আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৩৬তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ (বুধবার)। ১৯৮১ সালের এই দিনে দীর্ঘ নির্বাসন শেষে তিনি বাংলার মাটিতে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে আসার পর তার ওপর হামলা হয়েছে একাধিকবার। তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে চারবার।
হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো মামলার বিচার শেষে হয়নি। মামলার বিচার শেষ না হওয়ার কারণ খুঁজতে গিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইন কর্মকর্তাদের অবহেলা, অব্যবস্থাপনাই মূল বিষয় হিসেবে ধরা পড়েছে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু এ বিষয়ে জাগো নিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা মামলাসমূহ এখনও শেষ না হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। রাষ্ট্রপক্ষের আইন কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে আরও বেশি উদ্যোগ নিতে হবে।
ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল্লাহ আবু জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ঢাকায় চারটি মামলা হয়েছে। মামলাসমূহ দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া উচিত। রাষ্ট্রপক্ষ আরও তৎপর হলে মামলাসমূহ দ্রুত নিষ্পত্তি হবে।
সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানে ত্রুটি দেখা দিলে মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি এখনও তদন্তাধীন রয়েছে।
বিমানে ত্রুটির মামলা
২০১৬ সালের ২৭ নভেম্বর হাঙ্গেরি যাওয়ার পথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৭৭ বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। এ কারণে তুর্কমেনিস্তানের রাজধানী আশখাবাতে বিমানটি জরুরি অবতরণ করে। ত্রুটি মেরামত করে সেখানে চার ঘণ্টা অনির্ধারিত যাত্রাবিরতির পর ওই উড়োজাহাজেই প্রধানমন্ত্রী বুদাপেস্টে পৌঁছান।
ওই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়।
২০ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে বাংলাদেশ বিমানের প্রধান প্রকৌশলীসহ নয়জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়। বাংলাদেশ বিমানের পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং ও ম্যাটেরিয়েল ম্যানেজমেন্ট) উইং কমান্ডার (অব.) এম এম আসাদুজ্জামান বাদী হয়ে মামলাটি করেন। বর্তমানে মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে।
কোটালীপাড়ায় ৭৬ কেজি বোমা উদ্ধারের ঘটনায় মামলা
২০০০ সালের ২২ জুলাই কোটালীপাড়ার শেখ লুৎফর রহমান সরকারি আদর্শ কলেজ মাঠ প্রাঙ্গণে জনসভাস্থল থেকে ৭৬ কেজির একটি বোমা উদ্ধার করে সেনাবাহিনী। পরদিন (২৩ জুলাই) ৪০ কেজি ওজনের আরও একটি বোমা উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় কোটালীপাড়া থানায় মামলা করেন তৎকালীন উপ-পরিদর্শক নূর হোসেন।
২০০১ সালের ৮ এপ্রিল সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার মুন্সি আতিকুর রহমান গোপালগঞ্জ আদালতে মুফতি আব্দুল হান্নানসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেন। মামলাটি ২০১০ সালে ঢাকার ২নং দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বদলি করা হয়।
প্রসঙ্গত, সিলেটে ২০০৪ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা ও তিনজন নিহত হওয়ার মামলায় চলতি বছর ১২ এপ্রিল মুফতি হান্নান ও তার দুই সহযোগীর ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়।
৭৬ কেজি বোমা উদ্ধার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় অপর আসামিরা হলেন- মো. মহিবুল্লাহ, মুন্সি ইব্রাহিম, মো. মাহমুদ আজহার, মো. রাশেদ ড্রাইভার, মো. শাহ নেওয়াজ, মো. ইউসুফ, মো. লোকমান, শেখ মো. এনামুল ও মো. মিজানুর রহমান। মামলায় ৮৩ সাক্ষীর মধ্যে ৬৮ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। মামলাটি বর্তমানে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল- ২ এ আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য ধার্য রয়েছে।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা মামলায় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন দলের তিন শতাধিক নেতাকর্মী।
১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর শেখ হাসিনা (সংগৃহীত ছবি)
ওই ঘটনার পরদিন মতিঝিল থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে থানা পুলিশ। পুলিশের তদন্তের পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তদন্তের দায়িত্ব পায়। পরে মামলাটি যায় সিআইডিতে। ২০০৮ সালের ১১ জুন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) জ্যেষ্ঠ এএসপি ফজলুল কবির মুফতি হান্নানসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন।
২০০৯ সালের ৩ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি অধিকতর তদন্তের আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান সিআইডির পুলিশ সুপার আবদুল কাহহার আকন্দ। তিনি ২০১১ সালের ৩ জুলাই তারেক রহমানসহ ৩০ জনের নাম যুক্ত করে মোট ৫২ জনের নামে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি অভিযোগপত্র দেন। তবে মামলায় জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় তার নাম বাদ দেয়ায় এখন আসামির সংখ্যা ৫১।
৫১ আসামির মধ্যে তারেক রহমানসহ পলাতক ১৮ জন। জামিনে রয়েছেন আটজন এবং কারাগারে আছেন ২৫ জন। বর্তমানে মামলাটি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এ তদন্ত কর্মকর্তার জেরা চলছে।
ধানমন্ডিতে ফ্রিডম পার্টির হামলা মামলা
এরশাদ সরকারের আমলে ১৯৮৯ সালের ১০ আগস্ট মধ্যরাতে ঢাকার ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডের বঙ্গবন্ধু ভবনে হামলা করে শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। এ ঘটনায় বাড়ির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্য মো. জহিরুল ইসলাম ধানমন্ডি থানায় মামলা করেন।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, ফ্রিডম পার্টির সদস্য কাজল ও কবিরের নেতৃত্বে ১০-১২ জনের একটি দল ৩২ নম্বরের বাড়িতে অতর্কিতে গুলিবর্ষণ ও বোমা হামলা করে। হামলাকারীরা তখন ‘কর্নেল ফারুক-রশিদ জিন্দাবাদ’ বলে স্লোগান দেয়।
মামলাটি বর্তমানে ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে যুক্তি উপস্থাপনের জন্য ধার্য রয়েছে।