ঠাকুরগাঁওয়ে শিশু তুষার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী সাজু কোথায়?

ঠাকুরগাঁওয়ে শিশু তুষার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী সাজু কোথায়?

গত ২৮ এপ্রিল শুক্রবার সকালে ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার মুনিষগাঁও গ্রাম থেকে আব্দুল কাফি তুষার (৩) নামে এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ তুষার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে এই পর্যন্ত ৯ জনকে আটক করেছে।

ইতোমধ্যে তুষারের মামা সেতু আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তুষার হত্যার পুরো বিষয়টি উঠে আসে। কিন্তু শিশু তুষার হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী আবু সুফিয়ান সাজু।

সেই সাজু এখনো পুলিশের ধোয়া ছোয়ার বাইরে। সাজুকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশ নানা রকম প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। এছাড়া নৃশংসভাবে হত্যাকারী আবু সুফিয়ান সাজুকে দেখা মাত্রই আইন শৃঙ্খলবাহিনীর কাছে তুলে দেয়ার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও অনেকে দাবি জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার মুনিষগাঁও গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে আবু সুফিয়ান সাজু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ইসিজি টেকনিশিয়ান পদে কর্মরত ছিলেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক সহকর্মী ঠাকুরগাঁও শহরের কালিবাড়ি এলাকার আজহার আলীর মেয়ে আসমা খাতুনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার।

কিছু দিন যাবৎ আসমা সাজুকে বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করে। কিন্তু এর আগে বিভিন্ন সময়ে মানুষের কাছে টাকা নিয়ে দেনায় পড়ে যায় সাজু। তাই টাকার কারণে বিয়ে করতে দেরি করছিল সে। তাই মোটা অংকের টাকার জন্য সাজু পরিকল্পনা শুরু করেন। সেই মোতাবেক প্রতিবেশী মাসুদ রানার ছেলে আব্দুল কাফি তুষারকে (৩) অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবির চিন্তা করেন তিনি।

কিন্তু সাজুর পক্ষে একা এই অপহরণ করা সম্ভব হবে না বলে পারিবারিক কলহের জেরকে কাজে লাগিয়ে ও টাকার লোভ দেখিয়ে তুষারের মামা সেতু ও চাচাতো ভাই শান্তকে ম্যানেজ করে সাজু।

সাজুর পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৬ এপ্রিল মাসুদ রানার ছেলে তুষারকে অপহরণ করা হয়। সেই অপহরণের বিষয়টি সাজুর বাবা সিরাজুল ইসলাম টের পেয়ে যান। এ সময় সিরাজুল তুষারকে জিনে নিয়ে গেছে বলে মিথ্যা অপপ্রচার চালায়। দুদিনের মধ্যে তুষার বাড়িতে ফেরত আসবে বলেও তুষারের বাবাকে জানায় সিরাজুল।
অপহরণের আগে সেতু তার মায়ের মোবাইল চুরি করে। অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবি করেন এই মুঠোফোন দিয়ে ফোন করে।

অপহরণের দিন সকালে সিরাজুল ইসলামের বাড়িতে গিয়েছিল তুষার। ওই বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর তুষারকে প্রতিবেশী আব্দুল মজিদের ছেলে শান্তর (১৫) কোলে দেখা যায়। সেদিনই তুষারকে অপহরণ করা হয়। নিখোঁজের ঘণ্টা ছয়েক পর ওই চুরি হওয়া মুঠোফোন দিয়ে তুষারের বাবার কাছে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন সাজু। পরে তুষারের বাবা মাসুদ রানা রানীংশকৈল থানায় অপহরণ বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

বিষয়টি টের পেয়ে অপহৃতরা শিশু তুষারকে চেতনানাশক ওষুধ দিয়ে একটি বস্তায় ভরে হত্যার উদ্দেশ্যে অন্যস্থানে নিয়ে যায়। পরে একটি ঘরে সাজু, সেতু, শান্ত ও রিপন মিলে গলা ও হাতের রগ কেটে হত্যা করে শিশু তুষারকে।

তুষারের বাবা মাসুদ রানা জানান, টাকার কারণে আমার ছেলেকে এভাবে হত্যা করবে ভাবতেই অবাক হচ্ছি। আমি দ্রুত সাজুকে গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।

ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল করিম জানান, আমরা শিশু তুষার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী আবু সুফিয়ান সাজুকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত রেখেছি। নানা রকম প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে তাকে গ্রেফতারের জন্য। এছাড়া সাজুকে কেউ কোথাও দেখতে পেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবগত করার আহ্বান জানান তিনি।

জেলা সংবাদ