বনানীতে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় আলোচিত ‘রেইন ট্রি হোটেল’ কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার একটি সংবাদ সম্মেলন ডাকলেও সেখান থেকে তাদের স্পষ্ট কোনো বক্তব্য আসেনি। ওই সংবাদ সম্মেলনে কার্যত কৌশলী অবস্থান নেয় কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় রেইন ট্রি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান গ্রুপের জিএম রাজা গোলাম মোস্তফা।
গোলাম মোস্তফা তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, দেশজুড়ে আলোচিত এ ঘটনার বিচার চান তারা, বেরিয়ে আসুক প্রকৃত ঘটনা।
তিন তারকা হোটেল ‘রেইন ট্রি’তে ধর্ষণের এ ঘটনায় যে নামগুলো আলোচনায় এসেছে তার মধ্যে একটি আওয়ামী লীগের সাংসদ বজলুল হক হারুনের ছেলে মাহির হারুন।
সংবাদ সম্মেলনে মাহিরের পক্ষে সাফাইও গেয়েছে হোটেল কর্তৃপক্ষ।
রিজার্ভেশনের সময় আইনের কোনো ব্যত্যয় হয়নি বলেও দাবি করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
ঘটনার দিন আপনারা অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনার আলামত বা কোনো শব্দ পেয়েছিলেন কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে কৌশলী অবস্থান নিয়ে বলা হয়- বিষয়টি তদন্তাধীন।
আপনাদের কর্মচারীরা সে দিন কী দেখিছিলেন- এমন প্রশ্নেরও জবাবেও ‘তদন্তাধীন’ বলে দায় সারা হয়।
রেইন ট্রি’র এমডি শাহ মো. আদনান হারুন সাংবাদিকদের এসব প্রশ্নের জবাব দেন।
রেইন ট্রি হোটেল কর্তৃপক্ষ এর আগে দাবি করেছিল, ঘটনার পর দিন সকালে তারা ধর্ষণের শিকার দুই তরুণীকে হাসিমুখে হোটেল থেকে বের হতে দেখেছেন। তবে আগের ওই বক্তব্য আজ অস্বীকার করা হয়।
হোটেলে শুল্ক গোয়েন্দাদের অভিযান নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়।
ফুটেজ মুছে যাওয়া প্রসঙ্গে বলা হয়, ইচ্ছাকৃতভাবে ফুটেজ মুছে ফেলার যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। হোটেলের সুনাম নষ্ট করার জন্য এমন করা হচ্ছে।
ফুটেজ প্রসঙ্গে হোটেল সোনারগাঁও, রেডিসন ও ওয়েস্টিন হোটেলের উদাহরণও টানা হয়।
ধর্ষণের এই ঘটনায় রেইন ট্রি সবচেয়ে বড় ক্ষতিগ্রস্ত বলেও দাবি করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
উল্লেখ্য, গত ২৮ মার্চ বনানীর ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে সাফাত আহমেদ নামে এক বন্ধুর জন্মদিনে যোগ দিতে গিয়েই বন্ধুদের যোগসাজশে ধর্ষণের শিকার হন বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া দুই তরুণী। ওই ঘটনায় ৪০ দিন পর ৬ মে (শনিবার) সন্ধ্যায় বনানী থানায় ৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়।
মামলার আসামিরা হচ্ছেন- সাদনান সাকিফ, তার বন্ধু সাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ, সাফাতের ড্রাইভার বিল্লাল ও তার দেহরক্ষী।
অভিযুক্ত সাফাত আহমেদ আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে। গ্রেফতার হয়ে এখন রিমান্ডে আছেন সাফাত ও তার বন্ধু সাদমান সাকিফ।
মামলা দায়েরের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ওই দুই তরুণীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও ধর্ষণের আলমত সংগ্রহ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। তবে ধর্ষণের আলামত পাওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন ফরেনসিক বিভাগের প্রধান চিকিৎসক সোহেল মাহমুদ। তিনি জানান, ধর্ষণের ঘটনাটি প্রায় দেড় মাস আগের, সে জন্য আদৌ কোনো আলামত পাওয়া যাবে কি না তা নিয়ে আমাদের যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।