‘দ্য রেইন ট্রি’তে অবৈধ বার, মাদক বিক্রি

‘দ্য রেইন ট্রি’তে অবৈধ বার, মাদক বিক্রি

দুই তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনায় আলোচিত রাজধানীর বনানীর ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলের বিরুদ্ধে বার পরিচালনা ও মাদকদ্রব্য সরবরাহের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ইতোমধ্যে হোটেলটির সার্বিক কার্যক্রম পর্যালোচনায় গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে হোটেলটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানিয়েছেন অধিদফতরের কর্মকর্তারা।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মহানগর এলাকায় মোট ৫২টি প্রতিষ্ঠানের রয়েছে মাদকদ্রব্য বিক্রির লাইসেন্স। এর মধ্যে হোটেল রিজেন্সির রয়েছে সাতটি, হোটেল সোনারগাঁওয়ের রয়েছে নয়টি লাইসেন্স। ওই ৫২ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নেই রেইন ট্রির নাম।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, রেইন ট্রি হোটেলে নিয়মিত মাদক বিক্রি ও গোপনে বার পরিচালনা এবং মাদকদ্রব্য সরবরাহের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এছাড়া সম্প্রতি দুই তরুণী ধর্ষণের ঘটনার রাতে অভিযুক্ত ধর্ষকরা মদপান করেছেন। যার অনুমোদন নেই হোটেলটিতে। ফলে এ ধরনের অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগে ওই হোটেল কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহিতা, নোটিশ করা ও কার্যকর আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন তারা।

গত ২৮ মার্চ রাতে ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে সাফাত আহমেদ নামে এক বন্ধুর জন্মদিনে যোগ দিতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হন দুই তরুণী। ওই ঘটনায় ৪০ দিন পর গত ৬ মে সন্ধ্যায় বনানী থানায় পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেন তারা।
বনানী থানা ও দুই তরুণীর অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, রেইন ট্রি হোটেলে দুই তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনার রাতে ধর্ষকরা ছিলেন মাতাল। অভিযুক্ত সাদমান সাকিফ, তার বন্ধু সাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ, সাফাতের গাড়ি চালক বিল্লাল ও তার দেহরক্ষী (নাম পাওয়া যায়নি) ঘটা করে মদপান করেন।

পরে ওই দুই তরুণীর ওপর চলে পাশবিক নির্যাতন। ওই রাতে ধর্ষণে অভিযুক্তদের মদপানের সব ব্যবস্থা করে দেয় হোটেল কর্তৃপক্ষ। পুরনো সখ্যতা ও পারিবারিক আভিজাত্যের প্রভাবেই হোটেল থেকে সব কিছু ম্যানেজ করে নেয় ‘ধর্ষকরা’।
রেইন ট্রি’র দু’জন কর্মকর্তা, বেয়ারা এসে খোঁজ নিয়ে যায় সব ঠিকমতো চলছে কিনা। বাইরে দাঁড়ানো সাফাতের বডিগার্ড আবুল কালাম আজাদ পাহারা দিতে থাকেন।
দুই তরুণীর দাবি, হোটেলটির কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ ও সিসিটিভির (ক্লোজ সার্কিট টেলিভিশন) ফুটেজ উদ্ধার করা গেলেই সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে।
তবে রেইন ট্রি হোটেলের এক্সিকিউটিভ (ইন্টারনাল অপারেশন) ফারজান আরা রিমি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের এখানে বার নেই। মাদক বিক্রি কিংবা মাদক সাপ্লাইও দেয়া হয় না।’

ওই রাতে অভিযুক্তরা হোটেলে বসেই মদপানের পর মাতাল অবস্থায় দুই তরুণীকে ধর্ষণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বুকিং করা কক্ষের ভেতরে তারা আদৌ মদপান করেছেন কিনা দেখার সুযোগ নেই।’ বিষয়টি হোটেল কর্তৃপক্ষের অজ্ঞাত বলেও দাবি করেন তিনি।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক (অপারেশন) তৌফিক উদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘হোটেলটির বারের লাইসেন্স নেই। আমাদের মাঠপর্যায়ের অফিসারদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রেইন ট্রি হোটেলসহ অন্যান্য যেসব হোটেল অবৈধভাবে মাদকের ব্যবসা করছে, এর তালিকা করতে বলা হয়েছে।’
‘মাদক বিক্রি, কিংবা সাপ্লাই অথবা অবৈধভাবে অনুমতি ছাড়া বার পরিচালনার প্রমাণ মিললে অবশ্যই হোটেলটির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে’- জানান তিনি।

মাদকব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ঢাকা বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক গোলাম কিবরিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘বনানী ও গুলশান এলাকার উপর নজরদারি রাখা হয়। তবে জনবল কম থাকায় সবসময় নজরদারি রাখা সম্ভব হয় না। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে কয়েকটি হোটেলের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।’
তিনি জানান, রাজধানীর ৫২টি প্রতিষ্ঠানের বারের লাইসেন্স রয়েছে। এর মধ্যে দ্য রেইন ট্রির নাম নেই। এছাড়া লাইসেন্সপ্রাপ্ত কোনো প্রতিষ্ঠানও লেট নাইট কার্যক্রমের অনুমতি ছাড়া রাত সাড়ে ১০টার পর বার খোলা রাখতে পারে না। সেখানে রেইন ট্রি হোটেলের বিরুদ্ধে অনুমোদন ছাড়া মাদক বিক্রি ও সরবরাহের মতো অবৈধ কার্যক্রমের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আমরা পেয়েছি। এ বিষয়ে তদন্ত করছি। তদন্তসাপেক্ষে অভিযান ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বাংলাদেশ