আপন জুয়েলার্স থেকে জব্দ করা ৪৯৮ কেজি (প্রায় সাড়ে ১২ মণ) স্বর্ণের মধ্যে এক কেজিরও কোনো বৈধ কাগজ দেখাতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত ডার্টিমানি ও চোরাচালনের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে সত্য বলে প্রতীয়মান হয়।
বনানীর আলোচিত ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি সাফাত আহমেদের বাবার প্রতিষ্ঠান ‘আপন জুয়েলার্স’ থেকে জব্দ করা স্বর্ণের বিষয়ে বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন শুল্ক ও গোয়েন্দা অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) ড. মইনুল খান।
শুল্ক ও গোয়েন্দার দল আপন জুয়েলার্সের গুলশান, উত্তরা, মৌচাক ও সীমান্ত স্কয়ারসহ বিভিন্ন শাখায় অভিযান চালিয়ে ৪৯৮ কেজি স্বর্ণ ও ডায়মন্ড ব্যাখ্যাহীনভাবে মজুদ রাখার অভিযোগে জব্দ করে। গুলশানের সুবাস্তু টাওয়ারে আপন জুয়েলার্সের একটি শাখা বন্ধ পাওয়ায় সেটি সিলগালা করে দেয়।
শুল্ক ও গোয়েন্দা অধিদফতরের মহাপরিচালক মইনুল খান বলেন, ‘এই বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ ও ডায়মন্ডের বৈধ সরবরাহের কোনো কাগজ দেখাতে পারেনি আপন জুয়েলার্স কর্তৃপক্ষ। তারা বৈধ কাগজ দেখানোর জন্য সময় চেয়েছেন। আমরা সময় দিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘জব্দ করা ৪৯৮ কেজি স্বর্ণের মধ্যে এক কেজিরও বৈধ কাগজ তারা দেখাতে পারেনি। বৈধ কাগজ না দেখানো মানে আমাদের অনুসন্ধান ও তথ্য সত্য বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। অর্থাৎ ডার্টিমানি ও চোরাচালনের অভিযোগ সত্য বলে প্রাথামিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে।’
‘বৈধ কাগেজ দেখাতে তাদের ২৩ মে পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে’ বলেও জানান তিনি।
তবে আপন জুয়েলার্সের অন্যতম মালিক দিলদার আহমেদ শুল্ক ও গোয়েন্দা অধিদফতর থেকে বের হয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘৪০ বছর ধরে সততার সঙ্গে ব্যবসা করে আসছি। কোনো অবৈধ জিনিস (স্বর্ণ-হীরা) আমাদের দোকানে নাই।’
তিনি বলেন, ‘শুল্ক গোয়েন্দাদের অধিকার রয়েছে আমাদের দোকান সার্চ করার। তারা আমাদের স্বর্ণ ও ডায়মন্ড জব্দ করেছে। আমরা পেপার্স শো করব। সময় নিয়েছি। এ বিষয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।’
স্বর্ণ, ডায়মন্ড জব্দের ঘটনায় শুল্ক গোয়েন্দা কার্যালয়ে আপন জুয়েলার্সের তিন মালিককে বুধবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এদিন বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে কাকরাইলস্থ আইডিবি ভবনের ১০তলায় শুল্ক গোয়েন্দা কার্যালয়ে সাক্ষাতের জন্য আপন জুয়েলার্সের মালিক তিন ভাই গোলজার আহমেদ, দিলদার আহমেদ ও আজাদ আহমেদ উপস্থিত হন।
শুল্ক গোয়েন্দারা জানান, ‘ডার্টি মানি’র অনুসন্ধানে রাজধানীতে প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন শাখায় তল্লাশি চালানো হয়। এ সময় বৈধ কাগজ দেখাতে না পারায় ৪৯৮ কেজি স্বর্ণ জব্দ করা হয়।
গত রোববার শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষের সহকারী কমিশনার দিপা রাণী হালদার স্বাক্ষরিত এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রাজধানীর বনানীর হোটেলে দুই তরুণী ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ সেলিম ও তার ছেলে শাফাত আহমেদের চোরাচালানের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার তথ্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। কোনো কোনো তথ্যে দেখা যায়, মেসার্স আপন জুয়েলার্সের মালিকরা অবৈধ ব্যবসার আড়ালে ‘ডার্টি মানি’ অর্জন করেছেন, যা মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অপরাধ।
এ ঘটনায় (ধর্ষণ) ‘ডার্টি মানি’র যোগসূত্র রয়েছে বলেও প্রমাণ পেয়েছেন গোয়েন্দারা। ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে অবৈধ ব্যবসার অভিযোগটি খতিয়ে দেখাকে ‘পাবলিক ডিমান্ড’ হিসেবে দেখছেন শুল্ক গোয়েন্দারা।
‘তাই অভিযোগটি আমলে নিয়ে গভীর অনুসন্ধানে নেমেছেন শুল্ক গোয়েন্দারা। এরই অংশ হিসেবে রোববার সকাল থেকে আপন জুয়েলার্স, ডিসিসি মার্কেট শাখা (বিন- ১৮১৪১০১১৯২৭), আপন জুয়েলার্স, সীমান্ত স্কোয়ার শাখা (বিন- ১৯১৫১০২১৭৩০), আপন জুয়েলার্স, উত্তরা শাখা (বিন- ১৮০২১০২৮৭৮৫), আপন জুয়েলার্স, মৌচাক শাখা (বিন- ১৯০৬১০০৫৯৬৪) এবং আপন জুয়েলার্স, গুলশান এভিনিউ শাখা (বিন- ১৮১৪১০৭১৬৫৭) শাখায় একযোগে অভিযান চালানো হয়।’
প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, অভিযানে আপন জুয়েলার্স, মৌচাক মার্কেট শাখায় সর্বমোট ৫৩,৫১৮.০২ গ্রাম ওজনের স্বর্ণালঙ্কার জব্দ করা হয়। যার বাজার মূল্য ১৯ কোটি ১১ লাখ ৯৩ হাজার ৪৭১ টাকা।
ওই শাখায় ২ কোটি ৩৭ লাখ ৮৯ হাজার ৩০০ টাকার মোট ১৭.৩৫ গ্রাম ওজনের ডায়মন্ডের অলঙ্কার পাওয়া যায়।
আপন জুয়েলার্স, সীমান্ত স্কোয়ার শাখায় সর্বমোট ৮১,৬৮৮.৬ গ্রাম ওজনের স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া যায়, যার বাজার মূল্য ৩২ কোটি ১৪ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪১ টাকা। আর ডায়মন্ডের অলঙ্কার জব্দ করা হয় ৩৩.৪৪ গ্রাম ওজনের, যার বাজার মূল্য ১ কোটি ৪৩ লাখ ৫৪ হাজার ১০০ টাকা।
উত্তরায় আপন জুয়েলার্সের শাখায় প্রায় ৩২ কোটি ২৬ লাখ ৭০ হাজার টাকার সর্বমোট ৮২,০০০ গ্রাম ওজনের স্বর্ণালঙ্কার জব্দ করা হয়। সেখানে ডায়মন্ডের অলঙ্কার ছিল ৯.৭ গ্রাম ওজনের, যার বাজার মূল্য ১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।
আপন জুয়েলার্স, ডিসিসি মার্কেট শাখায় সর্বমোট ৬৮,৪৬২.৩০ গ্রাম ওজনের স্বর্ণালঙ্কার আটক করা হয়। এসব অলঙ্কারের বাজার মূল্য ২৫ কোটি ৭৪ লাখ ১৮ হাজার ২৪৮ টাকা।