বিআইএর নির্বাচনে নতুন ‘কালিমা’

বিআইএর নির্বাচনে নতুন ‘কালিমা’

নির্বাচন নিয়ে বছরের পর বছর ধরে ‘নাটক’ করে আসছে বীমা মালিক ও নির্বাহীদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন’ (বিআইএ)। এবার সে নাটকের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন ‘কালিমা’।

অযোগ্য ব্যক্তিকে ভোটার বানিয়ে কার্যনির্বাহী কমিটিতে রাখা এবং যোগ্য ব্যক্তিকে অনৈতিকভাবে বাদ দিতে পাঁয়তারা চালানোর অভিযোগ উঠেছে সংগঠনের কর্তাব্যক্তিদের বিরুদ্ধে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নামের বানান ভুল দেখিয়ে বিআইএর কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বচনের প্রার্থীর তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয় পপুলার লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বি এম ইউসুফ আলীকে। মনোনয়নপত্রে ইংরেজিতে লেখা ইউসুফ (Yousuf) এর ‘এফ’ এর পরিবর্তে লেখা হয় ‘পি’।

অভিযোগ রয়েছে, ইউসুফের এফ সঠিকভাবেই লেখা হয়। কিন্তু মনোনয়নপত্র বাছাই কমিটির সদস্যরা অথবা বিআইএর কর্মকর্তারা অনৈতিকভাবে এফ বদলে পি করে দিয়েছেন। বিআইএর প্রভাশালী এক ব্যক্তির নির্দেশে এ কাজ করা হয়েছে।

বিআইএকে উপেক্ষা করে বীমা নির্বাহীদের জন্য ‘বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ফোরাম’ (বিআইএফ) নামে নতুন সংগঠন গড়ে তোলায় প্রভাশালী ওই ব্যক্তির ইউসুফ আলীর ওপর ক্ষোভ রয়েছে। যে কারণে ইউসুফ আলী যাতে বিআইএর কমিটিতে থাকতে না পারেন সে চেষ্টা করা হয়।

তবে ব্যক্তি বিশেষের এমন অপচেষ্টা শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি। আপিল কমিটির কাছে আপিল করে মনোনয়নের বৈধতা ফিরে পেয়েছেন বি এম ইউসুফ আলী। পপুলার লাইফের এই সিইওর মতো প্রাথমিক বাছাইয়ে বাদ পড়া আরও ছয় প্রার্থীও তাদের মনোনয়নের বৈধতা ফিরে পেয়েছেন।

তবে চক্রান্তের শিকার হয়ে বাদ পড়েছেন ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম। ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিআইএর সদস্য হয়েছেন আপেল মাহমুদ। সদস্য হতে বিআইএতে করা আবেদনে আপেল উল্লেখ করেছেন তিনি আলফা ইসলামী লাইফের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। অথচ আলফা ইসলামী লাইফ থেকে তাকে সিইও হিসেবে অনুমোদন চেয়ে আবেদন করলে তা অনুমোদন করেনি বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। প্রয়োজনীয় যোগ্যতা না থাকার অভিযোগ উঠায় আপেলের যোগ্যতার প্রমাণ চেয়েছে আইডিআরএ।

এ পরিস্থিতিতেই নিজেকে আলফা লাইফের সিইও উল্লেখ করে বিআইএতে ভোটার হওয়ার আবেদন করেন আপেল। সেই আবেদন গ্রহণ করে তাকে ভোটারও বানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে বিআইএর কর্যনির্বাহী সদস্য নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগও দেয়া হয়েছে তাকে।

বিআইএ সূত্রে জানা গেছে, আগে বিআইএর কার্যনির্বাহী কমিটি ছিল ১৫ সদস্যবিশিষ্ট। এদের মধ্যে সাধারণ বীমা কোম্পানি থেকে ১০ জন এবং জীবন বীমা কোম্পানি থেকে পাঁচজন থাকতেন। এবারের নির্বাচন (২০১৭-১৮) উপলক্ষে বিআইএর গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করে কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে ২০ জন করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১০ জন সাধারণ বীমা এবং ১০ জন জীবন বীমা থেকে থাকবেন।

১৯৮৮ সালে গঠন করা হয় বিআইএ। এরপর থেকে প্রতি দুই বছর পর পর কার্যনির্বাহী কমিটি গঠনের উদ্দেশে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়া হয়। নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী বোর্ডও গঠন করা হয়। কিন্তু সেই বোর্ড ধারাবাহিকভাবে সব প্রস্তুতি নিলেও শেষ পর্যন্ত সরাসরি নির্বাচন আর হয় না। এবারও যাতে সরাসরি নির্বাচন না হয় সেই চেষ্টা করা হয়।

এবারের নির্বাচনে অংশ নিতে সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলো থেকে ১৪ জন ও জীবন বীমা কোম্পানি থেকে নয়জনসহ মোট ২৩ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন। এদের মধ্যে প্রাথমিক বাছাইতে বি এম ইউসুফ আলী ও তাজুল ইসলামসহ আট প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। তাজুল ইসলামের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয় প্রথম প্রস্তাবকের টিআইএন নম্বর ভুল এবং দ্বিতীয় প্রস্তাবকের নাম সঠিকভাবে না লেখার কারণ দেখিয়ে।

বাকি ছয় প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয় ওভার রাইটিংয়ের কারণে। এই ছয় প্রার্থী হলেন ফারইস্ট ইসলামী লাইফের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের সিইও মো. ইমাম শাহীন, তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান মো. আবুল হাসেম, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ মাহিন, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান সৈয়দ আল ফারুকী এবং ফেডারেল ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান এনামুল হক।

যোগাযোগ করা হলে বিআইএর মহাসচিব নিশীথ কুমার সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রাথমিক বাছাইয়ে যারা বাদ পড়েছিলেন তাদের মধ্যে একজন বাদে বাকি সবাই আপিল করে মনোনয়নের বৈধতা ফিরে পেয়েছেন।’

বিএম ইউসুফ আলীর নামের বানান ‘ভুল’ চক্রান্ত করে করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে; এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘হলেও হতে পারে। তবে বিষয়টি আমার জানা নেই।’

আপেল মাহমুদের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আপেল মাহমুদকে আইডিআরএ থেকে অনুমোদন দেয়া হয়নি এ বিষয়টি আমাদের জনা নেই। আমাদের কাছে এ বিষয়ে কেউ অভিযোগও করেনি। যদি সত্যিই আইডিআরএ থেকে তাকে আলফা লাইফের সিইও হিসেবে অনুমোদন না দেয়া হয়, তবে বিআইএ থেকে তার সদস্যপদ বাতিল করা হবে।’

অর্থ বাণিজ্য