আজহার তালুকদার। ঠাকুরগাঁও শহরের রোড এলাকার বাসিন্দা। ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের কেবিনে ভর্তি করা হয়েছে তার মাকে। গতরাতে হাসতালের কেবিন থেকে আজহার তালুকদারের মোবাইল ফোনটি চুরি হয়ে যায়।
শুধু আজহারের নয় হাসপাতাল থেকে গত এক মাসে মোবাইল ও টাকা চুরির ঘটনায় উদ্বিগ্ন রোগী ও তাদের স্বজনরা।
মধ্যবিত্ত ও হতদরিদ্র মানুষেরা চিকিৎসার জন্য ছুটে আসেন ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত কারণে সরকারি এই হাসপাতালটিতে একের পর এক মোবাইল, টাকা ও রোগীদের সঙ্গে থাকা মূল্যবান জিনিসপত্র চুরির ঘটনা সবসময় ঘটছে।
এতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনেরা পড়ছেন বিপাকে। এসব ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ করেও আশানুরূপ কোনো ফল পাচ্ছে না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
সরেজমিনে এই প্রতিবেদক রাতের হাসপাতালের চিত্র তুলে ধরার জন্য অবস্থান করছিলেন হাসপাতালে। বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, রোগী ও স্বজনরা ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন। আশপাশে মোবাইল ফোন ও অন্যন্যা প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। কে আসছে বা চলে যাচ্ছে গভীর ঘুমের কারণে বলতেও পারছেন না অনেকেই। আর সেই সুযোগটা নিচ্ছে হাসপাতালের সামনে থাকা কতিপয় নেশাগ্রস্ত কিছু যুবক ও ছিঁচকে চোর।
ভূক্তভোগী আজহার জানান, কেবিনের ভেতর থেকে যদি আমার মোবাইল ফোনটি চুরি হয়ে যায়। তাহলে বাইরের অবস্থাতো আরও করুন। কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি নজরে এনে চুরি প্রতিরোধ করা জরুরি।
Thakurgaon
রাণীংশকৈল থেকে ইসরাফুল নামে এক রোগীর স্বজন জানান, কর্তৃপক্ষের নানা অবহেলায় শুধু চিকিৎসায় অবহেলায় নয় হাসপাতাল থেকে মোবাইল চুরি, ওষুধ চুরি ও টাকাসহ বিভিন্ন সময়ে অনেক মূল্যবান জিনিস চুরি যাচ্ছে। কিন্তু কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই।
সদর উপজেলা গড়েয়া এলাকার কিসমত আলী জানান, সরকারি এই হাসপাতালটিতে রাতের বেলায় কোনো পাহারাদার থাকে না। কিছু ছিঁচকে চোর এসকল মোবাইল, টাকা চুরির সঙ্গে জড়িত। হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডে যদি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা যায় তাহলে নিরাপত্তা বাড়বে বলে জানান তিনি।
রোগী নিমাজ উদ্দিন জানান, দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে রাত ১০টার পর কোনো অসুবিধা ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারে না। কিন্তু ঠাকুরগাঁও হাসপাতালে যে যার ইচ্ছে মত আসা যাওয়া করে। ফলে নানা রকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। হাসপাতালে রাতের বেলা নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ দিলে ও রাত ১০টার পর সাধারণ মানুষের অসুবিধা ছাড়া প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করলে চুরিসহ অনেক সমস্যা সমাধান হবে বলে মনে করছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ওয়ার্ড বয় জানান, গত ৬ মাসে প্রায় ২ শতাধিক মোবাইল ও বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিস হাসপাতাল থেকে হারিয়েছে। মূল দরজা সব সময় খোলা থাকে বলে কে কখন আসে বুঝাই যায় না।
হাসপাতাল সূত্র থেকে জানা গেছে, আউটডোরে সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। দিনের বেলায় আনসার সদস্য থাকে। সার্বক্ষণিক রোগীর নিরাপত্তার জন্য কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থাপনা গ্রহণের উদ্যোগ নিচ্ছেন।
ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক অফিসার ডা. সুব্রত জানান, চুরির বিষয়টি বড় আকার ধারণ করছে। সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগের জন্য ইতোমধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। জনবল সংকট নিরসন হলেই রোগী ও স্বজনরা নিরাপত্তায় থাকবে।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান জানান, হাসপাতালে রাতে আমাদের টহল গাড়ি প্রতিদিনই অবস্থান করে। তাছাড়ার রোগীর প্রয়োজনীয় মালামাল, মোবাইল নিজ দায়িত্বে রাখলে অনেক চুরি কমে যাবে। তাই নিজেকেই সচেতন হতে হবে।