নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ (মোবাইল কোর্ট) আদালত পরিচালনা অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ক্ষমতা থাকবে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের হাতে।
এ সংক্রান্ত তিনটি রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার হাইকোর্র্টের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এই রায় ঘোষণা করেন।
আদালতে আজ রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী হাসান এম এস আজিম। রাজউকের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন।
পৃথক দুটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ছয় বছর আগে এবং অপর একটির রিটের পরিপ্রেক্ষিতে পাঁচ বছর আগে এই বিষয়ে রুল হয়েছিল। রুলের ওপর গত মার্চে শুনানি শেষে আদালত আবেদনগুলো রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছিলেন। এরপর কার্যতালিকায় আজ রায় ঘোষণার জন্য আসে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ আইনটির কয়েকটি বিধান কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন বলেন, তিনটি রিট আবেদনের ওপর আজ রায় ঘোষণা করা হয়।
জানা যায়, ভবন নির্মাণ আইনের কয়েকটি ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০১১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর এসথেটিক প্রপার্টিজ ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান খানকে ভ্রাম্যমাণ আদালত ৩০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। সে বছরের ২০ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পান তিনি। এরপর ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন (মোবাইল কোর্ট অ্যাক্ট-২০০৯) কয়েকটি ধারা ও উপধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ১১ অক্টোবর কামারুজ্জামান হাইকোর্টে রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে রিট আবেদনকারীর (কামরুজ্জামান) সাজা কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি সাজার আদেশ স্থগিত করা হয়।
আইনজীবী সূত্র বলেছে, ভবন নির্মাণ আইনের কয়েকটি ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০১১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর টয়নবি সার্কুলার রোডে অবস্থিত এক বাড়ির মালিক মো. মজিবুর রহমানকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ৩০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। আইনের বিধান ও অর্থ ফেরতের নির্দেশনা চেয়ে ওই বছরের ১১ ডিসেম্বর রিট করেন মজিবুর। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই দিন হাইকোর্ট রুলসহ সাজার আদেশ স্থগিত করেন।
এ ছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের কয়েকটি বিধানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১২ সালে ২ মে দিনাজপুরের বেকারি মালিকদের পক্ষে মো. সাইফুল্লাহসহ ১৭ জন আরেকটি রিট করেন। এতে বেকারিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ক্ষেত্রে খাদ্য বিশেষজ্ঞ ও পরীক্ষার জন্য যন্ত্রপাতি সঙ্গে রেখে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা চাওয়া হয়। শুনানি নিয়ে ওই বছরের ৮ মে হাইকোর্ট রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন।
রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী হাসান এম এস আজিম বলেন, রুলে ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের ধারা ৫,৬(১), ৬(২), ৬(৪), ৭, ৮(১), ৯, ১০, ১১, ১৩, ১৫ কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। তিন রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হওয়া রুল একসঙ্গে শুনানি হয়।
আইনজীবী আজিম বলেন, রিটে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ও বিচার করার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। ওই ধারাগুলো সংবিধান, মাসদার হোসেন মামলার রায় ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার পরিপন্থী।