জয়ের দারুণ সুযোগ ছিল। ২৫৮ রানের লক্ষ্য বেধে দেয়ার পর বোলাররাও শুরু থেকে চেপে ধরেছিল কিউইদের; কিন্তু পঞ্চম উইকেটে নেইল ব্রুম আর জিমি নিশামের ৮০ রানের জুটিই ম্যাচ থেকে ছিটকে দিলো বাংলাদেশকে।
শেষ মুহূর্তে রুবেল আর মাশরাফি ব্রুম এবং নিশামকে তুলে নিলেও লাভ হয়নি। তাতে শুধু পরাজয়ের ব্যবধানই কমেছে। কলিন মুনরো আর মিচেল সান্তনার মিলে ফিনিশিং টেনে দেন। শেষ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডের কাছে ৪ উইকেটে হেরে গেলো বাংলাদেশ। ১৫ বল হাতে রেখেই জয় তুলে নিল কিউইরা।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে সৌম্য সরকার, মুশফিকুর রহীম এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের হাফ সেঞ্চুরির ওপর দাঁড়িয়ে ২৫৭ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। তবে, ম্যাচ শেষে বোঝাই যাচ্ছে বাংলাদেশের রান অনেক কম হয়ে গেছে। আগেরদিনই মাশরাফি বলেছিলেন, এই উইকেটে ৩০০ রান করা সম্ভব। তেমনই উইকেট ছিল; কিন্তু আমাদের ব্যাটসম্যানরা হাত খুলে খেলতে পারেনি বলেই রানটা কম হয়ে গেলো।
২৫৮ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে কিছুটা মন্থর গতির সূচনা ছিল নিউজিল্যান্ডের। বরং ডাবলিনের ক্লোনটার্ফ ক্রিকেট ক্লাব গ্রাউন্ডে ২৫৮ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দিয়ে শুরু থেকেই নিউজিল্যান্ডকে চেপে ধরার অব্যাহত চেষ্টা ছিল বাংলাদেশ দলের বোলারদের। সেই চাপের মুখে সপ্তম ওভারে দলকে ব্রেক থ্রু এনে দেন মোস্তাফিজুর রহমান। কিউইদের ওপেনার লুক রনকিকে ক্যাচ দিতে বাধ্য করলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের হাতে।
বল করতে এসে দুই কিউই ওপেনারকে কাটার, স্লোয়ার দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছিলেন মোস্তাফিজ। শেষ পর্যন্ত নিজের দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে এসে সফল হলেন। দারুণ এক স্লোয়ার দিলেন মোস্তাফিজ। বুঝতে না পেরে ব্যাট পেতে দেন লুক রনকি। ব্যাটের ওপরের কানায় লেগে বল হাওয়ায় ভেসে ওঠে। মিড অফে দাঁড়িয়ে থেকেই ক্যাচটি তালুবন্দি করে নেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
আউট হওয়ার আগে মোটামুটি বিধ্বংসী হয়ে উঠছিলেন রনকি। ২৭ বলে খেলেন ২৭ রানের ইনিংস। চারটি বাউন্ডারির সঙ্গে মারেন একটি ছক্কার মার। টম ল্যাথামকে নিয়ে গড়েন ৩৯ রানের জুটি। এরপর সাব্বিরের দুর্দান্ত এক থ্রুতে রান আউটে কাটা পড়েন জর্জ ওয়ার্কার। কিউই এই ব্যাটসম্যান করেছেন ১৭ রান।
লাথাম আর রস টেলর মিলে ৩০ রানের জুটি গড়ে থিতু হওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু দারুণ এক ডেলিভারিতে রুবেল মনে করিয়ে দিলেন বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করা সেই দুটি ডেলিভারিকে। যে দুটি সবার চোখে ভাসার কথা। অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ইয়র্কারে উড়িয়ে দিয়েছিলেন স্টুয়ার্ট ব্রড আর জেমস অ্যান্ডারসনের উইকেট।
সেভাবে হয়তো আজ স্ট্যাম্প উড়িয়ে দেননি, তবে তেমনই একটি আনপ্লেবল ডেলিভারি দিলেন। বিপজ্জনক হয়ে ওঠা কিউই অধিনায়ক টম ল্যাথামকে অসাধারণ ডেলিভারিতে সাজ ঘরে ফেরান বাংলাদেশের পেসার রুবেল।
৬৪ বলে ৫৪ রান করে ফেলেছিলেন টম ল্যাথাম। ইনিংস ওপেন রকতে নেমে এক প্রান্তে দৃঢ়তার সঙ্গে ব্যাট করে যাচ্ছিলেন তিনি। লুক রনকি আর জর্জ ওয়ার্কার আউট হয়ে গেলেও কিউইদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছে দিচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু ২১তম ওভারের তৃতীয় বলটিতে এমন ডেলিভারি দিলেন রুবেল, যেটা বুঝতেই পারেননি ল্যাথাম। ব্যাটের ভেতরের কানায় লাগিয়ে দিলেন। ব্যাট ছুঁয়ে বল চলে গেলো উইকেটরক্ষক মুশফিকের হাতে।
এরপর চেনা ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত দিয়ে যাচ্ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। তার বলের সেই ধার দেখা যাচ্ছে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে। প্রথম ম্যাচে পারেননি বৃষ্টির কারণে বল করতে। দ্বিতীয় ম্যাচে কিউইদের বিপক্ষে আগুণ ঝরাচ্ছেন যেন তিনি। লুক রনকিকে ফিরিয়ে প্রথম ব্রেক থ্রুটা এনে দিয়েছিলেন তিনি। এবার তিনি আবারও বাংলাদেশকে খেলায় ফেরালেন রস টেলরকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে।
৩১তম ওভারে বল করতে এসে প্রথম দুই বলেই পরাস্ত করেছেন রস টেলরকে। তৃতীয় বলে দারুণ লেন্থে ডেলিভারি দিলেন মোস্তাফিজ। আবারও পরাস্ত টেলর। এবার জোরালো আবেদন। তাতেই সাড়া দিয়ে দিলেন আম্পায়ার। পড়লো কিউইদের চতুর্থ উইকেট। ৪০ বলে ২৫ রান করে আউট হলেন টেলর।
পঞ্চম উইকেটেই জিমি নিশামকে নিয়ে হাল ধরে বসেন নেইল ব্রুম। ৮০ রানের জুটি গড়েন তারা দু’জন। তাতেই ম্যাচ বের হয়ে চলে আসে কিউইদের হাতে। নেইল ব্রুম ৪৮ রান করে বিদায় নিলেও জিমি নিশাম হাফ সেঞ্চুরি করেন। তাদের দু’জনের দৃঢ়তাই জিতিয়ে দেয় নিউজিল্যান্ডকে। রুবেলের এলবিতে আউট হন ব্রুম। আর নিশাম আউট হন মাশরাফির বলে। কলিন মুনরো ১৬ এবং ৫ রানে অপরাজিত ছিলেন মিচেল সান্তনার।