গত বছরের চেয়ে এ বছর ২৫ শতাংশ সদস্য সংখ্যা কমে গেছে বামদের। ২০১১ সালে ভরাডুবির পর সিপিএমের সংগঠন ক্রমশ ভাঙছে। জনসমর্থনও তলানিতে। বছর বছরই কমছে দলের প্রাথমিক সদস্যের সংখ্যা। আলিমুদ্দিন সূত্রে খবর, বাম ছেড়ে রামের শিবিরে ভিড়ছেন কমরেডরা। আর সে কারণেই কি বিজেপিকে ঠেকাতে তৃণমূলকে পাশে চাইছেন সিপিএম নেতারা? জল্পনা তুঙ্গে। ‘দুষ্ট গরুর থেকে শূন্য গোয়াল ভালো’ এই নীতি নিয়েছিল সিপিএম। নিষ্ক্রিয় কর্মীদের দল থেকে তাড়ানো হচ্ছিল। কিন্তু এখন সেই পদক্ষেপ করতেও ভয় পাচ্ছেন আলিমুদ্দিন। নিষ্ক্রিয় হলেও তো দলীয় কর্মী। তাড়িয়ে দিলে তো সংগঠনটাই লাটে উঠে যাবে। তাই আপাতত বিরত থাকছে সিপিএম। গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত ছিল সদস্যপদ নবায়নের শেষ তারিখ। তাতে দেখা যাচ্ছে সদস্য সংখ্যা ২৫ শতাংশ কমেছে।
গত বছরের হিসাব অনুযায়ী দলের সদস্য ছিল প্রায় পৌঁনে তিন লাখ। এবার আলিমুদ্দিনের রিপোর্ট, প্রায় ২৫ শতাংশ সদস্য কমেছে দলের। তা প্রায় ৭০ হাজারের মতো। এক ধাক্কায় এই বিপুল সদস্য কমে যাওয়া প্রায় বেনজির। কোনো রাজনৈতিক দলেই এটা হয় না। এভাবে সদস্য কমতে থাকলে আগামীতে সভা-সমাবেশে লোক আনা কঠিন হয়ে পড়বে।
‘সাম্প্রদায়িক’ বিজেপিকে রুখতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বামদের আলোচনায় বসা উচিত, গৌতম দেবের এমন মন্তব্য নিজে কানে শুনেও বিশ্বাস করতে সমস্যা হয়েছে অনেকের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মানতেই হয়েছে খবরের সত্যতা। কিন্তু সত্যিই কি ভিত্তি আছে এমন কোনো সম্ভাবনার? সাম্প্রতিক ভারতীয় রাজনীতির ইতিহাসে প্রাদেশিক দলগুলো নিয়ে কংগ্রেস ও বিজেপি-বিরোধী জোট তৈরির চেষ্টা সফল হয়নি। নিজেদের দূর্গ বাঁচাতে ব্যস্ত দলগুলো ভোটের আগে একজোট হলেও ভোট মিটতেই যে যার আখের গোছাতে নেমে পড়েছে। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগের ঘটনাই ধরা যাক।
একের পর এক নির্বাচনে হারছে বামরা। সদ্য কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্র ও কাঁথি দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্র উপনির্বাচনে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বিজেপি। উল্লেখ্য, দুটি জায়গাতেই এক বছর আগেও বামরাই ছিল প্রধান বিরোধী-শক্তি। দক্ষিণ কাঁথিতে তো বামদের জামানতই জব্দ হয়েছে। এই অবস্থায় দলের কর্মীরা যে বিজেপিতে নাম লেখাচ্ছেন, তা স্বীকার করে নিচ্ছেন নেতারা। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলকে সমর্থন করলে কি লাভবান হবে সিপিএম? সেনিয়েও প্রশ্ন থাকছে। এভাবে তো গোটা দলটাই চলে যাবে বিজেপিতে।
ইউপিএ সরকারের প্রথম পর্বের পর অনেকেই কংগ্রেসের ভরাডুবি হবে বলে দাবি করেছিলেন। নির্বাচনের আগে একজোটও হয়েছিল কিছু আঞ্চলিক দল। তার মধ্যে ছিল বামরাও। কিন্তু ভোটের ফল বেরোতে যখন দেখা গেল কংগ্রেসই বাজিমাত করেছে টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছিল সেই জোট। ভোটের ফল প্রকাশের দিন ‘তৃতীয় শক্তি’-কে ‘এক্সপেনসিভ পার্কিং লট’ বলে অভিহিত করেছিলেন এক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ।
এক্ষেত্রে সম্ভাবনার পক্ষে যারা আশাবাদী তারা বিহার বিধানসভা নির্বাচনের কথা বলতেই পারেন। কিন্তু নির্বাচনের পর থেকে দুই শরিক আরজেডি ও জেডিউ-র টানাপোড়েন কোন পর্যায়ে তা জানেন সবাই। নির্বাচনের পর লালুর দলের অস্তিত্ব থাকবে কি না তাই নিয়ে শঙ্কিত ছিলেন অনেকে। বিজেপি হারলেও জেডিইউ যে সব থেকে বড় দল হতে চলেছে তা নিয়ে সন্দেহ ছিল না কারও।
নির্বাচনের ফল বেরোতে দেখা যায়, বিজেপি পর্যুদস্ত। ওদিকে সব থেকে বড় দল হয়ে উঠেছে আরজেডি। ছেলেকে উপমুখ্যমন্ত্রী করার শর্তে নীতীশকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেন লালু। কিন্তু তার পর থেকে দুই দলের সম্পর্কের ক্রমশ অবনতি হয়েছে। লালুর দুর্নীতিবাজদের প্রীতি ক্রমশ দূরে সরিয়ে দিয়েছে স্বচ্ছ রাজনীতিক নীতীশ কুমারকে। শোনা যাচ্ছে আরও অনেক জল্পনা।
এবার আসা যাক এ রাজ্যের কথায়। অস্তিত্ব বাঁচাতে নিচু তলার যাবতীয় ক্ষোভ বিক্ষোভ উপেক্ষা করে তৃণমূলের সঙ্গে জোট করলে আরও করুণ পরিণতি হতে পারে সিপিএমের। সেক্ষেত্রে দলের অবশিষ্ট সমর্থকরা হয় বিজেপিতে চলে যেতে পারেন অথবা সরাসরি চলে যেতে পারেন তৃণমূলে।
দেশ তথা রাজ্যের ইতিহাস বলছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে কখনো স্বস্তিতে থাকেনি কেউ। তা অটল বিহারী বাজপেয়ী হোন বা এ রাজ্যের কংগ্রেস। মমতার হাত ধরার ষোলো আনা মূল্য চোকাতে হয়েছে তাদের। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কাছে মমতার গ্রহণযোগ্যতা ঠিক কতটা তা নারদ স্টিংয়ে ফাঁস করে দিয়েছেন বর্ষীয়ান অবাম নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়ই। সেক্ষেত্রে মমতার হাত ধরলে এ রাজ্যে কংগ্রেসের দশা হতে পারে সিপিএমের।