ডিসিসি নির্বাচন স্থগিত : রুলের জবাব দেবে ইসি

ডিসিসি নির্বাচন স্থগিত : রুলের জবাব দেবে ইসি

ডিসিসি উত্তর ও ডিসিসি দক্ষিণের নির্বাচন কেন বন্ধ করা হবে না মর্মে আদালতের দেওয়া রুলের জবাব দেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এজন্য আদালতের সার্টিফাইড কপির জন্য অপেক্ষা করছে কমিশন। তবে আদালতের স্থগিতাদেশ দেওয়া নির্বাচন কবে অনুষ্ঠিত হবে, সে ব্যাপারে সন্দিহান ইসি।

নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ এ বিষয়ে বলেন, “আমরা আদালতের রায়ের সার্টিফাইড কপির জন্য অপেক্ষা করছি। আমরা এ কপি সংগ্রহের ব্যবস্থাও নিয়েছি। কপি হাতে পেলেই রুলের জবাব দেওয়া হবে।“

নির্বাচন কমিশনার ব্রি. জে. (অব.) জাবেদ আলী এ বিষয়ে বলেন, “আমাদের সুরক্ষিত করার বিধান সংবিধানে আছে। আইন অনুযায়ী ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে বাধ্যবাধকতা ছিল আমরা সে অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানের কাজ শুরু করেছিলাম।“

তিনি বলেন, “সংবিধানের ১২৫ (গ) ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, `যুক্তিসঙ্গত নোটিশ ও শুনানির সুযোগ না প্রদান করিয়া কোনো আদালত অর্ন্তবর্তী বা অন্য কোনো রূপের আদেশ বা নির্দেশ করিবেন না।“

তিনি আরো বলেন, “সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অনুযায়ী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে গেজেট না হওয়া পর্যন্ত আদালত কোনো ধরনের স্থগিতাদেশ দিতে পারবেন না।“

জাবেদ আলী বলেন, “আমরা সংবিধান অনুযায়ী চলি। কিন্তু সংবিধানের ব্যাখ্যা করেন আদালত। তাই আদালত কোন বিবেচনা থেকে এটি করেছেন, তা আদালতই বলতে পারবেন।“

তিনি বলেন, “সংবিধানকেই সুরক্ষা মনে করে ইসি।“

নির্বাচন কমিশনার শাহনেওয়াজ বলেন, “আদালতের রায়ের সার্টিফাইড কপি হাতে পাওয়ার পর কমিশন-বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে নির্বাচন স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে ইসি আপিল করবে কিনা।“

তবে অন্য একজন কমিশনার নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, “আপিলের প্রশ্ন আসছে কেন এটা আমি বুঝতে পারছি না। আদালত একটা নির্দেশনা দিয়েছেন, আমরা তা মানবো।“

তিনি বলেন, “ওয়ার্ড পুনর্বিন্যাসের কাজ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের। ইসি’র পক্ষ থেকে তিনবার তাদের চিঠি দেওয়া হলেও কেন তারা তা করেনি এবং ইসির চিঠির জবাব দেয়নি, তা তারাই বলতে পারবে।“

অন্য এক নির্বাচন কমিশনার নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, “স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবই নির্বাচন বন্ধে নাটের গুরু। তার কথাবার্তা মোটেও সরকারি কর্মকর্তাসুলভ নয়। তিনি কথা বলেন রাজনৈতিক নেতাদের মতো। নির্বাচন বন্ধের দায়ে এবং রাষ্ট্রীয় কাজে অবহেলার জন্য তার বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।“

তিনি আরো বলেন, “নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির দায়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবের বিরুদ্ধে ইসিরও সাংবিধানিক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।“

নির্বাচন কবে হবে এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার জাবেদ আলী বলেন, “আদালতের রায়ের যে অ্যাডভোকেট সার্টিফাইড কপি আমরা হাতে পেয়েছি তা দিয়ে আপিল করা যায় না। তবে তাতে লেখা আছে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় আগে ওয়ার্ডের সীমানা নির্ধারণ করবে। এরপর নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা হালনাগাদ করবে। এর তিন মাস পর নির্বাচন।“

তিনি বলেন, “ওয়ার্ড পুনর্বিন্যাস একটি জটিল কাজ। এতে প্রথমে ওয়ার্ড ভাগ হবে। এতে আপত্তি আসতে পারে। সেই আপত্তি নিষ্পত্তির পরই ইসি ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে পারবে।“

নির্বাচন কমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, “ডিসিসির ৯২টি ওয়ার্ড পুনর্বিন্যাসের পর আরো কম পক্ষে ৯২টি ওয়ার্ড তৈরি হবে। আর এ নিয়ে কমপক্ষে ২০০টি মামলা দায়ের হবে। আর নিয়মিত আদালতে এসব মামলার নিষ্পত্তি হতে ১০ বছরও লেগে যেতে পারে।“

তিনি বলেন, “সীমানা বিরোধের মামলা দায়ের হলে তা বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে নিষ্পত্তি না করলে ডিসিসির নির্বাচন কবে হবে তা বলা কঠিন।“

উল্লেখ্য, সদ্য বিদায়ী সিইসি ড. শামসুল হুদার কমিশন ডিসিসি নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ওয়ার্ডের সীমানা নির্ধারণের জন্য  স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে তিন দফা চিঠি দেয়। কিন্তু স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে ইসিকে সহযোগিতা করেনি। এমনকি চিঠির জবাব দেওয়ারও প্রয়োজন মনে করেনি। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন অনুযায়ী, সরকার প্রতি আদমশুমারি শেষে জনসংখ্যার ভিত্তিতে সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ডের সীমানা বিন্যাস করবে।

কিন্তু ঢাকা সিটি করপোরেশনকে সর্বশেষ ৯০ ওয়ার্ডে ভাগ করে সীমানা বিন্যাস হয়েছিল ১৯৯৩ সালে। ১৯৯৮ সালে নতুন করে সীমানা বিন্যাস করে পুননির্ধারণ করে ওয়ার্ডের সংখ্যা ১০০ তে উন্নীত করা হলেও একাধিক মামলার কারণে তা বাতিল হয়ে যায়।

যে কারণে পুরনো সীমানায় ২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল ডিসিসি নির্বাচন হয়। অবিভক্ত ডিসিসির মেয়াদ শেষ হয় ২০০৭ সালের ১৪ মে।

বাংলাদেশ