চার বছর আগে এ সময়ে বেশ সোরগোল পড়ে গিয়েছিল। হই চই হয়েছে যথেষ্ঠ। ক্রিকেট পাড়ায় অনেক গুঞ্জন আর জল্পনা-কল্পনার ফানুসও উড়েছে। ২০১৩ সালের শুরু থেকেই বিসিবি পরিচালক পর্ষদ নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু হয়েছিল।
দেশে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সুপরিচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং বাংলাদেশের ক্রিকেটের সোনালী অধ্যায়ের অন্যতম রূপকার সাবের হোসেন চৌধুরী ঘটা করেই বিসিবি প্রধান পদে নির্বাচন করার ইচ্ছে ব্যক্ত করেছিলেন। তার সে ইচ্ছের কথা মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচারও হয়। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি আর নির্বাচন করেননি।
দেখতে দেখতে সময় গড়িয়ে আবার বিসিবির নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলো। ২০১৩ সালের ১০ অক্টোবর নির্বাচন হবার দিন থেকে হিসেবে করলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বর্তমান বিসিবি পরিচালক পর্ষদের মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছরের ১০ অক্টোবর।
ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে হিসেব কষলে আর চার মাস সময় বাকি। তার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করেই হোক কিংবা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়ই হোক, একটা পরিচালনা পর্ষদ গঠণ করতেই হবে; কিন্তু এবার আগের মত সে রকম উত্তেজনা নেই। হই চই কিংবা সোরগোল নেই বললেই চলে।
বিসিবি নির্বাচন নিয়ে তেমন কোন সাড়া শব্দ নেই কেন? খুব প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন। উত্তর একটাই- এবার সে অর্থে কেউ বিসিবি সভাপতি পদে নির্বাচনের ইচ্ছে প্রকাশ করছেন না। ২০১৩ সালের নির্বাচনের কয়েক মাস আগে সাবের হোসেন চৌধুরী একাধিকবার মিডিয়ার সামনে এসেছেন এবং অনেক কথার ভীড়ে বোর্ড প্রধান পদে নির্বাচন করার ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন।
কিন্তু এবার তিনি নিশ্চুপ। বিসিবি পরিচালক পর্ষদে নির্বাচন করার কোন সম্ভাবনাই নেই। আর কোন প্রার্থীর কথাও সেভাবে শোনা যাচ্ছে না। এক সময় সরকারি দলের সাংসদ, মুক্তিযোদ্ধা ও বরেণ্য ক্রীড়া সংগঠক গাজী গ্রুপের স্বত্বাধিকারী গোজী গোলাম দাস্তগীরের কথা শোনা গিয়েছিল। ক্রিকেট পাড়ায় গুঞ্জন ছিল, তিনি সভাপতি পদে নির্বাচন করতেও পারেন।
এমনও শোনা গেছে ঢাকার ৫৮ কাউন্সিলরের প্রায় ১৮ থেকে ২০টি কাউন্সিলর তার পক্ষে। তবে সময় গড়ানোর সাথে সাথে সে উত্তাপ কমেছে। এখন পর্যন্ত গাজী গোলম দস্তগীরের নির্বাচন করার তেমন তোড়জোড় চোখে পড়ছে না।
ক্রিকেট পাড়ায় কারো মুখে শোনা যাচ্ছে না, ‘দস্তগীর ভাই (দস্তগীর চৌধুরী) নির্বাচন করবেন না। বরং শোনা যাচ্ছে বর্তমান সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সমর্থনপুষ্ট প্যানেলেই থাকছেন তার পুত্র গাজী গোলাম মর্তুজা। প্রসঙ্গতঃ গোলাম মর্তুজা এখনো বোর্ড পরিচালক এবং বিসিবির অন্যতম স্ট্যান্ডিং কমিটি সিসিডিএমের প্রধান।
শেষ খবর, বর্তমান সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত কোনো উল্লেখযোগ্য এবং নামী ক্রিকেট সংগঠক বোর্ড প্রধান পদে দাঁড়ানোর ইচ্ছে ব্যক্ত করেননি। কারো নামও শোনা যাচ্ছে না। ঢাকার ক্লাব পাড়া, জেলা-বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা, প্লেয়ার্স ও সার্ভিসেসের কেউ সভাপতি পদে না দাঁড়ালে শেষ পর্যন্ত এবারও হয়ত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিসিবি প্রধান নির্বাচিত হয়ে যাবেন নাজমুল হাসান পাপন।
