গত ১৫ এপ্রিল রোববার আফগানিস্তানের পার্লামেন্ট ভবন এবং সুরক্ষিত কূটনৈতিক পাড়ায় একযোগে হামলার আগে দীর্ঘ দু’মাস মহড়া দিয়েছে হামলাকারী জঙ্গি সংগঠন তালেবান।
তালেবানের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, হামলার আগে কয়েক মাস যাবৎ খুব সতর্কতার সঙ্গে মহড়া দিয়েছে তারা। এমনকি ছোট আকারে সামরিক বাহিনীর মতো করে টিম গঠন করে এবং অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়েছে তারা।
আর হামলার আগে ভারী মেশিনগান, রকেট চালিত গ্রেনেড এবং বিস্ফোরক দ্রব্য আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর সহায়তায়ই জায়গা মতো রাখা হয়েছিল তবে নিরাপত্তা বাহিনী সার্বিক কাজে সহায়তা করেনি বলে জানিয়েছেন তিনি।
তালেবানের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, কীভাবে তারা গুরুত্বপূর্ণ স্থানে একযোগে হামলার কৌশল নির্ধারণ করেছেন। এ হামলা নিঃসন্দেহে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনী এবং আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য এক প্রকার অকস্মাৎ মানসিক আঘাত বলে বর্ণনা করছে তালেবান।
মুজাহিদ জানিয়েছেন, পার্লামেন্ট ভবন, ন্যাটোর বিভিন্ন ঘাঁটি এবং পশ্চিমা দূতাবাসগুলোতে একযোগে হামলার জন্য তারা ৩০ সদস্যের একটি সুইসাইড স্কোয়াড গঠন করেছিলেন। আর এ বাহিনী গঠনের জন্য দুই মাস যাবত আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।
রয়টার্সের সঙ্গে ফোন সাক্ষাতকারে মুজাহিদ বলেছেন, ‘আমাদের সামরিক শাখার বিশেষজ্ঞরা লক্ষস্থানের ম্যাপ একেঁছেন করেছেন এবং চারটি প্রদেশে বড় আকারের হামলা চালানোর আগে এসব লক্ষস্থানগুলোর একটি নমুনা তৈরি করে জিহাদিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। লক্ষস্থানে কীভাবে প্রবেশ করতে হবে এবং দ্রুত নিয়ন্ত্রণে নিতে হবে তাও যোদ্ধাদের শেখানো হয়।
তিনি আরো জানান, আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে যেসব তালেবান যোদ্ধা নিহত হয়েছে তাদের প্রায় ৫০ হাজার যোদ্ধা যারা দেশজুড়ে ন্যাটো এবং আফগান বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়ছে তাদের মধ্য থেকে নির্বাচন করা হয়েছিল এবং তাদের বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
তবে হামলায় অন্য জঙ্গি গ্রুপের অংশ গ্রহণের খবর অস্বীকার করেছেন মুজাহিদ। কাবুল হামলার পর অনেকে দাবি করেছিলেন, হামলায় তালেবানের সঙ্গে পাকিস্তানভিত্তিক হাক্কানি নেটওয়ার্কের সদস্যরাও যুক্ত ছিলেন।
এ গ্রুপটির ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে অনেক দিন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে চাপ দিয়ে আসছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, কৌশলগত কারণে পাকিস্তান এদের ব্যাপারে কঠোর হচ্ছে না। এখন কাবুল হামলার সঙ্গে হাক্কানি গ্রুপের কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে ইসলামাবাদ-ওয়াশিংটন সম্পর্কে আবার টান পড়বে।
কিন্তু এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করে মুজাহিদ বলেছেন, ‘এটি আমাদের জন্য খুবই সফল একটি হামলা ছিল এবং এটি আমাদের বড় অর্জন। তবে যদিও হাক্কানি তালেবানেরই একটি অংশ কিন্তু আমরা এ হামলার জন্য তাদের কাছে কোনো ধরনের সহায়তা, দিক নির্দেশনা বা সমর্থন চাইনি।’
হাক্কানি জড়িত ছিল অনেকের এমন দাবির জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা পশ্চিমাদের একটি ভিত্তিহীন চক্রান্ত। তারা বুঝাতে চায় আমরা আলাদা সংগঠন।’
উল্লেখ্য, গত ১৫ এপ্রিল কাবুলের সুরক্ষিত এলাকায় এবং কয়েকটি প্রদেশে এক যোগে তালেবান হামলা করে। এ সময় আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তালেবান যোদ্ধাদের তুমুল লড়াই হয়। টানা ১৮ ঘণ্টা পর লড়াই শেষ হয় পরদিন সোমবার। এ হামলায় কমপক্ষে ৫০ জন নিহত এবং আরো অনেকে আহত হয়। নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই তালেবান যোদ্ধা বলে জানা গেছে।