‘২০২১ সালে দারিদ্র্যের হার হবে ১৩.৫ শতাংশ’

‘২০২১ সালে দারিদ্র্যের হার হবে ১৩.৫ শতাংশ’

দেশে দারিদ্র্যের হার আগামী নয় বছরের মধ্যে ১৩ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ঘোষণা করেছে সরকার।

বাংলাদেশ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা রূপরেখায় (২০১০-২০২১) এ ঘোষণার পাশাপাশি আগামী তিন বছরে (২০১৫ সাল) এ হার ২২ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসবে বলে ধরা হয়েছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ‘পারস্পেকটিভ প্ল্যান অব বাংলাদেশ (২০১০-২১): মেকিং ভিশন ২০২১ এ রিয়েলিটি’ শিরোনামের এ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা জমা দেওয়া হয় মঙ্গলবার।

পরিকল্পনার সার সংক্ষেপে বলা হয়, “উল্লেখযোগ্য অনেক অগ্রগতি সত্ত্বেও বাংলাদেশ চার কোটি ৭০ লাখ দারিদ্র সীমার নিচের লোকসংখ্যাসহ এখনো দরিদ্র দেশ। দারিদ্র্যের হার ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ।

“সমন্বিত প্রচেষ্টায় ২০১৫ সালে দারিদ্যের হার নেমে আসবে ২২ দশমিক ৫ এবং ২০২১ সালে ১৩ দশমিক ৫ শতাংশে।”

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১০ সালের হিসাবে দেশে বর্তমানে দারিদ্র্যের হার ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ।

উচ্চতর প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে উৎপাদন ও শিল্পখাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে- দারিদ্র্য নিরসনে প্রধান কৌশল বলে পরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়া অন্য কৌশলগুলো হলো- দরিদ্র্যদের উৎপাদন উপকরণে খাসজমি, সার, সেচ, বিদ্যুতে মালিকানা দেওয়া, সব ক্ষেত্রে উৎপাদনের হার বৃদ্ধি, পশ্চাদপদ অঞ্চলগুলোয় অবকাঠামো সৃষ্টি, সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও এর বলয় বৃদ্ধি, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার ব্যাপক প্রসার এবং ক্ষুদ্র ঋণের বিস্তার।

২০০৯ সালের এপ্রিলে ষষ্ঠ ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাকে ভিত্তি হিসাবে ধরে দীর্ঘমেয়াদি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০১০-২০২১ প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ষষ্ঠ ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে।

২০২১ সালে স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তীর আগে কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনের মাধ্যমে এই পরিকল্পিত ও সমন্বিত উন্নয়ন অর্জনের তাগিদ থেকেই সরকার দীর্ঘমেয়াদি এই প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করছে।

এটা হবে বর্তমান সরকারের নেওয়া প্রথম প্রেক্ষিত পরিকল্পনা, যা রূপরেখা হিসাবেই প্রণীত হবে।

পরিকল্পনামন্ত্রী এ কে খন্দকারের নেতৃত্বে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভুইঞা, অর্থসচিব মোহাম্মদ তারেক, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব ইকবাল মাহমুদ, পরিকল্পনা সচিব ভূইয়া সফিকুল ইসলামসহ ১১ সদস্যের একটি বিশেষ প্রতিনিধি দল প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপন করেন।

এই প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় জনগণের অংশিদারিত্ব ভিত্তিক প্রবৃদ্ধি ও দারিদ্র্য হ্রাসকরণ, কার্যকরী সরকার ব্যবস্থা ও উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নিশ্চিতকরণ, বিশ্বায়ন ও আঞ্চলিক সহযোগিতার ব্যাপারে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ, উন্নয়ন ও নাগরিক কল্যাণ বৃদ্ধির জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা অর্জন, সুদৃঢ় অবকাঠামো নির্মাণসহ নগর সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলো উপশম এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নিত্য-নতুন উদ্ভাবন প্রক্রিয়াকে বেগবান করার কথা বলা হয়েছে।

২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করতে ২০১৫ সালের মধ্যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (জিডিপি প্রবৃদ্ধি) ৮ শতাংশ এবং ২০২১ সালের মধ্যে ১০ শতাংশ উন্নীত করার কথা বলা হয়েছে পরিকল্পনায়; বর্তমানে এ হার সাড়ে ৬ শতাংশ।

২০২১ সালের মধ্যে মাথাপিছু আয় ৬০০ ডলার থেকে বাড়িয়ে দু’হাজার ডলারে উন্নীত করার কথাও রয়েছে প্রেক্ষিত পরিকল্পনায়।

২০১৫ সাল নাগাদ জিডিপি’র ৩২ দশমিক ১ শতাংশ সঞ্চয় ও ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ বিনিয়োগ এবং ২০২১ সালে তা যথাক্রমে ৩৯ দশমিক ১ ও ৩৮ শতাংশ অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

পরিকল্পনায় ২০২১ সাল নাগাদ মুদ্রা ও রাজস্ব নীতি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বার্ষিক মূল্যস্ফীতির হার একটি সহনীয় পর্যায়ে অর্থ্যাৎ ৫ দশমিক ২ শতাংশে স্থির রাখার কথা বলা হয়েছে।

বেকারত্বের হার ২০১৫ সালে ২০ শতাংশে এবং ২০২১ সালে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এ প্রেক্ষিত পরিকল্পনায়।

অর্থ বাণিজ্য