প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে দেশবাসীকে সন্ত্রাসও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আরো সোচ্চার হওয়ার আহবান জানিয়েছেন।
তিনি বুধবার অপরাহ্নে গণভবন থেকে ঢাকা বিভাগের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেয়া ভাষণে এ আহবান জানান। তিনি বলেন, যখনই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠে তখনই দেশের সুনাম ক্ষুন্ন হয়। কাজেই প্রত্যেককে জঙ্গিবাদ নির্মূলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে । এতে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জল হবে।
শেখ হাসিনার জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস বিরোধী প্রচারের অংশ হিসেবে এবং বিভাগের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের পর্যালোচনায় এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইট টি ইমাম সহ সংসদ সদস্যবৃন্দ এবং আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ এ সময় গণভবন উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা বিভাগের ১৩টি জেলার ১ হাজার ইউনিয়নের প্রায় ২০ লাখ জনগণ বিভাগের ৬ হাজার ১৬৬টি পয়েন্ট থেকে সরাসরি সম্প্রচারকৃত এই ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত ছিলেন।
দেশের উন্নয়নের জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে জরুরি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্টদের সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে যে, সরকারের গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যেন দ্রুত বাস্তবায়িত হয় এবং কোন কিছুই যেন এই উন্নয়ন কাজে বাধার সৃষ্টি করতে না পারে। পাশাপাশি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আপনাদের অবস্থানকে আরো সুদৃঢ় করতে হবে। যেন আমরা বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার একটি উন্নত সমৃদ্ধ শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি। যে স্বপ্ন জাতির পিতা দেখেছিলেন।
সরকার প্রধান বলেন, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অর্থাৎ আমরা কোনভাবেই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে বরদাশত করব না। একে দমন করে মানুষের জীবনের শান্তি ও নিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করবো। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েরা মেধাবী, ভাল-শিক্ষিত অবস্থাপন্ন ঘরের ছেলে-পেলেরা বিপথে চলে যাচ্ছে। তারা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ছে। তাদের মেধা ও মনন, কাজ করার শক্তি ও ক্ষমতা যেটা দেশের কাজে লাগতে পারত, সেটা ধ্বংসাত্মক কাজে কেন যাবে?
তিনি বলেন, আরেকটি বিষয় হচ্ছে- ইসলাম শান্তির ধর্ম, ইসলাম কখনও সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে না। ইসলামে কখনও নিরীহ মানুষ হত্যাকে সমর্থন করা হয়নি। এটা ইসলামে সবচেয়ে গুণাহর কাজ। কারো কারো এমন মন মানসিকতা এমন যে, তারা নাকি মানুষ হত্যা করতে পারলে জান্নাতে চলে যাবে। কিন্তু, প্রকৃতপক্ষে যারা নিরীহ মানুষ হত্যা করে তারা জান্নাতে নয়, জাহান্নামে যায়। এটা আমাদের নবী করিম (সা:) ও বলে গেছেন এবং আমাদের ইসলামেও আছে।
তিনি বলেন, ইসলাম ধর্মে মানুষের জীবনটাকে মূল্যায়ন করে একটি সুন্দর জীবন যাপনের নির্দেশনা দিয়েছে। সেখানে অন্যায়, অসত্য এবং মানুষ হত্যার কোন স্থান নেই।
শেখ হাসিনা বলেন, কতিপয় অসাধু লোকের ইসলাম বিরোধী ও মানবতাবিরোধী কর্মকান্ডের কারণেই আজকে আমাদের পবিত্র ধর্ম মানুষের কাছে হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছে। অন্য ধর্মাবলম্বীরা এই শান্তির ধর্মের নামে বদনাম করার সুযোগ পাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী গোয়েন্দা সংস্থা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, সকলে মিলে নানা ধরনের সন্ত্রাসী ঘটনার প্রস্তুতি গ্রহণকালে জঙ্গি সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়েছে। এতে করেও আমরা অনেক বড় বড় বিপদ থেকে দেশের মানুষের জনমাল রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছি।
সরকার প্রধান বলেন, কারণ পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশও যেটা পারে নাই আমরা সেটাই করে যাচ্ছি। কিন্তু, আমাদের এখানেই থেমে থাকলে চলবে না, আমাদেরকে আরো বেশি সক্রিয় হতে হবে। সেজন্য আমি এটুকু বলব- আমাদের মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন বা যারা আমাদের ধর্মীয় শিক্ষা দেন তাঁরা এবং ওলামা মাশায়েখসহ সকলকে আমি আহবান জানাব, ইসলাম শান্তি ধর্ম, পবিত্র ধর্ম। ইসলামে মানুষ হত্যা কিংবা জঙ্গিবাদের কোন স্থান নেই এই বিষয়টা সকলের সামনে তুলে ধরবেন।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় প্রত্যেক শিক্ষক, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকলের কাছে, অভিভাবক এবং জনপ্রতিনিধিদের কাছে নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং এলাকায় ছাত্র বা ছেলে-মেয়েরা কোথায় যাচ্ছে, কি করছে, কার সঙ্গে মিশছে এ বিষয়ে লক্ষ্য রাখার আহবান জানান। বিদ্যালয় বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন ছাত্র দীর্ঘ অনুপস্থিত থাকলে তাঁর অনুপস্থিতির কারণ খোঁজার জন্যও প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট মহলকে নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকল শ্রেণী পেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে সশস্ত্র লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের স্বাধীনতা এসেছে। কাজেই আমি চাই, এখানে সকল ধর্মের মানুষ তাদের নিজ নিজ ধর্ম কর্ম শান্তিতে পালন করবেন এবং সকল ধর্মাবলম্বীরা একটি ভ্রাতৃত্বপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করবেন। এটাইতো আমাদের ইসলামের মূল শিক্ষা এবং নির্দেশ। সেভাবেই সকলকে নিয়ে একটি সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ থেকে দেশকে আমরা গড়ে তুলবো।
শেখ হাসিনা বলেন, আজকে যত উন্নয়নের কাজ আমরা করে যাচ্ছি সেই উন্নয়নের কাজকে ত্বরান্বিত করার জন্য একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দরকার। দেশের মানুষ যেন দ’ুবেলা পেট ভরে ভাত খেতে পায় সে ব্যবস্থা আমরা করতে চাই। গৃহহারা মানুষকে ঘর দিয়ে একটা ঠিকানা দিয়ে যেতে চাই। যেন তারা ভালভাবে বাঁচতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ছেলে- মেয়েরা লেখাপড়া শিখে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হবে এবং দেশ ও জাতি এগিয়ে যাবে, এটাই আমাদের লক্ষ্য।
দরিদ্র পরিবারের ছেলে-মেয়েরা মেধাবী হলে যাতে তাদের শিক্ষাটা চালিয়ে যেতে পারে সরকার সে বিষয়েও পদক্ষেপ নিচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এ সময় তাঁর সরকারের প্রদত্ত বৃত্তি, উপবৃত্তির টাকা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সন্তানের মায়ের কাছে পৌঁছে দেয়ার সরকারের উদ্যোগও তুলে ধরেন।