‘চিন্তা করিস না, কিছুই হবে না’

‘চিন্তা করিস না, কিছুই হবে না’

শুক্রবার দুপুর আড়াইটা। পুরনো ঢাকার সিএমএম আদালত চত্বরে বিরাজ করছিল ছুটির আমেজ। কিন্তু হঠাৎ করে বাড়তে থাকে ভিড় ও ব্যস্ততা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও তৎপর হয়ে ওঠেন। ধীরে ধীরে আইনজীবী, আসামিদের স্বজন ও গণমাধ্যম কর্মীদের ভিড় বেড়ে যায়। খবর ছড়িয়ে পড়ে, বনানীতে দুই তরুণী ধর্ষণ মামলার দুই আসামি সাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফকে হাজির করা হচ্ছে। আধা ঘণ্টার ব্যবধানে আদালত এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়।

বিকাল তিনটার পরপরই আসামিপক্ষের স্বজন ও আইনজীবীরা প্রবেশ করেন আদালতে। লোকজন না থাকায় তারা সেখানে নিজেদের মধ্যে শলা-পরামর্শ করতে থাকেন। এসময় সাদমান সাকিফের বাবা মোহাম্মদ হোসেইন জনি ছিলেন খুবই তৎপর। তিনটা ২০ মিনিটে আদালতের কক্ষ আইনজীবী ও পুলিশে ভরপুর ওঠে। এরমধ্যে দুই আসামি সাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফকে কাঠগড়ায় হাজির করা হয়। কাঠগড়ায় সাফাতকে দেখেই স্বজন ও তার আইনজীবীরা কাছে ছুটে যান। সবাই সাফাতকে ঘিরে ধরে শলা-পরামর্শ শুরু করেন। তবে পুলিশের বাধা পেয়ে তাদের পরামর্শ বন্ধ হয়ে যায়। এসময় অবশ্য সাদমান সাকিফ কিছুটা আড়ালে থাকার চেষ্টা করেন। সাফাত খুঁজে বেড়ান তার স্বজনদের।

এজলাসের পেছনের দিকে বসেছিলেন সাদমানের বাবা মোহাম্মদ হোসেইন জনি। তার দিকে তাকিয়েই সাদমান হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দেন। তখন তার বাবা জনি তাকে বলেন, ‘চিন্তা করিস না। কিছুই হবে না।’ একইভাবে সান্তনা দিতে লাগলেন সাফাত-সাদমানের স্বজনরা। কিছুক্ষণ পরপরই তারা পানির বোতল সরবরাহ, আর পরামর্শ দিচ্ছিলেন।আসামিদের সঙ্গে কথা বলা এই ব্যক্তিদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা নিজেদের পরিচয় দিতে অস্বীকৃতি জানান। শুধু বলেন, তারা সাদমান ও সাফাতের আত্মীয়।

আসামিপক্ষের একজন আইনজীবী বলেন, সাফাত ও সাদমানের রিমান্ড না মঞ্জুরের জন্য সাদমানের বাবা মোহাম্মদ হোসেইন জনি-ই মূলত আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। এসময় সাদমানের বাবার সঙ্গে সঙ্গে ঘুরছিলেন সাফাতের স্বজনরাও। মোহাম্মদ হোসেইন জনি সাদা শার্ট পরিহিত ছিলেন। অনেকের কাছে তাকে সাফাতের বাবা দিলদারের মতো মনে হলেও জনি সাংবাদিকদের বলেন, তিনি সাফাতের বাবা নন, নিকটাত্মীয়। তবে কোন ধরনের আত্মীয় সেটি বলেননি তিনি।

পরিচয় না দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে টুপি ও পাঞ্জাবি পরিহিত সাফাতের একজন আত্মীয় বলেন, পরিচয় দেওয়ার মতো অবস্থা থাকলে তো দেবে। এগুলো জেনে আর কী হবে। সাংবাদিকদের কারণেই আজ আমাদের এই অবস্থা হল। এ সময় তাদের সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার শফিকুল কবির খান তাপস ও ব্যারিস্টার মনির তানভীরসহ অন্তত ১৫ জন আইনজীবী।

আইনজীবীরা নিজেরাই বললেন, তারা আসামিদের পক্ষে লড়াইয়ের জন্য ওকালতনামায় সই করেছেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবীদের অনেকেই তখন জোরে জোরে বলছিলেন, ‘পিয়াসা’ নামের মেয়েটিই সব নাটের গুরু। সেই মেয়েই ছেলেগুলোকে ফাঁসিয়েছে। তিনটা ২৫ মিনিটে এজলাসে বসেন মহানগর মুখ্য হাকিম রায়হান-উল-ইসলাম। তিনি তার কাছে পেশ করা মামলার যাবতীয় কাগজ ও নথিপত্র দেখছিলেন। দেখা শেষ হওয়ার পরই রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলতে থাকেন, গ্রেফতার হওয়া আসামিরাই শুধু দুই মেয়ের জীবন নষ্ট করেনি। তাদের সঙ্গীরাও একই কাজ করেছে। শুধু তাই নয়, ভিডিও করে ব্ল্যাকমেইল করেছে। তাই এধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডের সঠিক তদন্ত ও পালিয়ে থাকা আসামিদের গ্রেফতার করার জন্য আরও জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে।
আসামিপক্ষের দুজন আইনজীবী পর্যায়ক্রমে মামলার এজাহারের তথ্য উল্লেখ করে বলেন, এজাহারের কোথাও সাদমান সাকিফের ধর্ষণের তথ্য নেই। সে শুধু পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। তাই তার কোনও দোষ নেই।

আসামিপক্ষের অপর আইনজীবী বলেন, এজাহারে যে গাড়ি ও চাবির কথা বলা হয়েছে, সেই তথ্য অনুযায়ী বাদীর বক্তব্যে অনেক গড়মিল আছে। এছাড়া ওই আইনজীবী শাহরিয়ার নামে জনৈক ব্যক্তির ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলে মামলাটি সাজানো বলে যুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করেন।

পরে উভয়পক্ষের বক্তব্য শেষ হলে বিচারক রায়হান উল ইসলাম আসামি সাফাত আহমেদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছয় দিন ও সাদমান সাকিফকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

বাংলাদেশ