শুধু তাই নয়। এবার অন্য পদগুলোতেও সে অর্থে বিরোধী পক্ষ থেকে কারো দাঁড়ানোর সম্ভাবনা খুব কম। কারণ, কাউন্সিলরদের মূল ও বড় অংশ বর্তমান সভাপতির সমর্থনপুষ্ট প্যানেলের সাথে। তবে এবার বর্তমান পরিচালক পর্ষদে রদবদলের সম্ভাবনা আছে।
বর্তমান পরিচালকদের অন্তত চার জনের না থাকার সম্ভাবনা খুব বেশি। এর মধ্যে অন্যতম পরিচালক নাজমুল করিম টিংকু সদ্য প্রয়াত। তার জায়গা খালি হয়ে গেছে। এখানে একজনের অন্তর্ভুক্তি ঘটবেই।
এছাড়া আহমেদ ইকবাল হাসানও বোর্ডে প্রায় আসা ছেড়েই দিয়েছেন। জানা গেছে, বেশ অনেক দিন তিনি বোর্ড সভায়ও থাকছেন অনুপস্থিত। তারও পরবর্তী প্যানেলে জায়গা পাবার সম্ভাবনা খুব কম।
এর বাইরে শওকত আজিজ রাসেলের না থাকার কথাও শোনা যাচ্ছে জোওে সোরে। প্রসঙ্গতঃ শওকত আজিজ রাসেল পারটেক্স গ্রুপের কর্নধার এমএ হাসেমের পুত্র এবং সাবেক বোর্ড কর্মকর্তা আজিজ আল কায়সার টিটোর ছোট ভাই।
সম্ভাব্য বাদ পড়াদের তালিকায় দু’জন নামী ও হাই প্রোফাইল পরিচালকও ছিলেন। যার একজন নাঈমুর রহমান দুর্জয়। অভিষেক টেস্টের এই অধিনায়কের সাথে বর্তমান বোর্ড প্রধানের দূরত্ব ছিল ওপেন সিক্রেট। তবে অতি সম্প্রতি সে দূরত্ব কেটে গেছে এবং নাঈমুরের আগামী বোর্ডে থাকা মোটামুটি নিশ্চিত।
এছাড়া না থাকাদের দলে আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববির নামও শোনা যাচ্ছে। আবাহনী তথা দেশের ক্রিকেটের সঙ্গে তিন যুগের বেশি সময় ধরে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববির নাম। বিনয়ী, সদালাপী, বিচক্ষণ ও ক্রিকেটীয় কর্মকাণ্ড দক্ষ ববির গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নাতীত।
ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসা ও ক্রিকেটীয় কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকা এ নিবেদিতপ্রাণ সংগঠককে ৯০-এর দশকের প্রথম দিকে বিএনপির সময়ও বোর্ডের যুগ্ম সম্পাদক করা হয়েছিল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের সহযোদ্ধা মহিউদ্দীন আহমেদের পুত্র ববি পারিবারিকভাবেও বঙ্গবন্ধু পরিবারের সাথে সম্পৃক্ত। প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার স্নেহভাজন।
তারপরও বর্তমান বোর্ডে তেমন কোন উচ্চ পদে নেই এ পরিক্ষীত ক্রিকেট সংগঠক। তাই তার এবারের বোর্ডে থাকা নিয়েও আছে সংশয়। তবে অনেকের মত, শেষ পর্যন্ত নিজের মেধা-যোগ্যতা, সততার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর আশির্বাদে থাকবেন আহমেদ সাজ্জাদুল আলম। তিনজন বাইরে থাকার অর্থ সমান সংখ্যক পরিচালকের অন্তর্ভূক্তি।
এখানে তিনজনের নাম উচ্চারিত হচ্ছে খুব বেশি। তারা হলেন ওবায়েদ নিজাম, মোকসদুর রহমান বাদল বাদল এবং তানভির আহমেদ টিটু। ওবায়েদ নিজাম প্রায় এক যুগধওে নানাভাবেই ক্রিকেটীয় কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত।
ওল্ডডিওএইচএস ক্লাবের পরিচালনা দিয়ে তার আত্মপ্রকাশ। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ সুজনের বন্ধুস্থানীয় ওবায়েদ নিজাম আগেরবার বিপিএলে ঢাকা ডাইনাাইটসের সিইও হিসেবে কাজ করেছেন।
এছাড়া বাদল হচ্ছেন ইন্দিরা রোড ক্রীড়া চক্রের ক্রিকেট কমিটির বর্তমান সভাপতি (নাজমুল হাসান পাপনের ফুফাতো ভাইও)। আর তানভির আহমেদ টিটু নারায়নগঞ্জ ক্লাবের প্রেসিডেন্ট এবং নারায়নগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক। এ তিন জনের অন্তর্ভূক্তি মোটামুটি নিশ্চিত বলেই ধরা হচ্ছে।