বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতা মওদুদ আহমদ গুলশান-২ নম্বর সেকশনের ১৫৯ নম্বর প্লটের বাড়িটি পাচ্ছেন না। এই বাড়ি নিয়ে করা মামলায় আপিল বিভাগের দেয়া রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) দুদকের ও মওদুদের ভাই মনজুরের পৃথক দুটি আবেদন কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে রোববার খারিজ করে দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ।
গত ৩১ মে শুনানি শেষে রায়ের জন্য আজকের দিন ধার্য ছিল। নির্ধারিত দিনে এই রায় ঘোষণা করেন আদলত। আদালতে আজ মওদুদ আহমদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ নিজে, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দীন মাহমুদ ও কামরুল হক সিদ্দিকী। অন্যদিকে রাজউক ও রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। দুদকের পক্ষে ছিলেন, অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু ও খুরশিদ আলম খান।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের জানান, দুদক ও মওদুদের ভাইয়ের পক্ষে করা রিভিউ খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। বাড়িটি রাজউকের নামে বরাদ্দ রয়েছে। এখন আর মওদুদের বাড়িতে থাকার কোনো অধিকার নেই।
বাড়িটির বিষয়ে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘এটা সরকারের বাড়ি নয়। আমি বাড়ি ছাড়ব না। বাড়ি ছাড়ার বিষয়টি মালিক ও আমি বুঝবো।’
দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান জানান, মওদুদ আহমদের বাড়ি নিয়ে করা দুদক ও তার ভাই মনজুরের দুটি রিভিউ খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। এখন বাড়ি ছাড়া না ছাড়ার বিষয়টি রাজউক ঠিক করবে।
গত বছর ২ আগস্ট মওদুদ আহমদের ভাই মনজুর আহমদের নামে ওই বাড়ির নামজারির নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাজউকের আপিল গ্রহণ করেন আপিল বিভাগ।
তার আগে ২০১৬ সালের ৩ আগস্ট বাড়ি নিয়ে ৮০ পৃষ্ঠার আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন আপিল বিভাগ। নিয়ম অনুযায়ী, রায় প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে এই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন দাখিল করতে হয়। সেই রায়ের বিরুদ্ধে প্রথমে মওদুদ রিভিউ করেন, পরে দুদক একটি রিভিউ করে।
২০১০ সালের ১২ আগস্ট এক আবেদনের শুনানি নিয়ে গুলশানের ওই বাড়িটি মনজুর আহমদের নামে মিউটেশন করার জন্য রায় দেন হাইকোর্ট। রাজউক এ রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল দায়ের করে ২০১১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি।
২০১৪ সালের ৯ মার্চ আপিল বিভাগ রাজউককে আপিলের অনুমতি দেন।
দুদকের দাবি, বাড়িটির প্রকৃত মালিক ছিলেন পাকিস্তানি নাগরিক মো. এহসান। ১৯৬০ সালে তৎকালীন ডিআইটির (রাজউক) কাছ থেকে এক বিঘা ১৩ কাঠার এ বাড়ির মালিকানা পান এহসান। ১৯৬৫ সালে বাড়ির মালিকানার কাগজপত্রে এহসানের পাশাপাশি তার স্ত্রী অস্ট্রিয়ার নাগরিক ইনজে মারিয়া প্লাজের নামও অন্তর্ভুক্ত হয়।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে স্ত্রীসহ ঢাকা ত্যাগ করেন এহসান। তারা আর ফিরে না আসায় ১৯৭২ সালে এটি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত হয়। এরপর ১৯৭৩ সালের ২ আগস্ট মওদুদ তার ইংল্যান্ড প্রবাসী ভাই মনজুরের নামে থাকা একটি আমমোক্তারনামার ভিত্তিতে বাড়িটি সরকারের কাছ থেকে বরাদ্দ নেন। কিন্তু বাড়িটির নামজারি কার্যক্রম নিয়ে জটিলতা ছিল।
মনজুর আহমদ তার অনুকূলে নামজারি করার জন্য হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। বর্তমান সরকারের আমলে ২০১০ সালের ১২ আগস্ট হাইকোর্ট এক মাসের মধ্যে মওদুদ আহমদের ভাইয়ের অনুকূলে নামজারি সম্পন্নের জন্য নির্দেশ দেন। হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে রাজউক আপিল করে। অন্যদিকে আমমোক্তারনামা সঠিক নয় এই অভিযোগে দুদক একটি মামলা দায়ের করে। ২০১৪ সালের ১৪ জুন এ মামলায় অভিযোগ আমলে নেন বিচারিক আদালত।
এর বিরুদ্ধে তাদের আবেদন ২০১৬ সালের ২৩ জুন খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। পরে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেন মওদুদ আহমদ।