সাত খুন মামলায় আইনজীবী নিয়োগে আদেশ ১৫ মে

সাত খুন মামলায় আইনজীবী নিয়োগে আদেশ ১৫ মে

বহুল আলোচিত চাঞ্চল্যকর নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনার মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিদের নিয়মিত ও জেল আপিল এবং ডেথ রেফারেন্সের শুনানির জন্য আইনজীবী নিয়োগ বিষয়ে আদেশ ১৫ মে।
বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ আজ এ দিন ধার্য করে আদেশ দেয়। চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি এ আদালতে আজ কার্যতালিকার ১ (ডেথ রেফারেন্স ৩/২০১৭) এবং ২ (ডেথ রেফারেন্স ৪/২০১৭) ছিলো।
সাতখুন মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত কৌসুলী নিয়োগের বিষয়ে আজ আদেশের জন্য দিন ধার্য ছিল। আদেশ দেয়ার পূর্বে জামাল উদ্দিন নামে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত এক আসামির আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাক আদালতকে বলেন, “জামাল উদ্দিন রায় ঘোষণার সময় পলাতক ছিলেন। পরে তিনি নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এখন তিনি কারাগার থেকে বিলম্ব মার্জনা সহকারে হাইকোর্টে আপিল দায়ের করেছেন। ওই আপিলটি হাইকোর্টে বিচারাধীন। এই আবেদনের উপর আদেশ না দেয়া পর্যন্ত তার রাষ্ট্রনিযুক্ত কৌসুলীর বিষয়ে এই আদালতের আদেশ দেয়া ঠিক হবে না।” এরপর তিনি সময় প্রার্থনা করেন।
এ সময় আদালত বলেন, নারায়ণগঞ্জের সাতখুনের মামলা ‘সেনসেশনাল মামলা’। এ মামলা চাঞ্চল্যকর। এরপর আদালত সোমবার ১৫ মে পর্যন্ত আদেশের জন্য দিন ধার্য রাখেন এবং ওই দিন মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি জামাল উদ্দিনের বিলম্ব মার্জনার দরখাস্ত হাইকোর্ট মঞ্জুর করেছেন কি না সে বিষয়ে আদালতকে অবহিত করতে তার আইনজীবীকে বলেন। ওই দিন মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত অন্যান্য পলাতক আসামিদের পক্ষেও রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী নিয়োগের বিষয়ে আদেশ দেবে আদালত।
আসামিপক্ষে এডভোকেট এস এম শাজাহান ও এম আমিনুল উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল জহিরুল হক। গত ৭ মে মামলার পেপার বুক হাইকোর্টে এসেছে। পেপারবুকটি প্রায় ছয় হাজার পৃষ্ঠার।
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ১৬ আসামিদের নিয়মিত ও জেল আপিল শুনানির জন্য গত ৮ ফেব্রুয়ারি গ্রহণ করে হাইকোর্ট। প্রধান বিচারপতি এ মামলা দ্রুত শুনানির জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক প্রস্তুতের জন্য হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখাকে নির্দেশ দেন। হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখা থেকে পেপারবুক প্রস্তুতের জন্য মামলার সকল নথি বিজি প্রেসে পাঠানো হয়। এরপরই বিজি প্রেস পেপারবুক প্রস্তুত করে।
সাত খুন মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে নূর হোসেন, তারেক সাঈদ, আরিফ হোসেন, মাসুদ রানা, এমদাদুল হক (হাবিলদার), বেলাল হোসেন, আবু তৈয়ব, শিহাব উদ্দিন, এসআই সুনেন্দু বালা, পূর্ণেন্দু বালা, আসাদুজ্জামা নূর, মূর্তজা জামান চার্চিল, আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান বিপু, আবুল বাশার ও রহম আলী হাইকোর্টে নিয়মিত আপিল ও জেল আপিল দায়ের করেছেন। চাঞ্চল্যকর সাত খুনের মামলায় গত ১৬ জানুয়ারি সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেন ও র‌্যাবের বরখাস্তকৃত তিন কর্মকর্তাসহ ২৬ জনকে মৃত্যৃদন্ড দিয়ে নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেন রায় দেয়। এ মামলার ৩৫ জন আসামির মধ্যে বাকি ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। সাজাপ্রাপ্ত ৩৫ আসামির মধ্যে ১১ জন এখনো পলাতক।
গত ২২ জানুয়ারি ১৬৩ পাতার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। ওইদিনই পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি, জুডিশিয়াল রেকর্ড, সিডিসহ বিভিন্ন নথিপত্র (ডেথ রেফারেন্স) হাইকোর্টে পৌঁছে দেয় বিচারিক আদালত।
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল বেলা দেড়টার দিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন। তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীতে একে একে ভেসে ওঠে ছয়টি লাশ। পরদিন মেলে আরেকটি লাশ। নিহত অন্যরা হলেন নজরুলের বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম ও চন্দন সরকারের গাড়িচালক মো. ইব্রাহীম।
ঘটনার এক দিন পর কাউন্সিলর নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বাদী হয়ে নূর হোসেনসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করেন।

আইন আদালত