডলার জমা করতে পারবেন। এভাবেই আমরা স্বজনরের কাছে দ্রততম সময়ে অর্থ পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করবো।
এ প্রসঙ্গে নিজাম চৌধুরী উল্লেখ করেন, প্রবাসে কঠোর পরিশ্রমে অর্জিত অর্থ পাঠানোর পর অনেক প্রবাসী পরবর্তীতে দেশে ফিরে সে অর্থ ভোগ করতে পারেননি। অনেক ক্ষেত্রে স্ত্রী-সন্তান-স্বজনেরা সে অর্থ জবর-দখল করেছেন । এমনকি অনেকে স্ত্রী হারিয়েছেন জমাকৃত অর্থসহ।
এনআরবি ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় প্রবাসীদের দুশ্চিন্তায় পড়তে হবে না। কারণ, জমাকৃত অর্থ নিজের একাউন্টেই সঞ্চিত হবে এবং সব সময় অনলাইনে তা মনিটরিং করতে পারবেন।
যুক্তরাষ্ট্রে ১৬০ বছরের পুরনো ওয়েলস ফারগো ব্যাংকে হোম মর্টগেজ ডিভিশনে লোন কন্সালট্যান্ট হিসেবে ৮ বছরের কাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন নিজাম চৌধুরী বলেন, প্রাচ্যের সেই অভিজ্ঞতা মাতৃভূমির কল্যাণে ব্যবহারের একটি স্বপ্ন ছিল। সে স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। এজন্যে আমি সৃষ্টিকর্তার শোকরিয়া আদায় করছি।
নিজাম চৌধুরী বলেন, আমাদের ব্যাংকের ঋণ নিতে প্রবাসীদের কোন সহায়-সম্পদ বন্ধক রাখতে হবে না। প্রবাসের ক্রেডিট রিপোর্ট অনুযায়ী তারা ঋণ পাবেন। এছাড়া যে সব প্রবাসী কাজ নিয়ে বিদেশ যাবেন তাদেরকেও ঋণ দেয়া হবে। এমনকি কর্মের উদ্দেশ্যে বিদেশগমনকারীর স্বজনকেও ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা থাকবে এনআরবি ব্যাংকে।
তিনি বলেন, শতভাগ প্রবাসীর মালিকানাধীন এনআরবি ব্যাংকের এটাই হচ্ছে গ্রাহকসেবার বড় সিক্রেট। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করবে এনআরবি ব্যাংক। বাণিজ্যিক ব্যাংকের মতই কাজ হবে এ ব্যাংকে।
তিনি বলেন, এনআরবি ব্যাংকের সদর দফতর হবে ঢাকায়। প্রথম শাখা খোলা হবে নিউইয়র্কে। এরপরই প্রবাসীরা একাউন্ট খুলতে পারবেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান বিধি অনুযায়ী ফিক্সড ডিপজিট রাখলে ১২.৫ শতাংশ হারে সুদ পাওয়া যাবে। সঞ্চয়ী হিসাবেও দেয়া হবে ৮ শতাংশ সুদ। আমেরিকায় এত বেশী লাভের ব্যবস্থা নেই কোন ব্যাংকেই।
নিজাম চৌধুরী বলেন, এনআরবি ব্যাংকে যে কেউ একাউন্ট খুলতে পারবেন। এর পরিচালনা পর্ষদের সদস্য সংখ্যা ২০। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ফ্লোরিডার এম ফজলুর রহমানকে ভাইস প্রেসিডেন্ট নিয়োগ করা হয়েছে। পরিচালকদের মধ্যে রয়েছেন অপর সহ-সভাপতি নিউইয়র্কের আকতার হোসেন ও মাহবুবুর রহমান, অন্টারিও আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুকী হাসান প্রমুখ।
তিনি বলেন, পরিচালকরা স্পন্সর শেয়ার হোল্ডার নিতে পারবেন কয়েকজন করে। অর্থাৎ বড় একটি পরিবারে পরিণত হবে এনআরবি ব্যাংক। তিনি বলেন, শিগগিরই আইপিও ছাড়া হবে- যার বড় একটি অংশ সংরক্ষিত থাকবে প্রবাসীদের জন্যে।
নিজাম চৌধুরী বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে প্রায় ৫০ লাখ বাংলাদেশি কর্মী রয়েছেন। এরা হাড়ভাঙ্গা খাটুনি করে বিপুল অর্থ আয় করছেন এবং তার প্রায় পুরোটাই দেশে স্বজনদের কাছে পাঠাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও বিপুলসংখ্যক প্রবাসী কঠোর পরিশ্রম করছেন।
শরীর যখন আর কুলোয় না তখন তারা স্বদেশে ফিরে এক ধরণের অসহায়ত্বে ভোগেন। সে সময় সঞ্চয়ও থাকে না অনেকের। ঐসব অসহায় প্রবাসীর পাশে দাঁড়াবে বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে এনআরবি ব্যাংক। অর্থাৎ প্রবাসের ক্রেডিট ইতিহাস অনুযায়ী তাদের ঋণ দেয়া হবে।
যে কোন প্রকল্পে সহায়তা প্রদান করবে এনআরবি ব্যাংক। এভাবেই অসহায় প্রবাসীদের কর্মশক্তিতে পরিণত করা হবে এবং প্রবাসের অভিজ্ঞতায় স্বদেশ বিনির্মাণের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে গণ্য হবেন এনআরবি ব্যাংকের গ্রাহকেরা।
নিজাম চৌধুরী বলেন, এনআরবি ব্যাংকের অফিস চালুর মাধ্যমে প্রথম বছরেই ৩/৪ হাজার বাংলাদেশির চাকরি হবে। ৫ বছরের মধ্যে ৫ লক্ষাধিক বাংলাদেশির কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে এনআরবি ব্যাংক। এভাবেই উন্নয়নে অংশীদার হবেন প্রবাসীরা এবং এ ধারা অব্যাহত থাকলে অনেক আমেরিকান স্বদেশে স্থায়ী বিনিয়োগে উৎসাহী হবেন।
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক সরকারের গত ৩ বছরে ৫০ সহস্রাধিক প্রবাসী বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছেন। এনআরবি ব্যাংকের মাধ্যমে আরো বিনিয়োগের অদম্য আকাঙ্খার বাস্তবায়ন ঘটবে বলে আশা করছেন নিজাম চৌধুরী। তিনি এনআরবি ব্যাংক পরিচালনায় প্রবাসের সকল মিডিয়ার আন্তরিক সহায়তা চেয়েছেন ।
উল্লেখ্য, গত ৪ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ প্রবাসে বসবাসরত এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড, এনআরবি ব্যাংক লিমিটিডে ও এনআরবি কমার্স ব্যাংক লিমিটেডকে অনুমোদন দেয়। এনআরবি ব্যাংক নামে দুটি আবেদন জমা হওয়ায়, এখন সংশ্লিষ্টরা আলোচনা করে একটি নাম পরিবর্তন করবেন বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
নিউইয়র্ক প্রবাসী যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ফরাসত আলী এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের অনুমোদন পেয়েছেন। অপরটির চেয়ারম্যান হচ্ছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী ইকবাল আহমেদ।