কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ মিছিলের নামে পরিকল্পিতভাবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর হামলা করেছে ইউনাইডেট পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিএিফ) সমর্থিত হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কর্মীরা। পরে এ ঘটনার জের ধরে পুরো জেলাব্যাপী বিভিন্ন সড়কে বিভিন্ন যানবাহনে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে তারা।
বুধবার সকালের দিকে খাগড়াছড়ির জেলা সদরের স্বনির্ভর বাজারে ইউপিডিএফ সমর্থিত হিল উইমেন্স ফেডারেশন সদস্যদের হামলায় বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নয় সদস্য আহত হন।
এ ঘটনার পরপরই জেলার বিভিন্ন সড়কে ইউপিডিএফ কর্মীরা ব্যাপক তাণ্ডবলীলা চালায়। দিনব্যাপী জেলার বিভিন্ন সড়কে অন্তত ২৫টি গাড়িতে ভাঙচুর চালিয়েছে তারা। একাধিক যানবাহনে অগ্নিসংযোগও করা হয়েছে। এ সময় তাদের হামলায় কয়েকজন যাত্রী আহত হন। বিভিন্ন সড়কে ৪টি বাস, ২টি ট্রাক, ২টি মাহেন্দ্র, ২টি পিকআপ, ২টি প্রাইভেটকার, ১২টি সিএনজিসহ ২৪টি গাড়িতে ভাঙচুর ও একটি কাঁঠালবোঝাই পিকআপে অগ্নিসংযোগ করে ইউপিডিএফ কর্মীরা।
এ ঘটনার প্রতিবাদে এবং সড়কে যান চলাচলে নিরাপত্তার দাবিতে বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সব সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় পরিবহন শ্রমিকরা। পরে প্রশাসনের আশ্বাসে বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে যানবাহন চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বৃহস্পতিবার সকালে খাগড়াছড়িতে ১০ শ্রমিক সংগঠনের জরুরি সভা আহ্বান করা হয়েছে বলে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা বাস-মিনিবাস পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্রে জানা গেছে।
খাগড়াছড়ি সদর থানার অফিসার ইনচার্জ তারেক মো. আব্দুল হান্নান জানান, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর হামলার ঘটনায় আটক ১৯ জনের মধ্যে যাচাইয়ের পর ১১ জনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর উপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, বুধবার সকালের দিকে খাগড়াছড়ির স্বনির্ভর বাজার এলাকায় ইউপিডিএফ সমর্থিত হিল উইমেন্স ফেডারেশন সদস্যদের হামলা তিন বিজিবি জওয়ানসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নয় সদস্য আহত হন। হামলায় তিন মহিলা পুলিশ সদস্যসহ ছয়জন পুলিশ সদস্য আহত হন।
এদিকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর ইউপিডিএফ সমর্থিত হিল উইমেন্স ফেডারেশনের হামলার ঘটনাকে পরিকল্পিত বলেই মনে করছেন সম-অধিকার আন্দোলনসহ বাঙালি সংগঠনগুলোর নেতারা।
খাগড়াছড়ি জেলা সম-অধিকার আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মো. মোশাররফ হোসেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলাসহ বিভিন্ন স্থানে তাণ্ডবলীলা চালানো সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনারও দাবি জানান।
ইউপিডিএফের দিনব্যাপী তাণ্ডবলীলায় জেলাব্যাপী থমথমে অবস্থা বিরাজ করে। তাদের এ কর্মকাণ্ডকে খাগড়াছড়িতে বড় ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পূর্বাভাস হিসেবেই দেখছেন জেলার অনেকেই। যেকোনো ধরনের নাশকতার আশঙ্কায় জেলাজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।