কক্সবাজারে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর হুঁশিয়ারি

কক্সবাজারে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর হুঁশিয়ারি

কক্সবাজার থেকে সারাদেশে ইয়াবা সরবরাহে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সে যেই হোক না কেন কঠোর শান্তি পেতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কক্সবাজারের বদনাম রয়েছে- এখান থেকে নাকি ইয়াবা সারা বাংলাদেশে সরবরাহ হয়। এই ইয়াবা সরবরাহ বন্ধ করতে হবে। যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদেরকে শাস্তি পেতেই হবে। তাদের কোনরকম রেহাই দেয়া হবে না।’
শেখ হাসিনা শনিবার অপরাহ্নে কক্সবাজারের শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কক্সবাজার শাখা আয়োজিত বিশাল জনসমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী এখান থেকে একযোগে ৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ৯টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
তিনি মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানিয়ে বলেন, মাদক এক একটা পরিবারকে ধ্বংস করে দেয়। এই মাদকের ছোবলে এক একটা মানুষের জীবন শেষ হয়ে যায়। এক একটা মানুষ যখন মাদক সেবন শুরু করে সে পৌরষত্ব হারায়, সে তার চিন্তা শক্তি হারায়, সে অসুস্থ হয়ে অকালে মৃত্যুবরণ করে। কোন বাবা-মা চায় না যে তার সন্তান এভাবে অকালে মৃত্যুর পথে চলে যাক। এভাবে শেষ হয়ে যাক, কাজেই এই মাদকদ্রব্য থেকে আমাদের সন্তানদের রক্ষা করার জন্য সমাজের সকল স্তরের জনগণের কাছে আমি আহবান জানাবো ।
শেখ হাসিনা এ সময় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের কঠোর অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ বাংলার মাটিতে কোনভাবে চলবে না, চলতে পারে না। এর বিরুদ্ধে সকলকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য আমি আহবান জানাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলামের নাম নিয়ে কেউ জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস সৃষ্টি করবে এটাকে আমরা বরদাশত করবো না। তাই এই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের হাত থেকে আমাদের ছেলে-মেয়েদের রক্ষা করতে হবে।
অন্যান্যের মধ্যে সমাবেশে গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, দলের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বক্তৃতা করেন।
কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা সভায় সভাপতিত্ব করেন।
জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদকের মত সামাজিক ব্যাধি থেকে উত্তোরণে দেশবাসীর সহযোগিতা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা একটা জিনিসই চাই সারাদেশের ইমাম, মুয়াজ্জিন, ওলামা-মাশায়েখ শিক্ষক সহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষ যারা আছেন এই কক্সবাজারবাসী সবাইকে আমি বলব সারাদেশে আমাদের সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের প্রেক্ষাপট স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে বাংলার মানুষের জন্য আমার বাবা জীবন দিয়েছেন, আমার মা জীবন দিয়েছেন, আমার ভাইয়েরা জীবন দিয়েছেন সেই বাংলার মানুষেরা ভালভাবে বাঁচবে, উন্নত জীবন পাবে তাঁদের ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া শিখে বড় হবে, মানুষের মত মানুষ হবে তাঁর বাবার সেই স্বপ্ন পূরণেই তিনি এবং তাঁর সরকার দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন।

প্রধানমন্ত্রী কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের সনদের মান সম্পর্কে বলেন, আমাদের ১৪ লাখ কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থী রয়েছে তাদের মূল ধারার বাইরে রেখে কখনও সমগ্র দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। অতীতে তাদের কোন কারিকুলাম না থাকায় এবং এই শিক্ষার কোন স্বীকৃতি না থাকায় প্রতিবছর বিপুল পরিমান কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত হুমকির মুখে পড়েছিল।
শেখ হাসিনা বলেন,কাজেই এই শিক্ষার্থীদের সনদের একটি স্বীকৃতি দানের জন্য কওমী মাদ্রাসার শিক্ষকদের দিয়েই একটি কমিটি করে তাদের জন্য নিজস্ব কারিকুলাম তৈরির নির্দেশ দিয়েছি, যাতে তাদের সনদের একটা স্বীকৃতি প্রদান করা যায়।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের উদ্যোগে দেশে আরবী বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার কথাও উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, আমরা তাদের এমন সুযোগ করে দিতে চাই যেন তারা লেখাপড়া শিখে দেশে-বিদেশে চাকরি বাকরি করতে পারে এবং নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী এমনকি ক্ষুদ্র জনগ্ােষ্ঠীর বেদে ও হিজড়া সম্প্রদায়ের কল্যাণে তাঁর সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের তথ্যও তুলে ধরেন।
কক্সবাজারের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “খালি হাতে আমি আসিনি, উপহারও নিয়ে এসেছি।”
কক্সবাজার বিমানবন্দরটি আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে আরও পরিকল্পনার কথা জানান সরকার প্রধান। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন এবং চার লেইনের মহাসড়ক করার আশ্বাস দেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন নগরী হিসেবে কক্সবাজার গড়ে উঠবে।
মহেশখালীতে চারটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে বলে জানান শেখ হাসিনা।
এই দ্বীপটিকে সম্প্রতি ডিজিটাল মহেশখালী দ্বীপ হিসেবে ঘোষণার প্রসঙ্গ উত্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর স্থাপনের পরিকল্পনার কথাও বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই দেশের উন্নয়ন হয়। তাই জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়।
সরকার প্রধান বলেন, বিএনপির একমাত্র লক্ষ্য লুটপাট ও দুর্নীতি। জনগণের কল্যাণে তাদের কোনো পরিকল্পনা নেই। আছে শুধু লুটপাটের চিন্তা।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের জনগনের অধিকার আদায়ে আওয়ামী লীগ সরকার সবর্দা সচেষ্ট। ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছ থেকে ন্যায্য অধিকার আদায়ে কেবল আমরাই সফল হয়েছি। অথচ ইতোপূর্বে ক্ষমতায় থেকে অধিকারের কথা বলার সাহসই ছিল না জিয়াউর রহমান, এরশাদ ও খালেদা জিয়ার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবিধান লঙ্ঘন করে যারা ক্ষমতা দখল করে, তারা জনগণের কথা ভাবে না। তারা ক্ষমতা ভোগ করে আর কিছু এলিটকে লুটপাটের সুযোগ করে দেয়। ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে ঘোষণা দিয়েছিলাম, আমি শাসক না জনগণের সেবক হিসেবে বাংলাদেশ পরিচালনা করব।
শেখ হাসিনা বলেন, কক্সবাজারে সারাবিশ্ব থেকে পর্যটকরা আসেন। সে বিবেচনা করে আমরা এখানে বিমানের বোয়িং চলাচল শুরু করেছি। এখানকার বিমানবন্দর জরাজীর্ণ ছিল। ১৯৯৬ সালে সরকারে এসে এটিকে উন্নত করে যাই। এই বিমানবন্দরকে উন্নত করার জন্য আরও কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। বিমানবন্দরটি যেন আন্তর্জাতিক মানের হয়, সে জন্য রানওয়ে প্রশস্থ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, কক্সবাজারবাসী অবহেলিত ছিল আমি জানি। যখনই কোনো দুর্যোগ দেখা দিয়েছে আমরা এসেছি, আপনাদের সেবা করেছি।
তিনি আরও বলেন, ১৯৯১ সালে ঘূর্ণিঝড়ের সময় বিএনপি ক্ষমতায় ছিল। এত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বিএনপি নেত্রী জানতেন না। আমি সংসদে তোলার পর উনি বলে দিলেন, যত মরার কথা, তত মানুষ মরে নাই। আমি প্রশ্ন করেছিলাম, কত মানুষ মরলে আপনার তত মানুষ হবে? এরপর আমরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে ছুটে এসেছিলাম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসার পথে কঠিন অবস্থায় পড়তে হয়েছিল। রাস্তা ভাঙা ছিল। এরই মধ্যে এসে সমস্ত দ্বীপাঞ্চল ঘুরে ঘুরে রিলিফ ওয়ার্ক করেছি। তখন পর্যন্ত বিএনপি সরকারের কেউ আসেনি।
নৌকা মাকায় ভোট চেয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, নৌকায় ভোট দিয়ে দেশ পেয়েছেন, উন্নয়ন-অগ্রগতি পেয়েছেন। আগামী যত নির্বাচন আছে সেসব নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করে উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারাকে অব্যাহত রাখবেন, সেই প্রত্যাশাই করি।
প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপনের লক্ষ্যে কক্সবাজার সফরে আসেন। তাঁকে বহন করা ৭৩৭ বোয়িং বিমানটি কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের মধ্যদিয়ে প্রধানমন্ত্রী এখানে সম্প্রসারিত রানওয়ের উদ্বোধন করেন। পরে তিনি গাড়ি করে ইনানী গিয়ে ৮০কি.মি. দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ উদ্বোধন করেন।

বাংলাদেশ শীর্ষ খবর